বাংলা রোমান্টিক গল্প ❤️ তোমার নামে ❤️ পর্ব - ০৬ Bangla Romantic Story ❤️ Tomar Nemee No- 06
বাংলা রোমান্টিক গল্প ❤️ তোমার নামে ❤️ পর্ব - ০৬ |
বাংলা রোমান্টিক গল্প ❤️ তোমার নামে ❤️ পর্ব - ০৬
ইবতেহাজের বুকের উপর হাত রেখে শুয়ে আছে প্রিয়া।সিলিং এর দিকে গম্ভীর দৃষ্টি ইবতেহাজের।বেশ কিছুক্ষণ তার দিকে চেয়ে এই গম্ভীরতার মানে বুঝতে না পেরে প্রিয়া চিন্তিত গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে ---
"কী হয়েছে তোমার?যখন থেকে ফিরেছো তখন থেকেই কেমন অস্থির লাগছে তোমাকে!
ইবতেহাজ ছোট্ট শ্বাস ফেললো।নমনীয় গলায় বললো---
"আমার অস্থিরতার মানে আর কেউ না বুঝলেও তোমার চোখের আড়াল হয় না কখনো।"
প্রিয়া পিঠ উঁচু করে তার মুখটা ঝুঁকিয়ে দিলো ইবতেহাজের মুখের উপর।তার গালে নরম হাত ছুঁইয়ে বললো----
"কী হয়েছে আমাকে খুলে বলো।"
ইবতেহাজ উঠে বসে।উৎকর্ণ হয়ে থাকে প্রিয়া।নিরুদ্বেগ গলায় ইবতেহাজ বললো---
"আবেশকে মনে আছে তোমার?
প্রিয়া চকিত গলায় বললো---
"আমাদের আবেশ?
ইবতেহাজ ছোট্ট করে বললো--
"হুম।"
প্রিয়া উৎকন্ঠিত গলায় প্রশ্ন করলো---
"কোথায় দেখলে ওকে?
ইবতেহাজ আবেগী গলায় বললো---
"দেখিনি।মনে পড়ে আবেশ একটা মেয়েকে ভালোবাসতো।পরিবারের অমতে তাকে বিয়ে করেছিলো?
"হুম।"
"যেই মেয়েটার সম্পর্কে ইবরায বলেছিলো সে নহর ছিলো।আবেশের বিধবা স্ত্রী।"
একটা ভয়ংকর অস্বস্তিকর শ্বাস ফেললো প্রিয়া।গুমোট গলায় বললো---
"মেয়েটা এখন কেমন আছে?
ইবতেহাজ নির্বিঘ্ন গলায় বললো---
"ওর একটা ছেলে আছে।নিবেশ নাম তার।ভারি মিষ্টি দেখতে।"
প্রিয়া তার প্রশ্নের উত্তর না পাওয়াতে যতটুকু কষ্ট পেয়েছে তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছে নিবেশের কথা শুনে।উচ্ছলিত গলায় বললো---
"নহরকে একদিন নিয়ে এসো আমাদের বাসায়।কে জানে কী অবস্থা মেয়েটার!
ইবতেহাজের বুক চিরে বেরিয়ে এলো ভয়ংকর দীর্ঘশ্বাস।তার মনে হলো নহরের এই অবস্থার জন্য সে হয়তো কোনোভাবে দায়ী।
বাইরে থেকে কর্কশ আওয়াজ পেয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠে প্রিয়া।ব্যগ্র হয়ে শাড়ির আঁচলটা মাথায় টেনে নেয়।দরজা খুলতেই খেমটি মেরে উঠে হালিমা বেগম---
"কীরে! আমার ইবরায সে কখন থেইকা বইসা আছে ওর খাওন না দিয়া ঘরের মধ্যে ফুঁসুরফাসুর করতাছোস ক্যান?
