ajkerit

বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব -১৫ Bangla Islamic Story 🌺 Alo 🌺 No- 15

বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব -১৫
বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব -১৫ 


বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব -১৫ 

ভোর ঘুমিয়ে আছে। আলো পাশেই বসে আছে। ভোরের এক হাতে রক্ত আর একহাতে সেলাইন দেয়া আছে। আলো ভোরের হাত ধরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে আলো জানে না। রাত ২টা ছুঁই ছুঁই তখন ভোরের ঘুম ভেঙ্গে যায়। হাতটা একটু নড়াতেই আলোর ঘুম ভেঙ্গে যায়।  তাঁকিয়ে দেখে ভোরের চোখ খোলা।

আলোঃঃ কিছু দিবো??

ভোরঃঃ পানি।

আলো পানি খাইয়ে দিলো ভোরকে।

আলোঃঃ আপনি কিছুই এখনো খাননি।  এই ফলটুকু এখন খাইয়ে দিচ্ছি আমি।

ভোরঃঃ না। খেতে ইচ্ছা করছে না। আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।  আর এভাবে বসে বসে ঘুমালে কোমড় ব্যথা করবে আপনার। আপনি বরং উপরে আমার পাশে শুয়ে পড়ুন আমি একটু সরে শুচ্ছি।

আলোঃঃ কোন কথা না আগে খেতে হবে আর আমি এখানে ঘুমালে আপনার সমস্যা হবে।  এই বেডটা যথেষ্ট বড় না। এটা একজন রোগীর জন্য।

ভোরঃঃ যথেষ্ট বড়।  এই দেখুন। ((ভোর একটু সরে গিয়ে))

আলোঃঃ এই কি করছেন? আপনার দুইহাতে সেলাইন আর ব্লাড ভুলে যাচ্ছেন কেন? আসুন এদিকে সরে আসুন।

ভোরঃঃ আচ্ছা আমার পাশে তো একটু বসা যায় নাকি?

আলোঃঃ মাথা ফাটিয়ে কি স্মৃতি লোপ পেয়েছে? আমাকে বলছেন আপনার কাছে শুতে;বসতে??

ভোরঃঃ ফালতু।

আলোঃঃ ওকে। নিন হা করুন আর এই যে আমি বসলাম।

ভোরঃঃ না। আমি খাবো না।

আলোঃঃ চুপপপপ। হা করতে বলছি।  রাত ২ টা বাজে ঘুমাতে হবে।  

আলো জোর করেই খাওয়ালো।   তারপর পাশে বসে রইল। ভোর ঘুমিয়ে পড়েছে আবার। আলো ভোরের দিকে তাঁকিয়ে থাকতে থাকতে কান্না করে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ভোরের বুকের উপর ঘুমিয়ে পড়েছে আলো নিজেও জানে না। 

ফজরের আজান কানে আসতেই আলোর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তাঁকিয়ে দেখে ভোরের বুকে ও গুটিসুটি দিয়ে আছে।  সাথে সাথে উঠে গেল। ভালোভাবে দেখছে ভোরের কোন ক্ষতি হলো কি না। না যেভাবে ছিলো রাতে সেভাবেই আছে। উঠে গিয়ে অজু করে নামাজ পড়লো একটা পরিষ্কার টাওয়াল বিছিয়ে। তারপর ভোরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ফুঁ দিয়ে দিলো। পাশে বসে দোয়া দুরুদ পড়ছে আলো। এরমধ্যে শায়লা চৌধুরী কল দিলো। শায়লা চৌধুরীর সাথে কথা বলে ফোন রাখল।  তারপর ভোরের পাশে বসে ভোরের হাতটা কোলে নিয়ে বসে রইল।

সকাল ৮ টা। ডক্টর এলো। ভোর এখনো ঘুম। ভোটের সেলাইন আর ব্লাডের লাইন গুলো খুলে দিলো। চেকআপ করলো। পায়ের ব্যান্ডেজ ১সপ্তাহ পর পর চেন্জ করতে হবে তাই বাড়িতে ডক্টর যেন যায় বলে দিলো আলো। ডক্টর চলে গেলো।

