ফ্রী গেস্ট পোস্ট বা ফ্রী ব্যাকলিংক পেতে আপনার লেখা পোস্ট করুন যোগাযোগ করুন পোস্ট করুন!

বাংলা রোমান্টিক গল্প ❤️ তোমার নামে ❤️ পর্ব - ০৫ Bangla Romantic Story ❤️ Tomar Nemee No- 05

বাংলা রোমান্টিক গল্প ❤️ তোমার নামে ❤️ পর্ব - ০৫
বাংলা রোমান্টিক গল্প ❤️ তোমার নামে ❤️ পর্ব - ০৫


বাংলা রোমান্টিক গল্প ❤️ তোমার নামে ❤️ পর্ব - ০৫

অর্ধ চাঁদের জোসনায় উজ্জ্বল চারধার।ফিনকে আলোয় জ্বলজ্বল করছে আম গাছের কচি পাতা।লাউয়ের ডগায় সবে গজে উঠেছে গোলাকার পাতা।তার উপর খেলছে জোনাকির আলো।সে এক অদ্ভুত আলোর খেলা।মাটিতে সরব হয়ে থাকা ঘাসের ডগায় বিচিত্র রঙের ফুলগুলোকে মাড়িয়ে তার উপর দাঁড়িয়ে আছে ইবরায।চোখে,মুখে উত্তেজিত ভাব।চঞ্চল চোখ দুটি নিশ্চল হয়ে আছে স্নিগ্ধতার জানালার পানে।বাউন্ডারি করা বাড়ির পেছন দিকটা জঙ্গলে ভরা।মাঝে মাঝে ঝোপঝাড়ে বেজি কিংবা সাপের দেখাও মেলে।হিসস  আওয়াজ শুনেও নড়লো না ইবরায।মোবাইলের ফ্লাসলাইট অন করতেই দেখা মিলে বাচ্চা সাপের।ইবরায সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো।সাপের বাচ্চাটির দৈর্ঘ্য তিন থেকে চার ফুটের হবে।আলোর ছটা পড়তেই সাপটি এদিক ওদিক ছুটতে থাকে।ইবরাযের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে তীর্যক হাসি।সাপটি হতভম্ব হয়ে দ্রুত প্রস্থান করে সেই জায়গা।ইবরায আবার গম্ভীর হয়ে যায়।একটা নাম্বার বের করে ডায়াল করে।

স্নিগ্ধ চাঁদের আলো ফিনফিন করে ঢুকে যাচ্ছে স্নিগ্ধতার জানালার পর্দা ভেদ করে।অঘোরে ঘুমোচ্ছে সে।দরজায় তীব্র হাতের চাপড় পড়াতেই ধড়ফড় করে উঠে বসে স্নিগ্ধতা।লম্বা লম্বা দুটো শ্বাস টেনে ধাতস্থ হয়ে লাইট অন করে।দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে রূপা।দরজা খুলতেই হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে চওড়া গলায় বললেন---

"এতো ঘুম কোথায় থেকে আসে তোর?সে কখন থেকে দরজা ধাক্কিয়ে যাচ্ছি।"

স্নিগ্ধতা ঘুম ভরা চোখে ঢুলুঢুলু হয়ে জমাট গলায় বললো---

"ঘুম পেলে আমি কী করবো!

রূপা দ্রুতহস্তে মোবাইলটা এগিয়ে দেয় স্নিগ্ধতার কানের কাছে।স্নিগ্ধতা চমকিত গলায় বললো---

"এমন করছো কেন?

রূপা চিবিয়ে অধৈর্য গলায় বললেন--

" ইবরায কল করেছে।নে কথা বল।"

স্নিগ্ধতার নিভুনিভু চোখ দুটো ঝট করেই প্রস্ফুটিত হয়।বুকের গহীনে তীব্র ঝড়ের তান্ডব শুরু হয়।ভয়ে তার শ্বাস আটকে আসে।সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝে সে ভুলেই যায় ইবরাযকে কল করার কথা।

ভীতসন্ত্রস্ত স্নিগ্ধতার দেহপিঞ্জরে অনুরণন শুরু হয়।কম্পিত গলায় সংকোচ নিয়ে বললো--

"হ্যাএএএলো!

ইবরায তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে প্রশ্বস্ত গলায় বললো----

"গত আট ঘন্টায় আমার জন্য কী দু'মিনিটও সময় হয়নি?

সংকোচিত গলায় রয়ে সয়ে বললো স্নিগ্ধতা ---

"সসসরি।আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম।আপুর সাথে কথা বলতে বলতে...।"

স্নিগ্ধতার কথা কেটে ইবরায তিক্ত গলায় বললো---

"তাহলে তোমার জীবনে আমার কোনো স্থান নেই?