প্রিয়া মাথা নত করে বললো---
"যাচ্ছি দাদীজান।"
"যাও,যাও।তোমারে দিয়া তো এরচে বেশি আর কী হইবো!এতোদিনেও তো এক্কান বাচ্চার জন্ম দিতে পারলা না!
প্রিয়ার চোখে উছলে উঠে বর্ষণ ধারা।সে কোনো প্রত্যুক্তি করলো না।তার পক্ষে ইবতেহাজ বললো---
"দাদীজান,আপনাকে আমি আগেই বলেছি সমস্যা আমার প্রিয়ার নয়।তারপরও বারবার একই কথা কেন বলছেন?
হালিমা বেগম খলবলিয়ে উঠলেন---
"দেখ ইবু,মিছা কথা কবি না।আমি ভালো কইরা জানি তোর বউ মা হইতে পারবো না।এর উপর জ্বীনের আঁছড় আছে বুঝলি।এর লাইগাই তো বাচ্চা পেডে আইলেই তারে খাইয়া ফেলায়।"
ইবতেহাজ শক্ত কন্ঠে বললো--
"দাদীজান,সভ্য সমাজে বসবাস করেও এই অসভ্য জাতির মতো কথা কেন বলছেন?
হালিমা বেগম নাকি কান্না শুরু করলেন---
"কী,কী কইলি তুই আমারে?আমি অসভ্য!এর লাইগা গেরাম তে এনে আইনা রাখছোস আমারে?আইজ আমারে গেরামে পাঠাইয়া দিবি।আমি থাকুম না এহানে।থাকুম না।"
শব্দ করে কাঁদতে থাকে হালিমা বেগম।ইবতেহাজ কিছু না বলে বেরিয়ে যায় নিজের কক্ষ থেকে।
খাবার টেবিলে প্রিয়ার মুখের দিকে নিস্পলক চেয়ে আছে ইবরায।প্রিয়া একের পর এক কাজ করছে কিন্তু ইবরাযের দিকে তাকাচ্ছে না।সে চায় না তার চোখের জল কেউ দেখুক।ইবরাযের বেজায় রাগ হলো।কেউ তাকে ইগনোর করবে ইবরাযের তা মোটেও পছন্দ নয়।খপ করে প্রিয়ার হাত চেপে ধরলো ইবরায।চোয়াল শক্ত করে বললো----
"তুমি কেনো কোনো জবাব দাও না ভাবি?
প্রিয়া কোমল গলায় বললো---
"খেয়ে নাও ইবরায।এতো রাত করে কেন ফিরো বাসায়?
ইবরায তপ্ত গলায় বললো--
"আমি কী তা বাসার সবাই জানে।তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দাও ভাবি।"
প্রিয়া জলভরা চোখে তাকিয়ে আহত গলায় বললো---
"যে প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই তার উত্তর কোথায় থেকে দিবো আমি?
ইবরাযের মুখটা শক্ত হয়ে এলো।প্রদৃপ্ত গলায় বললো---
"এতে তোমার কী দোষ?আর ভাইয়া যখন সবটা মেনে নিয়েছে সেখানে দাদী কেন তোমাকে কথা শোনাবে?ওই বুড়িকে আমি...।"
ইবরায অগ্নিশর্মা হয়ে উঠতে গেলে তার হাত চেপে ধরে প্রিয়া।অচক্রী গলায় বললো---
"নাহ ইবরায।দাদীজানকে তুমি কিছু বলবে না।আর দাদীজান যা বলেছে তা মিথ্যে নয়।গত সাত বছরেরও একটা সন্তান দিতে পারি নি তোমার ভাইকে।আমার জন্য ইবতেহাজ আজ পর্যন্ত বাবা হওয়ার খুশি অনুভব করতে পারলো না।"
ইবরায ঝট করে বলে উঠে---
"আমি তোমাদের সন্তান নই?
