ajkerit

গাজীপুর জেলার পরিচিতি - INTRODUCTION OF GAZIPUR DISTRICT

গাজীপুর জেলার পরিচিতি 

গাজীপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। অবস্থানগত কারণে এটি বাংলাদেশের একটি বিশেষ শ্রেণীভুক্ত জেলা।ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সংশ্লেষে কালোত্তীর্ণ মহিমায় আর বর্ণিল দীপ্তিতে ভাস্বর অপার সম্ভাবনায় ভরপুর গাজীপুর জেলা। মোগল-ব্রিটিশ-পাকিস্তান আমলে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে গাজীপুরের রয়েছে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা। 

INTRODUCTION OF GAZIPUR DISTRICT


১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা পর্বে গাজীপুরেই সংঘটিত হয় প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ। গাজীপুরে রয়েছে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তরসহ ১৯টি কেপি আই, ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়, ২টি ক্যান্টনমেন্ট ও দেশের একমাত্র হাইটেক পার্কসহ বহু সংখ্যক সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ক্ষুদ্র/মাঝারী ও ভারী শিল্পকারখানা সহ দেশের তৈরী পোশাক শিল্পের বিরাট অংশ। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সিটি কর্পোরেশন, যার আয়তন ৩৩০ বর্গ কিঃমিঃ। 

গাজীপুরের মধ্যেই দেশের ৭৫ শতাংশ গার্মেন্টস শিল্প অবস্থিত। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্বীকৃত একমাত্র জাতীয় উদ্যান ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ও এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় সাফারি পার্ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক গাজীপুরে অবস্থিত। বাংলাদেশের একমাত্র টাকশাল বা টাকা তৈরির কারখানা, যেখানে দেশের সকল টাকা তৈরি করা হয় তা গাজীপুরে অবস্থিত। 

বাংলাদেশের একমাত্র অস্ত্র তৈরির কারখানাও গাজীপুরে অবস্থিত। বাংলাদেশের ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগারের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার গাজীপুরে অবস্থিত। গাজীপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ তুলা গবেষণা ইন্সটিটিউট অবস্থিত। এছাড়াও বাংলাদেশের একমাত্র সমরাস্ত্র কারখানা গাজীপুর জেলায় অবস্থিত।

অবস্থান ও আয়তন

গাজীপুর জেলার উত্তরে ময়মনসিংহ জেলা ও কিশোরগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে ঢাকা জেলা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা, পূর্বে কিশোরগঞ্জ জেলা ও নরসিংদী জেলা, পশ্চিমে ঢাকা জেলা ও টাঙ্গাইল জেলা।[

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

গাজীপুর জেলা ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটির একটি সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন রয়েছে এবং নিম্নলিখিত উপজেলাগুলিতে বিভক্ত:

  • গাজীপুর সদর উপজেলা
  • কালিয়াকৈর উপজেলা
  • শ্রীপুর উপজেলা
  • কাপাসিয়া উপজেলা
  • কালীগঞ্জ উপজেলা

গাজীপুর জেলার ইতিহাস

গাজীপুর সদর, শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ ও কাপাসিয়া এই ৫টি উপজেলা নিয়ে ঢাকা জেলা থেকে বিভক্ত হয়ে ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ গাজীপুর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।  ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে মহম্মদ বিন তুঘলকের শাসনকালে গাজী নামে এক কুস্তিগীর এখানে থাকতো আর তার নাম থেকেই সম্ভবত এই অঞ্চলের নাম হয়েছে গাজীপুর। আবার এই মতের বিরোধিতা করে অনেকে বলেন যে সম্রাট আকবরের সেনাপতি ঈশা খাঁর ছেলে ফজল গাজীর নামে এই জনপদের নামকরণ করা হয়েছে।

গাজীপুর জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 

গাজীপুরে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রয়েছে বহুসংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :-


বিশ্ববিদ্যালয়

  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
  • উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
  • ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়
  • ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি

কলেজ ও উচ্চবিদ্যালয়-

  • ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ
  • টংগী সরকারি কলেজ
  • গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ
  • রাণী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়

গাজীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান

  • ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান
  • বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক
  • ভাওয়াল রাজবাড়ী, গাজীপুর সিটি
  • নুহাশ পল্লী, গাজীপুর সদর
  • কাশিমপুর জমিদার বাড়ি, গাজীপুর সদর
  • আনসার একাডেমী, কালিয়াকৈর
  • শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ী, কালিয়াকৈর
  • বলিয়াদী জমিদার বাড়ী, কালিয়াকৈর