ভোরের ঘুম ভেঙ্গেছে। এখন একটু ভালো লাগছে ভোরের। হাত দুটো ফ্রী হওয়াতে। আলো ভোরের হাত মুখ টাওয়াল দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে দিয়ে নাস্তা খাওয়ালো। 

১০টা বেজে গিয়েছে ভোরকে এখন বাড়ি নিয়ে যাবে। ৫/৬জন ওয়ার্ড বয় এলো।  ওরা ভোরকে সাবধানে ধরে গাড়িতে বসালো। আলো হসপিটালের সমস্ত বিল পে করে ভোরের পাশে বসলো।

আলো পাশে বসায় ভোর আস্তে করে মাথাটা আলোর ঘাড়ে রাখল। আলোও মাথাটা একহাত দিয়ে ধরে বসলো।

ঘণ্টা খানিক পর ওরা বাসায় এলো। এতো সময় ভোর আলোর ঘাড়ে মাথা রেখে চোখ বুঝেই ছিলো। গার্ডরা এসে ভোরকে রুমে নিয়ে গেলো।

শায়লা চৌধুরী ছেলে এভাবে বাসায় ঢুকলো এই দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।  আলোর বুকটা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু এই অবস্থায় নিজেকে শক্ত রাখতে হবে আলোর। তাই শায়লা বেগমকে সামলে ভোরের কাছে গেলো। গার্ডরা বের হয়ে গেলো। 

ভোরের জন্য জুষ আর হাল্কা খাবার নিয়ে এলো শায়লা চৌধুরী। আলো বালতিতে পানি আর টাওয়াল নিয়ে এলো ভোরকে চেন্জ করিয়ে দিবে। শায়লা চৌধুরী ভোরের কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলো।

আলো ভোরকে সাবধানে বসিয়ে তারপর ভোরের টি-শার্ট খুলে সমস্ত শরীর মুছে দিলো। কাপড় চেন্জ করিয়ে জোর করে জুষ আর স্যুপ খাইয়ে আস্তে করে শোয়ালো।  ভোর চোখ বুঝে ঘুমিয়ে গেলো আর আলোও ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে ভোরের জন্য রান্না করতে গেলো। 

শায়লা চৌধুরী... কাজের মেয়েটাও সাহায্য করছে আলোকে। রান্না শেষ হলো আর যোহরের আজানও দিলো। আলো খাবার নিয়ে রুমে গেলো। ভোর এখনো ঘুমিয়ে আছে। ভোরকে ১টা থেকে দেড়টার ভিতর খাওয়াতে হবে। আলো খাবারটা রেখে ভোরের পাশে গিয়ে বসলো...

আলোঃঃ স্যার স্যার...((আস্তে করে))

ভোরঃঃ হুম।

আলোঃঃ উঠুন আপনার লাঞ্চ এর সময় হয়েছে।

ভোরঃঃ একটু আগেই তো খেলাম। আমার পেট ভরা।

আলোঃঃ ২ঘন্টা আগে খেয়েছেন।  উঠুন এখন থেকে আপনাকে অনেক খেতে হবে।

ভোরঃঃ খাবো না।  আপনি যান তো।  অসুস্থ তাও জ্বালান আমাকে।

আলোঃঃ হ্যাঁ জ্বালাই কারন আমার আর কেউ নাই জ্বালানোর মতো তাই। উঠুন উঠুন।

ভোর বাধ্য হয়ে উঠলো আলোর সহযোগীতায়।  এরপর আলো খাইয়ে দিলো তারপর মেডিসিন দিলো। ভোরকে শোয়াতে যাবে...

ভোরঃঃ থাকি না একটু বসে। এতো শুয়ে থাকতে ভালো লাগে না।

আলোঃঃ আচ্ছা।

ভোরঃঃ আপনি কই যাচ্ছেন?

আলোঃঃ নামাজ পড়ব তাই অজু করতে।

ভোরঃঃ ওহ।  হুম।

আলো অজু করে এসে নামাজ পড়লো আর ভোর দেখছে।  আলো নামাজ শেষে ভোরের কাছে গিয়ে ভোরের পা থেকে মাথা অবধি ফুঁ দিয়ে দিলো ববরাবরের মতো। এটা দেখে ভোর বলল....

