আযানের দোয়া - বাংলা অর্থসহ - Azan Doya Bengali meaning
আযানের দোয়া বাংলা অর্থসহ
আপনি কি জানেন, আযানের দোয়া পড়াতে রয়েছে অনেক ফজিলত? দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ৫ বার জন্য আযান দেওয়া হয়, আমাদেরকে…
তুমি কি জানো নামাযের আযান পড়ার অনেক ফজিলত আছে? দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ৫ ওয়াক্ত আযান দেওয়া হয়, আযানের মাধ্যমে নামাজ পড়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।
যখন নামাযের আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান বাতাস থেকে পালিয়ে যায়, যাতে নামাযের আযান শুনতে না পায় এবং নামাযের আযান শেষ হলে ফিরে আসে। আবার যখন ইকামত দেওয়া হয় তখন বাতাস ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় যাতে ইকামতের আওয়াজ না হয় এবং ইকামত শেষে আবার ফিরে আসে।
যখন মুয়াজ্জিন আযান উচ্চারণ করে, তখন আমাদের অবশ্যই সাথে সাথে আযান নামায পড়তে হবে। এ হাদিসে অনেক ফজিলত ও সওয়াব রয়েছে: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! মুয়াজ্জিনদের মর্যাদা আমাদের চেয়ে বেশি হবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মুয়াজ্জিন যা বলে তাই বল। তারপর আযান শেষ হলে (আল্লাহকে) জিজ্ঞাসা করুন। (অতঃপর) আপনি যা চাইবেন তা আপনাকে দেওয়া হবে।" - (আবু দাউদ, মেশকাত)
আযানঃ
আজান বা আযান / (আরবি: أَذَان عزان) হল ইসলামিক আহবান বা মসজিদে জামাতে নামাজের আহ্বান। একজন মুয়াজ্জিন দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নামাযের আযান পড়ে।
ঐতিহ্যগতভাবে, মুসলমানদের জন্য দিনে পাঁচবার প্রার্থনা করার জন্য মিনার থেকে উচ্চস্বরে আযান দেওয়া হয়। ফরয সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে প্রবেশের জন্য এটি মুসলমানদের প্রথম আযান। দ্বিতীয় আযান, যা ইকামত নামে পরিচিত, মসজিদে উপস্থিত লোকদের নামাজ শুরুর জন্য লাইনে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায়। প্রতিটি মসজিদে নামাযের একাধিক আযানের মূল উদ্দেশ্য হল প্রত্যেকের জন্য ইসলামিক বিশ্বাসের সহজে বোধগম্য সারসংক্ষেপ প্রদান করা। শুধুমাত্র তুরস্কেই বিভিন্ন সময়ে পাঁচটি ভিন্ন শৈলীতে আজান দেওয়া হয়; সাবা, উশাক, হিকাজ, রাস্ট, সেগাহ।
ব্যুৎপত্তিঃ
আযান শব্দের আসল অর্থ হল উঠা أَذِنَ ডাকা, ডাকা। যার মূল উদ্দেশ্য জানানো। এই শব্দের আরেকটি ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল অজুন। (أُذُن), অর্থ "শুনুন।" কুরআনের মোট পাঁচটি স্থানে আজুন শব্দটি এসেছে। পরিভাষায়, শরিয়ত নির্দেশিত আরবি নামাজের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে নামাজের জোরালো আযানকে আযান বলে। আজান প্রথম হিজরী সন থেকে প্রচলিত হয়।
আযানের সময়ঃ
প্রতি দিন-রাতে বিভিন্ন সময়ে পাঁচ বার আযান দেওয়া হয়। আর আযান তখনই দেওয়া হয় যখন নামাযের সময় হয়। ১। ফজর:সবহে সাদিক উদিত হলে। সূর্য পূর্ব আকাশে উদিত হওয়ার আগ মুহূর্তে । ২। যোহর: সূর্য পশ্চিম আকাশে একটু ঢলে গেলে । ৩। আছর:সূর্যের প্রখরতা থাকতে । ৪। মাগরিব:সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে । ৫। এশা: সূর্য অস্ত যাওয়ার পর রাতের এক তৃতীয়াংশে ।
সপ্তাহে একদিন শুক্রবার একটি অতিরিক্ত আজান হয় জুমআর খুতবার পূর্বে।
আযানের ইতিহাসঃ
বিলাল ইবনে রাবাহ ইসলামের ইতিহাসে প্রথম আযান দেন। মুহাম্মদের নির্দেশে তিনিই প্রথম মদিনার মসজিদে নববীতে আযান প্রদান করেন। উল্লেখ্য মুহাম্মাদ মক্কায় আযান ও ইকামত ছাড়া নামাজ পড়েছেন।