গাজীপুর জেলার  উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

  • মেঘনাদ সাহা - তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
  • মোঃ সামসুল হক - স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি[৫]
  • ফকির শাহাবুদ্দীন - বাংলাদেশের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল।
  • তাজউদ্দিন আহমেদ - বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
  • ব্রিগেডিয়ার আ স ম হান্নান শাহ - রাজনীতিবিদ, সাবেক পাটমন্ত্রী।
  • আহসানউল্লাহ মাস্টার - রাজনীতিবিদ; সাবেক সংসদ সদস্য।
  • এম জাহিদ হাসান - পদার্থবিদ, ভাইল ফার্মিয়ন কণার আবিষ্কারক। ল ফার্মিয়ন কণার আবিষ্কারক।
  • আবু জাফর শামসুদ্দীন - একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
  • আর্চবিশপ পৌলিনুস ডি কস্তা - বাংলাদেশের প্রাক্তন সর্বোচ্চ ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতা।
  • আ.ক.ম মোজাম্মেল হক - এমপি (গাজীপুর ১) এবং মাননীয় মন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
  • জাহিদ আহসান রাসেল - এমপি গাজীপুর আসন নং ২ ও মাননীয় প্রতিমন্ত্রী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
  • আনিছুর রহমান মিঞা - অবসরপ্রাপ্ত সচিব; চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
  • মেহের আফরোজ চুমকি - রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য।
  • সিমিন হোসেন রিমি - সাংসদ গাজীপুর আসন নং ৪।
  • রহমত আলী - রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
  • ইকবাল হোসেন সবুজ - সাংসদ গাজীপুর আসন নং ৩।
  • মারাজ হোসেন অপি - খেলোয়াড়।
  • জায়েদা খাতুন - মাননীয় মেয়র (নগর মাতা), গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন।
  • চৌধুরী তানবীর আহমেদ সিদ্দিকী - বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ।
  • মোহাম্মদ ওবাইদ উল্লাহ - রাজনীতিবিদ; সাবেক সংসদ সদস্য।
  • সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন - বাংলাদেশী মহিলা রাজনীতিবিদের মধ্যে অন্যতম।
  • রুমানা আলী - রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্য মহিলা আসন।
  • ফকির আবদুল মান্নান শাহ - রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী।
  • মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ (গাজীপুরের রাজনীতিবিদ) - বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্য (সাবেক)।
  • এ কে এম ফজলুল হক মিলন - রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য।
  • মোহাম্মদ সানাউল্লাহ (চিকিৎসক) - সাবেক সংসদ সদস্য।
  • এম. এ. মান্নান (গাজীপুরের রাজনীতিবিদ) - রাজনীতিবিদ এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও সাবেক মন্ত্রী।
  • মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন - আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পরিচালনাকারী।
  • জাহাঙ্গীর আলম (রাজনীতিবিদ) - সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন।
  • হাসান উদ্দিন সরকার - সাবেক সাংসদ, গাজীপুর আসন নং ২।
  • তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ - সাবেক প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
  • মোঃ আতাবুল্লাহ - বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক

এক নজরে গাজীপুর জেলা

এক নজরে গাজীপুর জেলা :

আয়তন

১৭৭০.৫৪ বর্গ কিঃ মিঃ

 

ক. নদ-নদী- ১৭.৫৩ বর্গ কিঃ মিঃ

 

খ.বনভূমি- ২৭৩.৪২ বর্গ কিঃ মিঃ

লোকসংখ্যা

২১,৪৩,৪১১জন (২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী )

 

ক.পুরুষ- ১১,১৮,১৭১ জন

 

খ.মহিলা- ১০,২৫,২৪০ জন

জনসংখ্যার ঘনত্ব

জনসংখ্যার ঘনত্ব ১১২৪ জন প্রতি বঃ কিঃ মিঃ

শিক্ষার হার

৫৬.৪০%

অর্থকরী ফসল

ধান, পাট, আখ, তুলা, বাঁশ, কাঁঠাল, কলা, পেয়ারা, লিচু ও পেঁপেঁ

নদ-নদী

১০টি- লবলং, ব্রহ্মপুত্র , পারুলী, সুতী, গোয়ালী, শীতলক্ষ্যা, বানার, তুরাগ, বালু ও চিলাই