ভোরঃঃ  এভাবে ফুঁ দিলেন কেন??

আলোঃঃ  ডক্টর;মেডিসিনের থেকে আল্লাহর  কালামে জোর বেশি।  আপনি যেন তাড়াতাড়ি  সুস্থ হয়ে যান তাই ফুঁ দিলাম। 

ভোরঃঃ ওহ। আপনি খেয়েছেন??

আলোঃঃ না। ইচ্ছা করছে না।

ভোরঃঃ আমাকে চৌদ্দবার খাওয়ান আর আপনি না খেয়ে থাকবেন? যান খেয়ে আসুন।

আলোঃঃ উহুম না।

ভোরঃঃ খেতে বলছি আর যেন বলা লাগে না।

আলো কি করবে? ভোরের মাথায় ব্যান্ডেজ।  এ সময় ভোরের রাগ ওঠানো ঠিক হবে না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও খেতে হবে কিন্তু ভোর তো জানে না ভোরের চিন্তায় আলোর গলা দিয়ে কিছু নামতে যে খুব কষ্ট হবে। বাধ্য হয়ে খেতে গেলো শায়লা চৌধুরীকে রুমে থেকে ডেকে নিয়ে। কোনমতে খেয়ে উপরে এলো।  ভোর চোখ বুঝে আছে।

আলোঃঃ আপনাকে শোয়াই দিবো??

ভোরঃঃ এত তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ?

আলোঃঃ হুম। কখনো কখনো নিজেকে ফাস্ট বানাতে হয়।

ভোরঃঃ আপনি তো ফাস্ট ই।

আলোঃঃ মানে??

ভোরঃঃ কিছু না। শোয়াই দিন।

আলো গিয়ে শোয়াই দিল। তারপর পাশে গিয়ে আলো শুয়ে পড়লো। ভোরের নড়াচড়া করতে সমস্যা হয় পায়ের জন্য। 

মাগরিবের আজানে আলোর ঘুম ভাঙ্গে।  উঠে নামাজ পড়ে বরাবরের মতো ভোরকে ফুঁ দেয়। তারপর নিচে চলে যায়।  ভোরের জন্য স্যুপ রান্না করে নিয়ে রুমে আসে। ভোর জেগে গেছে অলরেডি।  আলো স্যুপটা রেখে ভোরকে ধরে বসিয়ে পিছনে বালিশটা টেনে দিয়ে টাওয়াল ভিজিয়ে এনে ভোরের মুখটা মুছে দেয়। তারপর স্যুপটা খাইয়ে দিয়ে পাশে বসে।

ভোরঃঃ এত সেবা করছেন কেন??

আলোঃঃ সেবা না।  আর এটা আপনার শরীরও না। আমার শরীর। আমার অস্তিত্ব। আমি আমাকে সুস্থ করছি আপনাকে না।

ভোরঃঃ আমি তো আপনাকে আমার অস্তিত্ব ভাবি না।

আলোঃঃ একদিন ভাববেন। আর এই সেম কথাটা বলবেন কারন সেদিন আপনি হয়তো আমার থেকেও আমাকে বেশি ভালোবাসবেন।

ভোরঃঃ অসম্ভব জিনিস।

আলোঃঃ আমরা মানুষ তো তাই এই অসম্ভব জিনিস গুলোই আমাদের সম্ভবে পরিনত হয়।

ভোরঃঃ কি যে ভাবেন নিজেকে বুঝি না। 

আলোঃঃ আপনার অর্ধাঙ্গিনী ছাড়া কিছুই না।

ভোরঃঃ অফিস কে সামলাবে এখন।

আলোঃঃ যতদিন সুস্থ না হবেন পুরোপুরি ততদিন অফিসের কথা মাথায়ও আনবেন না।  সবটা ভাবন সামলে নিবে। জানি মেয়েটার উপর চাপ পড়ে যাবে তবুও কিছু করার নাই।  আমিও আপনি পুরোপুরি সুস্থ না হলে কোথাও যেতে পারব না।

ভোরঃঃ ফালতু....

আলোঃঃ কে ফালতু?? 

ভোরঃঃ আপনি...