আবৃত্তি | আরবি | প্রতিবর্ণীকরণ | অনুবাদ | বর্ণ |
---|---|---|---|---|
৪ বার* | الله أكبر | আল্লাহু আক্বার্ | আল্লাহ [সর্ব]মহান | সুন্নি এবং শিয়া |
২ বার | أشهد أن لا إله إلا الله | আশ্হাদু-আল্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ | আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত [কোনো] উপাস্য নেই | সুন্নি এবং শিয়া |
২ বার | اشهد أن محمدا رسول الله | আশ্হাদু-আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ্ | আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বার্তাবাহক | সুন্নি এবং শিয়া |
২ বার | حي على الصلاة | হাইয়া আলাস্ সালাহ্ | নামাজের জন্য এসো | সুন্নি এবং শিয়া |
২ বার | حي على الفلاح | হাইয়া আলাল্ ফালাহ্ | সাফল্যের জন্য এসো | সুন্নি এবং শিয়া |
২ বার | الصلاة خير من النوم | আস্-সালাতু খাইরুম্ মিনান্ নাউম্ | ঘুম হতে নামাজ উত্তম** (শুধু ফজরের আজানে) | সুন্নি |
২ বার | حي على خير العمل | হাইয়া আলা খাইরিল্-আমাল্ | সর্বোত্তম কাজের জন্য এসো | শিয়া |
২ বার | الله أكبر | আল্লাহু আকবার্ | আল্লাহ [সর্ব]মহান | সুন্নি এবং শিয়া |
১ বার** | لا إله إلا الله | লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ | আল্লাহ ব্যতীত [কোনো] উপাস্য নেই | সুন্নি এবং শিয়া |
ব্যতিক্রম আযানঃ
ফজরের নামাযের আযানের ক্ষেত্রে সামান্য ব্যতিক্রম রয়েছে। আর আযান শেষে দুবার ‘হায়্যা আলাল ফালাহ’ বলার পর ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম (الصلوۃ خير من النوم)’ বাক্যটি দু’বার বলতে হবে। এরপর যথারীতি ‘আল্লাহু আকবর’, ‘আল্লাহু আকবর’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে আযান শেষ হয়। উপরন্তু, মসজিদের ভিতরে, মিম্বরের কাছে এবং ইমামের সামনে নামাজের আযান দেওয়া হয়।
আযানের পর পড়বেন যে দোয়া
দোয়াঃ
আযান শেষ হওয়ার পর দুরুদ শরীফ পাঠ করে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তে হয়-
اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَانِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَانِ الَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ. اِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ
আযানের দোয়া বাংলাঃ আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ দা'ওয়াতিত্তা-ম্মাতি ওয়াসসালা-তিল ক্বা-ইমাতি আ-তি সায়্যেদানা মুহাম্মাদানিল ওয়াসী-লাতা ওয়াল ফাদ্বী-লাতা ওয়াদ দারাজাতার রাফী-'আতা ওয়াবআসহু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া'আদতাহূ ওয়ারযুক্বনা শাফা-'আতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাতি ইন্নাকা লা-তুখলিফুল মী-'আদ
আজানের দোয়ার অর্থঃ হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বানের ও স্থায়ী প্রতিষ্ঠিত নামাজের আপনিই প্রভু। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ওয়াসিলা ও সুমহান মর্যাদা দান করুন এবং তাঁকে ওই প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করুন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন আর কিয়ামতের দিন তাঁর সুপারিশ আমাদের নসিব করুন; নিশ্চয়ই আপনি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।
আজানের পর দোয়া পড়ার ফজিলত