জেলার সীমানা

উত্তরে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলা, পূর্বে কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা, দক্ষিণে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এবং পশ্চিমে ঢাকা ও টাংগাইল জেলা।

জেলার অবস্থান

২৩0-৫৩হতে ২৪0-২০-২৪/ /উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০0-৯থেকে ৯০0-৪২পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত ।

উপজেলা

০৫ টি, গাজীপুর সদর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর,
কালীগঞ্জ

সিটি কর্পোরেশন০১টি (গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন)

পৌরসভা

০৩টি- কালীগঞ্জ, শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর

থানার সংখ্যা

০৭ টি, জয়দেবপুর, টংগী,
কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, কালীগঞ্জ, হাইওয়ে থানা- সালনা। এছাড়া চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী, মীরেরবাজার, বোর্ডবাজার, মৌচাক, কাশিমপুর, টঙ্গী পূর্ব ও টঙ্গী পশ্চিম এ পুলিশ ফাঁড়ি আছে।

উপজেলা ভূমি অফিস

০৬টি, গাজীপুর সদর, শ্রীপুর, টংগী কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর,
কালীগঞ্জ

ইউনিয়ন

৪৪টি

ইউনিয়ন ভূমি অফিস

৩২টি

পৌর ভূমি অফিস

০৩ টি

মৌজা সংখ্যা

৮১৪

গ্রামের সংখ্যা

১,১৪৬ টি

হাট -বাজার

১৯১টি

খেয়াঘাট

আন্তঃ জেলা ৬টি , স্থানীয়ঃ ০২ টি

২০ একরের উর্ধ্বে বন্ধ জলমহাল

০৭টি

অনুর্ধ্ব২০ একর বদ্ধ জলমহাল

৭৯৭টি

উন্মুক্ত জলমহাল

০৯টি

আবাসনপ্রকল্প

০১টি

আশ্রায়ন প্রকল্প

০৬টি

আর্দশগ্রাম

২০টি


গাজীপুর জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন

গাজীপুর জেলার ০৫টি উপজেলা রয়েছে :

  • ১। গাজীপুর সদর উপজেলা
  • ২। কালিয়াকৈর উপজেলা
  • ৩। শ্রীপুর উপজেলা
  • ৪। কাপাসিয়া উপজেলা
  • ৫। কালীগঞ্জ উপজেলা

গাজীপুর জেলায় মোট ৪৩টি ইউনিয়ন রয়েছে । ইউনিয়ন এর নামের তালিকা নিম্নরুপ :

উপজেলার নাম

ইউনিয়ন এর নাম

 

গাজীপুর সদর

মির্জাপুর

বাড়ীয়া
ভাওয়াল গড়
পিড়ুজালী
 
 
 

 

 

কালিয়াকৈর

ফুলবাড়ীয়া

চাপাইর

বোয়ালী

মৌচাক

শ্রীফলতলী

সূত্রাপুর

আটাবহ

মধ্যপাড়া

ঢালজোড়া

 

শ্রীপুর

মাওনা

গাজীপুর

তেলিহাটী

বরমী

কাওরাইদ

গোসিংগা

রাজাবাড়ী

প্রহলাদপুর

 

কাপাসিয়া

সিংহশ্রী

রায়েদ

টোক

বারিষাব

ঘাগটিয়া

সনমানিয়া

কড়িহাতা

তরগাঁও

কাপাসিয়া

চাঁদপুর

দূর্গাপুর

কালীগঞ্জ

তুমুলিয়া

মোক্তারপুর

নাগরী

বক্তারপুর

জাঙ্গালিয়া

বাহাদুরশাদী

জামালপুর


মানচিত্রে গাজীপুর  জেলা



গাজীপুর জেলার নামকরণ ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

নামকরণ ও প্রতিষ্ঠা
এক সময়ের প্রাচীন জনপদ ‘ভাওয়াল’ পরগনা বর্তমানে গাজীপুর নামে পরিচিত। ভাওয়াল নামকরনের পিছনে রয়েছে সুদীর্ঘ  ঐইতিহাসিক পটভূমি।

বিভিন্ন সূত্র থেকে ধারনা করা হয় যে, প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে বঙ্গ জনপদের এ অঞ্চল মোঘল সম্রাট আশোকের শাসনাধীন ছিল।

