বাংলা রোমান্টিক গল্প ❤️ তোমার নামে ❤️ পর্ব - ০৭ Bangla Romantic Story ❤️ Tomar Nemee No- 07
বাংলা রোমান্টিক গল্প ❤️ তোমার নামে ❤️ পর্ব - ০৭ |
বাংলা রোমান্টিক গল্প ❤️ তোমার নামে ❤️
কলেজের পাশে একটা বড় রেইন ট্রি।কাল রাতের বৃষ্টিতে তা সিক্ত হয়ে আছে।নীলচে আকাশটা এখনো মেঘে আচ্ছন্ন।যেনো যেকোনো সময় কাঁদবে নীলাম্বরী।দলা দলা কালচে মেঘ জমাট বেঁধে আছে এধারে ওধারে।
নিজের জীপের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ইবরায।বারবার ঘড়ির দিকে নজর তার।তার চোখে মুখে অস্থিরতা।কলেজ গেইটের বাইরে আসতেই চমকিত হয় স্নিগ্ধতা।ইবরাযকে দেখেই লাফ মেরে উঠে তার কলিজা।হৃদয় গলানো হাসে ইবরায।স্নিগ্ধতা গুট গুট করে ইবরাযের সামনে এসে দাঁড়ায়।উৎসুক গলায় বললো---
"আপনি এখানে?
সাবলীল গলায় প্রত্যুত্তর করে ইবরায---
"তোমায় নিতে এসেছি।"
ঝট করেই বিস্ময় নিয়ে বলে উঠে স্নিগ্ধতা ---
"কোথায়?
"আমার হৃদসাগরে।"
স্নিগ্ধতা দম বন্ধকর হাসে।তাড়া দিয়ে বলে উঠে ইবরায---
"গাড়িতে উঠো জলদি।ভাবি অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।"
,
,
,
শপিং মলের বাইরে একটা ছোট রেস্তোরাঁ।সেখানেই বসে আছে সানাফ,রোমান আর ইবরায।ইবরায ঠান্ডা লাচ্চিতে সিপ মেরে বললো---
"কীরে রোমান,আজকাল থাকিস কই তুই?
রোমান হেয়ালি গলায় বললো---
"জব খুঁজছি।"
ইবরাজ ফিচেল হেসে বললো--
"কেন মামা?জব কী চান্দের দেশে খুঁজো যে তোমারে ধরণীর বুকে খুঁইজা পাওন যায় না?
রোমান সানাফের দিকে চোরা চোখে তাকিয়ে বললো---
"এখনকার জব মামার হাতে মোয়া না।"
"নাহ,দিল্লির লাড্ডু।"
হা হা করে হেসে উঠে ইবরায।স্মিত হাসে সানাফ।রোমামান কুঞ্চিত ভ্রু জোড়া আরো কুঁচকে নেয়।চোখ,মুখ বিকৃত করে চেয়ে থাকে।তন্মধ্যে বেজে উঠে রোমানের মোবাইলের মেসেজ টোন।দ্রুত হাতে তা নিয়েই দেখে তার গতকালের ইন্টারভিউ দেওয়া সেই কোম্পানি থেকে কনফার্মেশন এসেছে।রোমানের চোখ দুটো রোদের মতো ঝলমল করে উঠে।সটান করে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো---
"তোরা থাক আমি আসছি।"
সানাফ বিভ্রান্ত কন্ঠে বললো---
"এই,এই কোথায় যাচ্ছিস?
"কাজ আছে আমার।"
ইবরায মৃদু হেসে ফিচেল গলায় বললো--
"দয়াল ডাক দিয়েছে রোমান বাবাকে।"
তীব্র শব্দে হেসে উঠে ইবরায।মুহূর্তেই হাসি বন্ধ করে বললো---
"চল,অনেক সময় হয়েছে।ভাবি অপেক্ষা করছে।"
সানাফ সম্মতি দেয়।
শপিংমলে এসে প্রিয়াকে কল করে ইবরায।একটা শাড়ির দোকানে বসে আছে।চারদিকে গ্লাস দেওয়া দোকানটায় এসি অন করা।থাই টেনে ভেতরে ঢুকে ইবরায আর সানাফ।
একটা হালকা ফিরোজা রঙের কামিজ পড়েছে স্নিগ্ধতা।তার লতানো দেহের পিঠের মাঝ বরাবর লম্বালম্বি ঢেউ খেলছে তার লম্বা বেনুনি।গায়ের রঙের কমতি বিধাতা তার চুলে ঢেলে দিয়েছে।সানাফের দুই অক্ষিযুগল স্নিগ্ধতার সেই চুলে আটকে যায়।ইবরায খোঁচা মেরে বললো--
"কীরে,তাকিয়ে তো এমনভাবে আছিস যেনো জীবনে প্রথমবার মেয়ে মানুষ দেখছিস!
সানাফ সেদিকেই চোখ রেখে বেখেয়ালি গলায় বললো---
"তুই কী সত্যিই স্নিগ্ধতাকে বিয়ে করবি?