আলোঃঃ আপনি অসুস্থ তা না হলে ফালতু বলার মজা গুচিয়ে দিতাম। হুহ

ভোরঃঃ আমার ঘুম পাচ্ছে।  আচ্ছা এতো ঘুম পাচ্ছে কেন আমার??

আলোঃঃ আপনাকে ডক্টর ঘুমের ডোজ দিছে তাই।

ভোরঃঃ হুম। 

আলো ভোরকে শোয়াই দিয়ে চলে যাচ্ছিলো।

ভোরঃঃ কোথায় যান??

আলোঃঃ নিচে আপনার জন্য রাতের খাবার রেডি করতে।

ভোরঃঃ আমার পাশে বসে থাকুন আমি যত সময় ঘুমাবো ততসময়।

আলোঃঃ কেন? আপনি কি বাচ্চা যে ভুতের ভয় পাবেন তাই বসে থাকবো??

ভোরঃঃ কেয়ার করলে প্রোপার কেয়ার করবেন। আমি যদি পানি খেতে চাই তখন?

আলোঃঃ আপনি ঘুমালে ঘুমই থাকেন।  কোনো হুস থাকে না কেউ না ডাকা অবধি।  সো ঘুমান চুপ করে। আর এমনিতেই মাথা ফাটা।  এতো কথা বলা ঠিক না আপনার হুহ।

বলেই আলো নিচে চলে গেলো। আর ভোর ঘুমিয়ে পড়লো। আলো ভোরের জন্য রান্না করে।  উপরে এলো খাবার নিয়ে। রাত সাড়ে নয়টা। ভোরকে ডেকে তুলে খাওয়ালো। মেডিসিন দিলো। তারপর শাশুড়ি  আর বৌ দুজনে খেয়ে রুমে এলো। শায়লা চৌধুরী ভোরের সাথে কথা বলে ১১টার দিকে নিজের রুমে গেলো।  আলো ভোরের জন্য একটা টি-শার্ট  আর হাফ প্যান্ট নিয়ে এলো। 

ভোরঃঃ কি করবেন এগুলা দিয়ে?

আলোঃঃ আপনাকে চেন্জ করাবো।

ভোরঃঃ আপনি কি এখন আমাকে প্যান্ট ও পড়িয়ে দিবেন?

আলোঃঃ হুম। কেন?

ভোরঃঃ না। আমি পড়তে পারব আমাকে দিন।

আলোঃঃ কেন লজ্জা পাচ্ছেন? 

ভোরঃঃ  লজ্জা নারীর ভূষণ পুরুষের না।

আলোঃঃ তাহলে আমিই চেন্জ করিয়ে দি। আপনার শরীর দুর্বল। হাত এখন এতো নড়াচড়া করানো ঠিক হবে না আপনার। ২/৩দিন পর নিজেই চেন্জ করবেন। 

ভোরঃঃ আমার সব দেখার ধান্দা।

আলোঃঃ দেখার বাকি আছে কি? বেশি কথা না ওকে।

ভোরঃঃ আপনার মুখে কি কিছুই আটকায় না?

ভোরঃঃ আটকায় কিন্তু আপনার বেলায় না।

এরপর আলো ভোরের প্যান্ট  আর টি-শার্ট চেন্জ করিয়ে দিয়ে ভোরকে শোয়ালো।  আলো ফ্রেশ হয়ে এসে ভোরের কপালে একটা চুমু দিয়ে ভোরের বুকের উপর মাথা দিলো।

ভোরঃঃ এখনো আপনার আমার বুকে মাথা দিতে হবে?

আলোঃঃ হুম। এই বুকে যদি হাজারটা ক্ষত থাকে তবুও আমি মাথা এখানে রেখেই ঘুমাবো।

ভোরঃঃ আমার তো ব্যথা লাগবে তবে।

আলোঃঃ লাগলে কিছু করার নাই। আমি তো এখানেই মাথা রেখে ঘুমাবো।

ভোরঃঃ এই আপনার ভালোবাসা?

আলোঃঃ হুম এই আমার ভালোবাসা।  ঘুমান চুপচাপ।

ভোর আর কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

চলবে.................

((ভুল-ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবে। পরবর্তী পর্ব পেতে সাথে থাকুন।ধন্যবাদ 🙂))

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ajkerit
ajkerit
ajkerit
ajkerit