এ ধারণার কারন জয়দেবপুরে অবস্থিত সাকাশ্বর স্তম্ভ। প্রাচীনযুগ থেকেই এ অঞ্চলের ডবাক ডাকুরাই সাকেশ্বর প্রভূতি ক্ষুদ্র জনপদ পাল, দাস, চেদী ও চন্ডালদের দ্বারা শাসিত হয়। মুসলিম শাসনামলে এই জনপদগুলো  ভাহওয়াল (ভাওয়াল) নামে সুবৃহৎ পরগনায় পরিণত হয়।
ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায় যে, খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীর দিকে রাজা যশোপাল, শিশুপাল প্রতাপ  ও মহেন্দ্ৰ ভাওয়ালের বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামন্ত রাজ স্থাপন করেন। প্রচলিত  কিংবদন্তি অনুসারে, এই ক্ষুদ্র সামন্ত রাজ্যগুলো চেদী রাজ্য নামে পরিচিত ছিল।
বর্তমান গাজীপুর জেলার শ্রীপুর, কালিয়াকৈর (আংশিক), কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ, টঙ্গীসহ ময়মনসিংহ জেলার গফরগাও ও ত্রিশাল উপজেলার অংশবিশেষ, ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার অংশবিশেষ, নারায়ণগঞ্জ  জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার উত্তরাংশ এবং টঙ্গীর পশ্চিমে হরিরামপুর ইউনিয়ন নিয়ে এই ক্ষুদ্র চেদী রাজ্যগুলো বিদ্যমান ছিল।

ভাওয়াল নাম নিয়ে নানা মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। ভাওয়াল গবেষক নুরুল ইসলাম ভাওয়ালরত্নের মতানুসারে, চন্ডাল রাজাদের পতনের পর ভাওয়াল গাজীদের অধিকারে আসে। কারও কারও মতে, ভদ্রপাল বা ভবপাল নাম থেকে ভাওয়াল নামকরণ হয়। মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় ‘ভবপাল’ নামক রাজ্যের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। মতান্তরে, ‘ভগালয়’ থেকে ভাওয়াল নামের উৎপত্তি, কারণ মহাভারতে ‘ভগালয়' নামেরও উল্লেখ রয়েছে। ব্রম্মা- পুরাণে ভদ্র’ নামের একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। গবেষক নুরুল ইসলামের মতে, আইন-ই-আকবরী গ্রন্থ থেকেই প্রথম জানা যায় যে, এ অঞ্চলের নাম ভাওয়াল।
ইতিহাসবিদদের ধারণা, দ্বাদশ শতাব্দীতে ভাওয়াল জনপদের ওপর থেকে সেন বংশীয় রাজাদের শাসন ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। পরবর্তী পর্যায়ে মুসলমানদের বঙ্গ বিজয়ের পর থেকে এখানকার বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিম শক্তির উত্থান ঘটে।

এই ধারাবাহিকতায় ভাহওয়াল (ভাওয়াল) গাজী শক্তিশালী হয়ে ওঠেন এবং একে একে তিনি এ অঞ্চলের চেদী রাজ্যগুলো দখল করে নেন।  অতঃপর নিজের নামানুসারে এই জনপদের নামকরণ করেন ভাওয়াল। তাঁর প্রকৃত নাম ভাহওয়াল গাজী, তা থেকে স্থানীয় ভাষায় তাকে বলা হয় ভাওয়াল গাজী। নবাবী আমলে ভাওয়াল পরগনার রাজস্ব আদায়ের জন্য ধীরাশ্ৰেম একটি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ধীরাশ্ৰেমকে ঘিরে সে আমলে এখানে গড়ে ওঠে এক সমৃদ্ধ জনপদ যার নিদর্শ্ন এখানে ভগ্ন দালান, দিঘি ও রাস্তাঘাট
রাহাপাড়া, তেলীনগর, হয়দ্রাবাদ, রথখোলা, ভারারুল, মেঘডুবি প্রভৃতি গ্রামে এসব নিদর্শনের কিছু কিছু এখনো অবশিষ্ট আছে।

 

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতা তাজউদ্দীন আহমদ ভাওয়ালগড় জেলা নামে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিন্যাসের একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেন। পরবর্তী পৰ্যায় অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাগণ ঢাকা সদর উত্তর মহকুমাকে ভাওয়ালগড় মহকুমা নামে জয়দেবপুরে স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু  তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের আমলে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে তখন থেকেই এ অঞ্চল ভাওয়ালগড় জেলা নামে পরিচিতি লাভ করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভাওয়ালগড়কে জেলা হিসেবে উন্নীত করার দাবি উত্থাপন করে।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ajkerit
ajkerit
ajkerit
ajkerit