প্রিয়ার চোখের জল এইবার বাঁধ ভাঙে।ইবরায অধৈর্য হয়ে প্রিয়ার হাত দুটো ধরে বললো---
"মা কে আমার মনে নেই ভাবি।কিন্তু ভাবি রূপে আমি আরেক মা পেয়েছি।আমি চাই না আমার মা কখনো কাঁদুক।তার চোখের জল ঝড়ুক।আমি চাই সে সারাজীবন হাসি খুশি থাকুক।ঠিক যেমন আকাশের এক ফালি চাঁদ।"
প্রিয়ার চোখে উথলে উঠে প্রসন্ন হাসি।
,
,
,
বিশাল বারান্দা থেকে হুরহর করে বাতাস ঢুকছে কক্ষে।মেঘা তার প্রিয় বালিশটায় মুখ গুঁজে রেখেছে।ভেজানো দরজা হালকা ঠেলে ভেতরে আসে কিসমত আলী।মেয়েকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে খানিকটা বিস্মিত হলেন।তার পাশে বসে আহ্লাদী গলায় বললেন---
"কী হয়েছে আমার মেঘরাণীর?
বাবার আহ্লাদী কন্ঠে ফট করে উঠে বসে মেঘা।ঝপাৎ করে কিসমত আলীর গলা জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে লাগলো।কিসমত আলী বিভ্রান্ত হলেন।অসহিষ্ণু গলায় বললেন---
"কী হয়েছে?আমার মেঘরাণী কাঁদছে কেন?তার কী নতুন গাড়ি চাই?
মেঘা তীব্র যন্ত্রণায় আরো জোরে কাঁদতে লাগলো।কিসমত আলী অসহনীয় গলায় বললেন---
"আমার মেঘরাণীর চোখের জলের কারণ কী?
মেঘা জমাট গলায় নাক টেনে টেনে বললো---
"রোমান আমাকে ভালোবাসে না বাবা।"
কিসমত আলীর রাগ চরম পর্যায়ে পৌঁছালো।সংক্ষুব্দ গলায় বললেন---
"তাহলে এই বিয়ে হবে না।"
মেঘা কেঁদে বুক ভাসিয়ে বললো---
"নাহ বাবা।রোমানকে আমি ভালোবাসি।"
কিসমত আলী উষ্ণ গলায় বললেন---
"ওই ছেলে বাধ্য হবে তোকে বিয়ে করতে।তুই চিন্তা করিস না।"
মেঘা চোখের পানি মুছে শান্ত হয়ে বললো--
"বাবা,তুমি ওর চাকরির ব্যবস্থা করো।যত দ্রুত সম্ভব এই বিয়েটা হয়ে যাক।"
কিসমত আলী আশ্বস্ত গলায় বললেন----
"আমি দেখছি।তুই চিন্তা করিস না।"
,
,
,
স্নিগ্ধতার চোখের সামনে ইবরাযের সেই চিরকুট।বারবার তাতে চোখ বুলিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসে সে।আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে স্নিগ্ধতা।চাপা গায়ের রঙে তেমন উল্লেখ যোগ্য সৌন্দর্য তার চোখে পড়লো না।স্নিগ্ধতার দীপ্ত মুখটা মুহূর্তেই ম্লান হয়ে এলো।হীনমন্যতায় ঘিরে ধরলো স্নিগ্ধতাকে।কেন তার গায়ের রঙটা আরেকটু উজ্জ্বল হলো না?কেন আরেকটু সুন্দর হলো না?