স্নিগ্ধতার কান্না পেলে।স্বীকারোক্তিমুলক সুরে বললো---

"বিশ্বাস করুন,আমি ভুলে গিয়েছিলাম।"

ইবরাজ সরব গলায় কিঞ্চিৎ রাগমিশ্রণ করে বললো---

"গুড,ভেরি গুড।আট ঘন্টায় তুমি আমাকে ভুলে গেলে।তাহলে ভাবোতো যদি আমি একদিন তোমার চোখের আড়াল হই তাহলে তো সারাজীবনের জন্য তুমি আমাকে ভুলে যাবে।"

স্নিগ্ধতা বুক ভেঙে কান্না এলো।এতোবড় ভুল সে কী করে করলো! ঠোঁট কামড়ে কান্না দমন করে ফ্যাকাশে গলায় বললো---

"প্লিজ এমন করে বলবেন না।"

ইবরায নিরুত্তাপ গলায় বললো--

"বাড়ির পেছনে আমি।সময় হবে তোমার?

স্নিগ্ধতা সময় ব্যয় করলো না।ত্রস্ত পায়ে পেছন দরজা দিয়ে বাইরে আসে।স্নিগ্ধতা অবাক হয়।ইবরাযকে খুঁজে পেতে তার বেশি বেগ পেতে হলো না।বাড়ির পেছন দিকটা পুরোনো কিছু আসবাবপত্রও আছে।রোদে পুড়ে,বৃষ্টিতে ভিজে তার কিছু অংশবিশেষ ই বাকি।খেয়ার কক্ষের পুরোনো পড়াল টেবিলটাও সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে।ইবরায তার উপর নীল রঙের মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখেছে।মোমবাতির  শিখায় জ্বলছে কালো,নীল আর হলদে রঙের আগুন।সেই শিখার প্রজ্বলিত আলোয় ইহরাযের ভরাট চেহারাটা যেনো দ্যুতি বিচ্ছুরণ করছে।স্নিগ্ধতা অপরাধী চোখে তাকিয়ে আছে।ইবরাযের চোখে স্থিরতা।ছন্দ তুললো ইবরাযের ভরাট পুরুষালী কন্ঠ----

"কেমন আছো স্নিগ্ধা রাণী?

স্নিগ্ধতা কিছুক্ষণ মোহবিষ্ট চোখে তাকিয়ে রইলো ইবরাযের গম্ভীর দুই চোখের গহীনে।তার অধরে লুকায়িত হাসি যেনো কিছু বলছে যা স্নিগ্ধতা ধরতে পারলো না।ফিক করে হেসে ফেললো ইবরায।নিজেকে ঝুঁকিয়ে দিলো টেবিলটার উপর।টেবিলের ওপাশে থাকা ইবরাযকে স্নিগ্ধতার মনে হলো যেনো কোনো অগ্নিপুরুষ তার তেজস্বী রশ্মির ঝলকানিতে তার সারা অঙ্গে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।আর সেই আগুনে নির্দ্ধিধায় নিজেকে সমর্পণ করেছে স্নিগ্ধতা।তার দুই পূর্ণ অমিলীত চোখের আবিষ্ট চাহনি ধীরে ধীরে গ্রাস করছে ইবরাযের সেই তেজস্বিয়তা।

ইবরায ভ্রু দুটো নাচিয়ে বললো---

        "চাঁদের আলোয়, তোমার ছোঁয়ায়

            জেগেছে আজ জোসনা,

         দিঘির জলে,ফুলের কোলে

          ভেসেছে আজ বন্যা।

স্নিগ্ধতা নাজুক হাসে।সে হাসতেই তার ঠোঁটের নিচটায় বাম কোণে একটা ভাঁজের সৃষ্টি হয়।ঢেউ খেলানো ভাঁজ।ইবরায মুক্ত গলায় বললো---

"বিয়েটা হচ্ছে না স্নিগ্ধা রাণী।তুমি যেহেতু চাচ্ছো না তাই..।"

ইবরাযের কথার ফাঁকেই ব্যগ্র হয়ে স্নিগ্ধতা তার দুই হাত বাড়িয়ে ইবরাযকে তার কথা ফেরানো তাগিদ দিতেই মোমবাতি জ্বলন্ত শিখায় স্নিগ্ধতার আঙুল জ্বলে উঠে।উদ্বেলিত হয়ে উঠে ইবরায।ব্যতিব্যস্ত হয়ে টেবিলের পাশ কেটে স্নিগ্ধতার পাশে এসে ধমকে উঠে ইবরায।

"এইটা কী করলে?আর ইউ মেড?

