ajkerit

বাংলা রোমান্টিক গল্প ❤️ তোমার নামে ❤️ পর্ব - ০৪ Bangla Romantic Story ❤️ Tomar Nemee No- 04

বাংলা রোমান্টিক গল্প ❤️ তোমার নামে ❤️ পর্ব - ০৪
বাংলা রোমান্টিক গল্প ❤️ তোমার নামে ❤️ পর্ব - ০৪


বাংলা রোমান্টিক গল্প ❤️ তোমার নামে ❤️ পর্ব - ০৪

দৌঁড়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে স্নিগ্ধতা।জানালার পর্দায় আবছা তার অবয়ব বুঝতে পেরেই ইবতেহাজ আর প্রিয়ার সামনে মেকি হাসি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে রূপা।এসেই খপ করে স্নিগ্ধতার হাত ধরে চোখ রাঙিয়ে বললেন----

"এই,কী অবস্থা করেছিস মুখের? এইভাবে ওদের সামনে যাবি তুই?

রূপা শাড়ির আঁচল নিয়ে স্নিগ্ধতার ঘামে চুপচুপে মুখটা আলতো করে মুছিয়ে দেয়।চাপা গলায় উচ্ছ্বাস নিয়ে স্নিগ্ধতা বললো---

"মা,তারা এসেছেন?

"হ্যাঁ।এসেছে।"

স্নিগ্ধতা গালভর্তি লাজুক হাসে।রূপা ঠাটানো গলায় বললেন---

"দাঁড়িয়ে আছিস কেন?তারা সে কখন থেকে বসে আছে।যা পেছন দরজা দিয়ে গিয়ে গোসল করে তারপর আসবি।মুখে কিছু মেখে আসবি।কী অবস্থা হয়েছে রোদে পুড়ে মুখটার।"

খিলখিলিয়ে হাসে স্নিগ্ধতা।মায়ের গালে টুপ করে চুমু খেয়ে বললো---

      "স্নিগ্ধা রাণী,হৃদয় পানি।"

মাকে ডিঙিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে স্নিগ্ধতা।হতবুদ্ধি রূপা ধমকে যায়।এই অবস্থায় ছেলে পক্ষের সামনে কেউ যায়? এখন কী হবে মেয়েটার?

ঘরের ভেতর ঢুকেই বরফ হয়ে যায় স্নিগ্ধতা।তার সামনে বসে আছে যেনো কোনো তুষার কন্যা।ফর্সা,গোলগাল চেহারার প্রিয়াকে দেখে স্নিগ্ধতা নিজের প্রতি হিনমন্যতায় ভোগে।স্নিগ্ধতার উপস্থিতি টের পেতেই ইবতেহাজ আর প্রিয়া নয়ন আহমেদের কথার ফাঁকে তার দিকে নজর ফেলে।স্নিগ্ধতা কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।স্মিত হাসে প্রিয়া।উঠে এসে দাঁড়ায় স্নিগ্ধতার নাক বরাবর।অনেকটা দ্বিধা নিয়ে চোখ উপরে তুলে স্নিগ্ধতা।প্রিয়া হাস্যোজ্জ্বল গলায় বললো---

"তুমিই বুঝি স্নিগ্ধতা?

স্নিগ্ধতা মুখ দিয়ে অস্ফুট আওয়াজ করে মাথা উপর নিচ করে।

মিষ্টি হাসে প্রিয়া।স্নিগ্ধতার হাত ধরে নিয়ে পাশে বসায়।ইবতেহাজ একবার তাকালো।তারপর নিজের মোবাইলে ব্যস্ত হয়।নির্বিঘ্ন গলায় বললো প্রিয়া---

"আজ বুঝি ইমপর্টেন্ট ক্লাস ছিলো?

"হুম।"

স্নিগ্ধতা গোল গোল চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকায়।প্রিয়া ফিচেল হেসে স্নিগ্ধতার কানের কাছে চুপিচুপি বললো---

"ইবরায মেসেজ করেছে।"

সলজ্জ চোখে হাসে স্নিগ্ধতা।মৃদু হাসে প্রিয়া।ইবতেহাজকে দেখিয়ে বললো--

"ইনি ইবরাযের বড় ভাইয়া।আর আমি...।"

"ভাবিমা।"

ধুপ করেই যেনো প্রিয়ার হৃদপিন্ড দোল খেলো।মা,তাকে আজ পর্যন্ত কেউ মা বলে ডাকে নি।ডাকবে কী করে!সে তো মা হতে পারে নি।যতবার কনসিভ করেছে দুই মাস না যেতেই মিসক্যারেজ।এতে করে প্রিয়ার অবস্থাও শৌচনীয় হয়।তাই ইবতেহাজ সন্তানের আশা ছেড়ে দিয়েছে।দশ বছরের প্রেম আর সাত বছরের সংসারে ইবতেহাজ কখনো প্রিয়াকে এমন কিছু বলে নি যাতে সে কষ্ট পায়।সন্তান না হওয়াতেও তার কোনো আক্ষেপ নেই।নিজের ভাইকে সন্তানতূল্য স্নেহ করে ইবতেহাজ।প্রিয়া ইবরাযকে দেবর কম ভাই ভাবে নিজের।তার সকল আবদার তার ভাবি হয়েই ভাইয়ের কাছে পৌঁছায়।

প্রশ্রয়ের হাসি হাসে প্রিয়া।খুশির ঝলমলে বাতাস বইয়ে বললো---

"স্নিগ্ধতাকে আমাদের পছন্দ হয়েছে।তুমি কী বলো ইবতেহাজ?