ইবরায অধর কোণে শয়তানি হেসে বললো---
"বেচারা জয়নাল বৌয়ের বিরহে শেষ হয়ে যাবে রে।কারো মৃত্যুর দায় আমি নিতে পারবো না।"
সানাফ বিষাক্ত চোখে তাকায়।মেজাজ বিগড়ে যায় তার।ইবরায তার পা চালায়।স্নিগ্ধতার পাশে দাঁড়িয়ে কাধের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো---
"স্নিগ্ধা রাণী,পছন্দ হচ্ছে না?
চকিতে পাশে তাকায় স্নিগ্ধতা।কোমল হেসে বিস্মিত চোখে বললো---
"কোথায় ছিলেন আপনি?
ইবরায ক্ষীণ স্বরে বললো---
"তোমার কাছেই।"
সলজ্জ হাসে স্নিগ্ধতা।ইবরায তটস্থ হয়ে বললো--
"শাড়ি পছন্দ হয়েছে তোমার?
স্নিগ্ধতা মুখটা শুকনো করে বললো---
"উঁহু।"
"কেন?অন্য কোথাও যাবে?
স্নিগ্ধতা মিইয়ে গলায় দুঃখী দুঃখী মুখে বললো---
"আমার সবকিছু তো আপু পছন্দ করে দেয়।আমি একা পারি না।"
ইবরায ভ্রু নাচিয়ে বললো---
"তাহলে কল করো।"
"মোবাইল?
ইবরায ঠোঁটের কোণে হেসে বললো---
"স্নিগ্ধা রাণী,আমাকে এখনো পর ভাবো?
স্নিগ্ধতা তার চোখ লুকায়।ইবরায ব্যস্ত হয়ে বললো---
"নাম্বার বলো।আমি কল করছি।"
স্নিগ্ধতা নাম্বার বলতেই সরে দাঁড়ায় ইবরায।বার কয়েক রিং বাজতেই কল রিসিভ করে খেয়া।
"হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম।"
এপাশ থেকে দাঁতের উপর দাঁত রেখে নাকের ডগা ফুলিয়ে ঈষৎ হাসে ইবরায।অচক্রী গলায় বললো---
"ওয়ালাইকুমুস সালাম,খেয়াতরী।"
খেয়ার চোখ জোড়া তার আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।উদ্ভাসিত চোখ দিয়ে শূন্যে তাকিয়ে চকিত গলায় বললো---
"তুমি?
ইবরায একটু সময় নিয়ে হেসে বললো---
"চিন্তে পারলে খেয়াতরী।ইবরায মাহাদী।তোমার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ।"
খেয়া কটমটিয়ে বললো--
"ইবরায!তুমি আমার নাম্বার পেলে কোথায়?
ইবরায দুর্বোধ্য হাসলো।মৃদু গলায় বললো---
"দুর শালি!
"ইবরায!হোয়াট ইজ দিস?
"খেয়াতরী,কেমন আছো?
"তুমিই তাহলে!
"হ্যাঁ,আমি।বললে না কেমন আছি।"
"এই বিয়ে হবে না।কখনই না।"
ইবরায নির্বিঘ্ন গলায় বললো---
"কেন?বিয়েতো হবেই খেয়াতরী।হতেই হবে।"
"দেখো ইবরায...।"
খেয়ার উত্তিজেত কন্ঠের আওয়াজে লাইনটা কুট করে কেটে দেয় ইবরায।স্নিগ্ধতা অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে।কাছে আসতেই ঠোঁট গুঁজ করে বললো---
"আপু কী বলেছে?
ইবরায মৃদু হেসে বললো---
"আমার পছন্দে নিতে বলেছে।আরেকটা কথা,বিয়ের আর চারদিন বাকি। আজকের পর তোমার বোনের সাথে আর কোনো যোগাযোগ করবে না।এইটা কেমন কথা বোনের বিয়েতে কেউ বিয়ের আগের দিন আসে?
স্নিগ্ধতা মনক্ষুন্ন করে বললো--
"আপুর পরীক্ষা কাল শেষ হবে।"
"ওকে।দেন ও আসলেই বাকি কথা হবে।তুমি একদম ওর কল রিসিভ করবে না।দেখবে ও তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবে।"
অনুগত সহচরের মতো ইবরাযের কথা মেনে নিলো স্নিগ্ধতা।"
,
,
,
স্নিগ্ধতাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে হালিমা বেগম।প্রিয়ার কাছে তার দাদী শাশুড়ির দেওয়া দুটো হার আছে।একটা প্রিয়াকে তার দাদী শাশুড়ি দেখতে গিয়ে দিয়েছিলো।আরেকটা ইবরাযের বৌয়ের জন্য।যেহেতু স্নিগ্ধতাকে দেখতে যাওয়ার সময় ইবরাযের কড়া নির্দেশে হালিমা বেগমকে সাথে নেওয়া হয়নি তাই আজ তাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।
কিন্তু হালিমা বেগম নাক,মুখ কুঁচকে নিলেন স্নিগ্ধতাকে দেখে।তিরস্কার করে বললেন--
"অ্যাঁ!