স্নিগ্ধতার আঙুল ধরে তাতে লাগাতার ফুঁ দিতে থাকে ইবরায।স্নিগ্ধতা ধ্যানমগ্ন হয়ে চেয়ে আছে।তার দুই চোখের নির্নিমিখ চাহনি ইবরাযেয় উদগ্রীব দুই চোখে,অমসৃণ কপালে,তার দুই পুরু জাম রঙের ঠোঁটে।আচমকায় স্নিগ্ধতার কপালে ফুঁ মারে ইবরায।আচম্বিত হয় স্নিগ্ধতা।লাজুক চোখ দুটো আনমনেই অবনত হয়।দুরুদুরু বুকটা যেনো তার গড়পরতা বাড়াতে লাগলো।ইবরাযের উষ্ণ ছোঁয়ায় লাফিয়ে উঠে স্নিগ্ধতার হৃৎপিন্ড।কম্পিত হয় বেগতিক হারে।একে অপরের চোখে তাকিয়ে রয় ঐন্দ্রজালিক মায়ায়।

,

,

,

জামিল হোসেন অত্যন্ত নরম মেজাজের মানুষ।কিন্তু অন্যায়নের প্রতিবাদ তিনি কঠোর আওয়াজে করেন।মানুষ গড়ার কারিগর তিনি।একজন মানুষকে সঠিক ও ন্যায়ের পথে উদ্দীপিত করার জোর প্রয়াস চালান।সেই সদভাব থেকে শিক্ষকতার পেশায় যোগ দেন।গত পঁচিশ বছর ধরে তিনি এই পেশায় নিয়োজিত।

জামিল হোসেনের সামনে বসে আছে ইবতেহাজ আর ইবরায।নমনীয় চোখে তাকিয়ে আছেন।নহরের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য ইবতেহাজ নিজে এসেছে ক্ষমা চাইতে।জামিল হোসেন মুগ্ধ হলেন ইবতেহাজের ব্যবহারে।নির্ভয়ও প্রসন্ন হলো বোনের নিরাপত্তার জন্য এমন একজন মানুষের ছায়া পেয়ে।প্রায় একঘন্টা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার পর সম্মানপূর্ণ গলায় ইবতেহাজ বললো----

"আজ আসি স্যার।কোনো প্রয়োজন হলে জানাবেন।"

জামিল হোসেন প্রশ্রয়ের হাসি হেসে বললেন---

"অবশ্যই।"

জামিল হোসেন থেকে বিদায় নিয়ে দরজার কাছে আসতেই একটা বাচ্চা কন্ঠ ভেসে আসে ইবতেহাজের কানে।সে অনুভব করে তার পা জড়িয়ে ধরেছে কোনো ছোট ছোট কোমল হাত।থমকে যায় ইবতেহাজ।পেছন ফিরতেই দেখে ছয় সাত বছরের একটা ছোট্ট বাচ্চা ছেলে তাকে পেঁচিয়ে ধরে আছে।বাচ্চাটি স্বশব্দে বললো---

"বাবা,বাবা।"

ইবতেহাজ অবাক চোখে তাকায়।হাঁটু গেড়ে নিচে বসে বাচ্চাটির মিষ্টি সরস মুখটাতে গাঢ় দৃষ্টি বুলায়।চকিতে সামনের দিকে তাকায় ইবতেহাজ।

"বাবু শোনো।"

নহরের চিকন মেয়েলি কন্ঠে তার দিকে দৃষ্টি ক্ষেপন করে ইবতেহাজ।ইবরায অন্ধকারে সেদিন ভালো করে নহরকে দেখে নি।ফর্সা মুখের নহরকে দেখলে মনে হয় কোনো নির্জীব স্বর্নলতা।চোখ,মুখে ফ্যাকাশে ভাব।ভেতর দিকে ডেবে যাওয়া চোখ দুটো নিষ্প্রাণ।একটা সাদা রঙের কামিজের উপর হালকা গোলাপী রঙের ছাপ দেওয়া সালোয়ার কামিজ পড়েছে নহর।তার গলার ক্ষীন স্বরে বাচ্চাটি পেছন ফিরে।দৌঁড়ে নহরের কাছে গিয়ে অনুযোগের সুরে বললো---

"সরি মাম্মা।"

এইটুকুই বলতে চোখ টলটল করে উঠে বাচ্চাটির।দৌঁড়ে ভেতর ঘরে চলে যায়।নহর আদুরে গলায় ডেকে উঠে---

"নিবেশ,নিবেশ।"

ইবতেহাজ প্রস্ফুটিত চাহনিতে দেখছে নহরকে।ইবতেহাজের এমন চাহনিতে অপ্রস্তুত হয় নহর।মোলায়েম গলায় বললো---

"কিছু মনে করবেন না।ও আসলে বুঝতে পারে নি।পেছন দিক থেকে আপনার অবয়বটা ওর বাবার মতো মনে হলো।তাই ভুল করে ফেলেছে।"

ইবতেহাজের ভাবনার ছেদ কাটতেই সে মুক্ত গলায় বললো---

"ইটস ওকে।"

"ধন্যবাদ।"

নহর আর কোনো কথা বললো না।সে চলে যায়।ইবতেহাজের দৃষ্টি ফেরলো না।সে অনিমেষ চেয়ে রইলো।

চলবে,,,



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Profit Creators Blog Discuss Gest Posting
Hello, How can we help you?
Start chat...