 ইবতেহাজ অপ্রস্তুত চোখে তাকিয়ে বললো---

"আমার আর কী বলার!

নয়ন আহমেদ ইবতেহাজকে চেনে এবং যথেষ্ট সম্মান করে।এই বিয়ের জন্য তিনি একমাত্র রাজী হয়েছেন ইবতেহাজের জন্য।কারণ তিনি মানেন,ইবতেহাজ থাকতে তার মেয়ের সাথে কোনো অন্যায় হবে না।

,

,

,

রাগে ইচ্ছে হচ্ছে ইবরাযের গালে একটা চড় বসিয়ে দিতে ইবতেহাজের।কিন্তু পারলো না সে।গনগনে গলায় বললো---

"তোকে আমি কতবার বলেছি এইসব থেকে দূরে থাকতে।তারপরও তুই ওদের গায়ে কেন হাত তুললি?

ইবরায স্বাভাবিক গলায় বললো---

"আমার ভাইয়ের নামে অপবাদ দিয়ে বেড়াবে আর আমি চুপ করে থাকবো তুমি ভাবলে কী করে!

"ইবরায!

হালিমা বেগম খেমটি মেরে উঠলেন--

"ওই ইবু,তুই আমার ইবরাযরে চিল্লাইতেছোস ক্যান?

ইবতেহাজ নরম সুরে বললো---

"দাদীজান,আপনি কেন বুঝতে পারছেন না।আমি চাই না ও এইসবে নিজেক জড়াক।এই রাজনীতি যেমন দেখতে তেমন নয়।সব ধ্বংস করে দিবে।আমি চাই না ওর কোনো ক্ষতি হোক।"

হালিমা বেগম তেতে উঠে বললেন--

"তাই বইলা তুই আমার ইবরাযরে ধমকাইবি?একদম ধমকাবি না ওরে।ওর যা ইচ্ছা তাই করবো।"

"দাদীজান!

ইবরায দামান গলায় ডেকে উঠে---

"জোসনার মা,এই বুড়িকে এখান থেকে নাও তো।আর বুড়ি একটা কথাও বলবি না।যা এখান থেকে।"

ইবরাযের ধমকে হালিমা বেগম গুটি পায়ে হেঁটে চলে যান।ইবরায উঠে দাঁড়ায়।শান্ত,শীতল গলায় বললো---

"আমার ভাইয়ের গায়ে কেউ একটা আঁচড় দিলে তার জান নিয়ে নেবো আমি।তার জন্য যদি ফাঁসিও হয় আমার তাতেও আমি দু'বার ভাববো না।আমার ফেরেশতার গায়ে আঁচড় তো দূরের কথা তার নামেও যদি কেউ তার নোংরা হাত ছোঁয়ায় তার ওই হাত আমি কেটে ফেলবো।"

চোয়াল শক্ত করে কপালে ভাঁজ তুলে বলে উঠে ইবতেহাজ----

"ইবরায!

ইবরায চলে যেতেই কাউচে বসে ইবতেহাজ।প্রিয়া সান্ত্বনার সুরে বললো--

"এতো কেন ভাবছো তুমি?ও তো খারাপ কিছু করে নি।ছেলেগুলো তোমার নাম বলে মেয়েটার সাথে খারাপ বিহেভ করেছে।তাই...।"

নাক,মুখ কুঁচকে বলে উঠে ইবতেহাজ---

"প্রিয়া তুমি তো জানো,এই রাজনীতি আমার সব কেড়ে নিয়েছে।আমার বাবা মাকে হারিয়েছি আমি।ইবরাযকে হারাতে হারাতে পেয়েছি আমি।ওর কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারবো না।শুধু মাত্র এই কারণে ওকে আমার কাছ থেকে এতো বছর দূরে রেখেছি আমি।নিজের কলিজাকে আমি নিজের কাছ থেকে দূরে রেখেছি।বোর্ডিং স্কুলে পড়িয়েছি।এইখানে এতো ভালো ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পরও রাজশাহীর পাবলিক ভার্সিটিতে পড়িয়েছি।শুধু ওকে এইসব থেকে দূরে রাখতে।বাবা,মায়ের শেষ নিশান ও আমার।ওর কিছু হলে আমি জীবিত থেকেও মরে যাবো।তাই আমি চাই না ও এইসব জড়িয়ে পরুক।বিয়ের পরই ওকে বাইরে পাঠিয়ে দিবো।ওকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হলেও সয়ে নিবো আমি কিন্তু ওর কিছু হলে বাবা,মায়ের কাছে কী জবাব দিবো আমি?

চলবে,,,



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ajkerit
ajkerit
ajkerit
ajkerit