ajkerit

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔 - Bangla Pramer Golpo Love Torchar

 

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔
বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔 

  • বাংলা গল্পঃ     💔 লাভ টর্চার 💔
  • লেখকঃ            নুসরাত জাহান আবিদা 
  • সংগৃহীতঃ         ফেছবুক 

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔 পর্বঃ ০১ 

- ছেলেটা দেখতে অনেক জোস না!!
কথাটা বলে শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকালাম। শুভ্র ভাইয়া আমারই দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে আছে। সামনে থাকা হাবলাকান্তের মতো মানুষটিকে দেখে কুচকানো ভ্রুযুগল আরো বেশি কুচকে গেছে। তা দেখে আরো উৎসাহিত হলাম। আরেকটা ফুচকা মুখে পুরে বললাম,
- আগে যদি জানতাম দুনিয়াতে এতো জোস জোস ছেলে আছে!!
- তাহলে কি করতি😒😒 (শুভ্র)
শুভ্র ভাইয়ার প্রশ্নে পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। তাতে আমার কি! আমি তো বলেই যাব। হুহ! আবার নতুন উদ্যম নিয়ে বলা শুরু করলাম,
- তাই করতাম যা অন্য সবাই করতো!
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুচকে বললো, অন্য সবাই কি করতো!
তার অবস্থা দেখে বেশ হাসি পাচ্ছে। হাসি চেপে বললাম, কি আর করতো! তারিফ করতো! বাহ! দেখতে কি হেব্বি লাগছে, মন তো চাচ্ছে      
কথা শেষ হওয়ার আগেই শুভ্র ভাইয়া হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো। টানতে টানতে বাইকের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল, বস!
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম, আমার ফুসকা!
- থাপ্পড় খেতে না চাইলে বসে পড়! (শুভ্র)
রেগেছে রে! আরো রাগালে হীতে বিপরীত হয়ে থাপ্পড় সোজা গালে পড়বে তাই আর কিছু না বলে বাইকে বসে পড়লাম। মনে হেব্বি গান চলছে,, কাঁটা লাগা       
বাইক আপন গতিতে চলছে। হঠাৎ এক জায়গাতে বলে উঠলাম, থামুন! থামুন!
শুভ্র ভাইয়া আকস্মিক ব্রেক কষতেই আমি শুভ্র ভাইয়ার গায়ে বাড়ি খেলাম। তার মাতাল করা গায়ের গন্ধে শ্বাস যেন আটকে যায় যায়!
- এখানে কি করবি! (শুভ্র)
নিজেকে সামলে লাজুক হেসে বললাম, আসলে তাসিন ভাইয়া নোট কালেক্ট করতে তার বাসায় যেতে বসেছিল।
- তো! (শুভ্র)
- এই সামনেই তার বাসা।
- চল, আমি নিয়ে যাই (শুভ্র)
- না🔊🔊
- কি হলো! (শুভ্র)
- না মানে আপনাকে দেখলে নোট দিবে না।
- কেন😒😒 (শুভ্র)
- আপনি জানেন না মনে হয়! একা মেয়েদের ছেলেরা হেল্প বেশি করে।
- তাই নাকি! (শুভ্র)
- জি
আর কিছু না বলে বাইক থেকে নেমে পড়লাম। শুভ্র ভাইয়া কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে নিজের গন্তব্যে পাড়ি জমালো। শুভ্র ভাইয়ার যাওয়ার দিকে এক নজর তাকিয়ে নিজের গন্তব্যে হাঁটা ধরলাম।
এখন আসি পরিচয় পর্বে! আমি আরোহী রহমান আদাহ। আমার সাথে যে ছিলো তিনি আমার একমাত্র মামার একমাত্র ছেলে, শুভ্র। শুভ্র ভাইয়াকে আমি ছোট বেলার থেকেই পছন্দ করি, কিন্তু মহাশয় আমাচকে দামই দেন না। উল্টো কিছু বলতে গেলে সবার সামনেই অপমান করে। তাই ভেবেছি এখন থেকে আমি তার পিছে ঘুরবো না, উল্টো তাকে আমার পিছে ঘুরাবো। তাকে তো এটা মানতেই হবে যে, তিনিও আমাকে পছন্দ করেন। তা না করা পর্যন্ত তার উপর #লাভ_টর্চার চলতেই থাকবে। সো, গেট রেডি ফর আরোহী'স #লাভ_টর্চার, ডেয়ার!
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে জানালার ধারে দাঁড়াতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া বাসার ভিতরেই ঢুকছে। শুভ্র ভাইয়াকে দেখেই একটা ঢোক গিললাম। তিনি যদি বুঝে যে আমি তাকে মিথ্যা বলেছি তাহলে নিশ্চয়ই আমার বারোটা বাজাতে! না, আরোহী। তোকে কিছু ভাবতেই হবে! ভাবতে ভাবতেই রুমের দরজায় টোকা পড়লো। ছোট্ট জানপাখিটাকে হাতে নিয়ে ধীর পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। কি করব ভাবছি তার মাঝেই আবার টোকা! এই খাটাশটা আমাকে কিছুই ভাবতে দিবে না। হুহ! মনে এক বস্তা সাহস জুগিয়ে দরজা খুলতেই শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুচকে তাকালো। আমি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললাম,
- হ্যালো, ভাইয়া!
শুভ্র ভাইয়া এখনোও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। নিশ্চয়ই সন্দেহের ভূত তার মাথায় চেপে বসেছে। তিনি কিছু বলছেন না তাই নিজেই বললাম,
- আপনি এখন!
কোন ভণিতা ছাড়াই শুভ্র ভাইয়া বলল, কেন! আশা করিস নি!
আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা! কিন্তু আমিও আরোহী! মুখে দীর্ঘ হাসি টেনে বললাম,
- মোটেও না। এভাবে যখন তখন কারো বাসায় আসা মোটেও শোভনীয় না।
- এ কেমন কথা! দিন দিন তো দেখছি বেশ বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস!
শুভ্র ভাইয়ার পিছনে উঁকি দিতেই দেখলাম আম্মু কথাটা বলছে। ভুল সময়ে ভুল কথা বলেছি মনে হয়! 
আম্মু এগিয়ে এসে বলল, আমার বাড়ির লোক বলে এভাবে বলছিস! তোর বাবার পরিবারের হলে এটা বলতি না!
আম্মু সবসময় মনে করেন যে শুভ্র ভাইয়াকে না দেখতে পারার কারণ হলো উনি আম্মুর পরিবারের বলে! হাজার বুঝিয়েও এ কথা আম্মুর মাথা থেকে দূর করতে পারি নি। এখন তো বলতে পারি না যে, আপনার ভাতিজা আমার ইমোশনস বুঝে না, তাই কাট্টি! ছোটবেলা হলে ঠিকই বলে দিতাম! 
আম্মুর দিকে হাসোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে বললাম, পরিবার থেকে মনে পড়লো শান্ত ভাইয়া কি কালকে আসছে নাকি!
আমার কথায় শুভ্র ভাইয়ার কি মনে হয়েছে জানি না কিন্তু আম্মু রেগে বলল, তুই থাক তোর বাপের পরিবার নিয়ে!
কথাটা বলে হনহন করে চলে গেল। আম্মুর কান্ড দেখে হাসি আসছে প্রচুর কিন্তু হাসি তো ফাসি! তাই হাসি দমিয়ে বললাম, আসলে তাসিন ভাইয়াকে কল করেছিলাম। তিনি বললেন আমার মতো কোমল মানুষ এতো কষ্ট করে তার বাসায় যাবে, আবার নিজের বাসায় আসবে! তাই তিনি দু মিনিটেই বাইক নিয়ে হাজির হয়ে গেলেন। নোট তো দিলেনই, সাথে বাসায় ড্রপও করে গেলেন। ভালো না?
শুভ্র ভাইয়া মুখের চোয়াল শক্ত করে বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, খুব ভালো, অনেক ভালো, প্রচন্ড রকমের ভালো!
ভালোর এতো পদ হয় তা আমার জানা ছিলো না! ভালোই হলো জেনে নিলাম! পরে এটাও #লাভ_টর্চারে কাজে লাগাতে পারবো! হিহিহি!