এই কালা মাইয়াডারে আমার ইবরায বিয়ে করবো!কেন?দেশে মাইয়ার অভাব পড়ছে?
প্রিয়া বড় বড় দুটো ঢোক গিললো।ইবতেহাজ বিরক্তিকর চোখে তাকালো।সামনে ভীত হয়ে বসে থাকা স্নিগ্ধতার হাত,পা অনবরত কাঁপতে লাগলো।তার স্বরনালির শ্বাস আটকে আসছে।হালিমা বেগম পুনরায় তিরিক্ষি গলায় বললেন--
"এই বিয়া হইবো না,হইবো না এই বিয়া।এই মাইয়ারে আমি আমার নাত বউ করমু না।কী চেহারা দেখছো!এরে কী তার মায় আন্ধারে জন্ম দিছি!নাকি এতকালেও গায়ে কিছু মাখে নাই?
ধমকে উঠে বাইরে থেকে আসা ইবরায।
"দাদী!
হালিমা বেগম চুপসে যান।ইবরায গলা চড়িয়ে বললো---
"তোমাকে না বলেছি বেশি কথা না বলতে?
হালিমা বেগন নাকি কান্নার সুরে বললো--
"তুই আমারে সবসময় ধমকাচ ক্যান?তোর ভালার লাইগাই তো কইতাছি।যদি এই বিয়া হইয়া যায় তাইলে এই কালা মাইয়ার লগে তোর সারাজীবন ঘর করতে হইবো।"
এতোকিছু শুনে স্নিগ্ধতার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে ঝরতে লাগলো পানি।কিন্তু মাথা নত করে নিজেকে সামলায় সে।নতুন বাড়িতে এসে সে নিজেকে এতোটা দুর্বল করতে চায় না।কিন্তু তার মর্মাহত মন হঠাৎ করে সরব হলো একটি কথায়।"যদি এই বিয়ে হয়"।কেন হবে না এই বিয়ে?শুধু সে কালো বলে?কিন্তু এতে তার কী দোষ?আচমকায় আরেক প্রশ্ন উদ্ভুত হয় স্নিগ্ধতার জমাট মস্তিষ্কে।যদি কেন?তারা কী এই বিয়ে হতে দিবে না?তাহলে এতো আয়োজন!তারা কী বিয়ে ভেঙে দেওয়ার জন্য বিয়ে ঠিক করেছে?
স্নিগ্ধতার ভাবনার ঘুড়ি কাটে ইবরাযের দারাজ কন্ঠে।
"এখান থেকে যাও দাদী।আর একমিনিটও যেনো তোমাকে আমি না দেখি এখানে।"
ইবরাযের কথা হালিমা বেগমের জন্য অন্ধের যষ্ঠির মতো।
ইবরায স্নিগ্ধতার সামনে বসলো।মোলায়েম গলায় বললো---
"সরি স্নিগ্ধা রাণী।দাদীর কথায় কিছু মনে করো না।বুড়ির বয়স হয়েছে কিন্তু জীভের ধার কমেনি।"
ইবরায সেই হারটা এগিয়ে দেয় স্নিগ্ধতার দিকে।কিন্তু সে নিতে অসম্মতি জানায়।ইবরায তার কারণ জিঙ্গেস করতেই বললো, সে চায় হালিমা বেগম খুশি মনে এই হার তাকে নিজ হাতে পড়িয়ে দিক।যা বর্তমানে সম্ভব নয়।তাই সে অপেক্ষা করবে।
বাড়ির সামনে স্নিগ্ধতাকে নামিয়ে দিতেই সে হাঁটা শুরু করে।ইবরায দাঁড়িয়ে রইলো।যখন স্নিগ্ধতার থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পেলো না তখন প্রশ্বস্ত গলায় বলে উঠে ইবরায---
"কৃষ্ণকালো,কৃষ্ণকলি
ভ্রমরকৃষ্ণ কেশ,
কালো দিঘীর,আঁধার ঘরে
তোমায় লাগে বেশ।
নিকষকালো আকাশ জুড়ে
শত তারার খেলা
চাঁদ যে তার একটাই
জানে নিশুথ বেলা।
সফেদ চোখের মধ্যিখানে
কালো চোখের তারা
ত্রিভুবন চাইয়া দেখে
ওই তারার ই ধারা।
স্নিগ্ধতা ফট করেই পেছন ফিরে।অদ্ভুত সম্মোহিনী দৃষ্টিতে চন্দ্রকিরণের আভায় অপলক চেয়ে থাকে ইবরাযের দুই মোহনীয় চোখে।
চলবে,,,
(বিঃদ্রঃ
তোমার নামে কী আপনাদের ভালো লাগছে না?)
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url