মুয়াজ্জিনের আজান শুনে উত্তর দেওয়া এবং আজানের পর দোয়া পড়ার ফজিলত অত্যাধিক। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আজানের পর দোয়া পাঠকারীর জন্য রয়েছে ফজিলতপূর্ণ পুরস্কার।
আজানের পর দোয়া ও মুনাজাত মুলত নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরুদ ও প্রশংসা। নবিজির দরুদ পাঠ ও প্রশংসায় মিলবে পরকালের সুপারিশ। এর চেয়ে বড় পুরস্কার মুমিনের জন্য আর কী হতে পারে! হাদিসের বর্ণনায় এসব ফজিলত, দরুদ ও দোয়া ওঠে এসেছে। তাহলো-
১. হজরত জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনে এ দোয়া পড়বে-
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ্ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াছ ছালাতিল ক্বায়িমাহ, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাহ, ওয়াবাআছহু মাক্বামাম্ মাহমুদানিল্লাজি ওয়া আত্তাহ।‘
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও আসন্ন ছালাতের তুমি মালিক। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওয়াসিলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন। এবং তাঁকে সেই প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত কর। যার ওয়াদা তুমি করেছ।’
কেয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ পাওয়ার অধিকারী হবে।’ (বুখারি, মিশকাত)
২. হজরত সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজান শুনে এ দোয়া পড়বে-
উচ্চারণ : ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। রাদিতু বিল্লাহি রাব্বাও ওয়া বিমুহাম্মাদির রাসুলাও ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনা।’
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতিত কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল। আমি আল্লাহকে প্রভু হিসাবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসুল হিসেবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে খুশী হয়েছি।’
তার গুনাহসমূহ মাফ করা হবে।’ (মুসলিম ও মিশকাত)
আজান ও ইকামাতের বাক্যগুলো
প্রথমে আল্লাহু আকবার, ‘আল্লাহ মহান’ (চারবার), অতঃপর আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই’ (দুবার), তারপর আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল’ (দুবার), তারপর হাইয়া আলাস সালাহ, ‘নামাজের জন্য আসো’ (দুবার) ও হাইয়া আলাল ফালাহ, ‘কল্যাণের জন্য আসো’ (দুবার) ; পরিশেষে আল্লাহু আকবার, ‘আল্লাহ মহান’ (দুবার) ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই’ (একবার)।
ফজরের নামাজের আজানে পঞ্চম বাক্যের (হাইয়া আলাল ফালাহ) পর বলতে হয়, আস সালাতু খায়রুম মিনান নাওম, ‘ঘুম অপেক্ষা নামাজ উত্তম’ (দুবার) এবং একামতে এই স্থানে বলতে হয় কদ কমাতিস সালাহ, ‘জামাত প্রস্তুত’ (দুবার)।
আযান ও ইক্বামতের উত্তর দেওয়া সুন্নাত
মুয়াজ্জিন সাহেব যা বলেন উত্তরের সময় হুবহু তাই বলতে হবে, শুধু حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ ও حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ এর উত্তরে لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ বলতে হবে এবং ফজরের নামাজের আযানে اَلصَّلَاةُ خَيْرٌ مِّنَ النَّوْمِ এর উত্তরে صَدَقْتَ وَبَرَرْتَ বলতে হবে।
ইক্বামতের সময় قَدْقَامَتِالصَّلَاةُ এর উত্তরে اَقَامَهَااللهُوَاَدَامَهَا বলতে হবে।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url