স্নিগ্ধতা মনেপ্রাণে তখন তার বোনকে সরণ করে।তার বোন ই সে যে তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।স্নিগ্ধতা,এই নামটাও খেয়ার দেওয়া।
সেদিন ছিলো জৈষ্ঠ্যের শেষ সপ্তাহ।প্রায় তিনদিনের টানা দগদগে রৌদ্রতাপে নাভিশ্বাস সকলের।কিন্তু সেদিন সকাল হতেই আকাশে গুমোট মেঘের আনাগোনা শুরু হলো।শুভ্র মেঘের রঙ ধীরে ধীরে কালো থেকে নিকষ কালো হতে লাগলো।আকাশ ডাকতে শুরু করলো।মেঘের গর্জন বাড়তে থাকলো।শুরু হলো ভারী বর্ষণ।সারাদিন চললো তুমুল বর্ষণের ধারা।বিকেল হতে রূপার শরীর খারাপ লাগতে লাগলো।খেয়া মায়ের পাশে ঘুরঘুর করলেও কিছু বোঝার সাধ্য তার হলো না।নয়ন আহমেদ সারাদিনের কর্মব্যস্ত সময় কাটিয়ে যখন কাকভেজা হয়ে বাসায় ফিললেন উদ্বেলিত তিনি।রূপার এহেন অবস্থায় তাকে হসপিটালে নেওয়ার উপায় পেলেন না তিনি।রূপা ধৈর্য্যের এক কঠিন পরীক্ষা দিলেন সেদিন।সারারাত হলো ভারী বর্ষণ।থৈ থৈ জলে ভরে গেলো বাড়ির আশপাশ।বাড়ির পেছনের জঙ্গল ভরে গেলো।বাড়ির সামনের প্রাঙ্গনে পানি উঠে এলো হাঁটু অবধি।বিপাকে পড়লেন নয়ন আহমেদ।শুরু হলো রূপার প্রসববেদনা।নিরুপায় নয়ন আহমেদ কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।বৃষ্টির তোড় বাড়ার পর কারেন্ট চলে যায়।নিশুতি রাত আরো যেনো গভীর আঁধারে ছেয়ে গেলো।অন্ধকার,বৃষ্টি,রূপার এই অবস্থা সবকিছু মিলিয়েই হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন নয়ন আহমেদ।খেয়ার কান্নায় তিনি আরও উদ্বিগ্ন হলেন।খেয়াকে মায়ের পাশে বসিয়ে মাথায় ছাতা চাপিয়ে চললেন প্রতিবেশির ঘরের দোরগোড়ায়।ডেকে আনলেন কিছু বয়স্ক মহিলাকে।
নয়ন আহমেদ চার্জার লাইটের ব্যবস্থা করলেন।কাতরাতে থাকলেন রূপা।নয়ন আহমেদ খেয়াকে নিয়ে বাইরের ঘরে বসলেন।সারারাতের পর ঠিক আযান যখন হলো তখন জন্ম হলো স্নিগ্ধতার।তার জন্মের সাথেই সাথেই চলে এলো বিদ্যুৎ।লাফিয়ে উঠলো খেয়া।বোনের কান্নার আওয়াজে সে উচ্ছ্বাসিত।বাইরের ঘরের সামনের বারান্দার গাছগুলোকে দেখতে লাগলো।ঘরের দোরের সামনেই থৈ থৈ পানি।খেয়া বাবাকে ডেকে দেখালো সেই বৃষ্টি ভেজা গাছের সিক্ত পাতা।নয়ন আহমেদ বললেন---
আকাশ কাঁদিয়া ঝড়িয়া বর্ষণ
ভেজালো ধরণীর মৃত্তিকা
দগ্ধ পরিবেশকে মায়ার চাদরে
ভরিয়ে দিলো স্নিগ্ধতা।
খেয়ার শব্দটা বেশ ভালো লাগলো।স্নিগ্ধতা।সে বাবাকে তার অর্থ জিঙ্গেস করলো।নয়ন আহমেদ বুঝিয়ে বললেন।খুশিতে গদগদ খেয়া দৌঁড়ে গেলো ঘরে।তার পিছু পিছু নয়ন আহমেদ।সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাটিকে কোলে নিলেন নয়ন আহমেদ।তাকে কোলে নিতেই খেয়া খুশিতে আটখানা হয়ে গেলো।বোনকে দেখেই প্রথম শব্দ উচ্চারণ করলো "স্নিগ্ধতা"।যার কাছে গত রাতের সমস্ত অবর্ণনীয় অবস্থার সমাপ্তি ঘটলো।
চলবে,,,
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url