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔 পর্বঃ ০২ 

ডাইনিং টেবিলে বসে শুভ্র ভাইয়াকে লক্ষ্য করে যাচ্ছি। তিনি যে বেশ রেগে আছে তা ভালোই বুঝতে পারছি। এই মুহুর্তে মুরগীর হাড়ের জায়গায় যদি আমি থাকতাম তাহলে তিনি বেশ মজা করেই চাবিয়ে চলতেন তা বেশ ভালোভাবেই টের পাচ্ছি। এসব অদ্ভুত ধরনের চিন্তা ভাবনা চালাচ্ছি এমন সময় আম্মু এসে বলল,
- কাজ কাম তো করিস না, একটু পানিটা যে ঢেলে দিবি টাও করিস না।
আম্মুর কথায় শুভ্র ভাইয়া চোখ তুলে তাকালো। কথাটা হয়তো তার বেশ পছন্দ হয়েছে। সে এখন অপেক্ষা করছে কবে আমি তার গ্লাসে পানি ঢেলে দিবো। কিন্তু আমি তো আমিই! তার মাথায় পানি ঢালার কথা হলে তাও মানা যেত, কিন্তু গ্লাসে পানি ঢালার বিষয়ে আমার বেশ অনীহা। তাই শুভ্র ভাইয়ার চিন্তা ভাবনায় পানি ঢেলে বললাম,
- জামাই বাসায় গেলে তো কাজ করতেই হবে! শুধু শুধু ভাইয়ের পিছনে কষ্ট করে কি লাভ!
আমার কথা শুনে শুভ্র ভাইয়া কাশতে লাগলো। আম্মু পানি এগিয়ে দিতেই এক ঢোকে পুরো গ্লাস শেষ করে আমার দিকে তাকালো। আম্মুও আমার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। নিজেকে সামলে বললেন,
- তোর মাথায় বিয়ে করার ভূত কবে থেকে আসলো!
আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। এরকম কিছু হবে তা আগে থেকেই জানতাম। তাই স্বাভাবিক ভাবেই  বললাম,
- প্রতিবার তো আপনিই বলেন তাই ভাবলাম, লেটস ট্রাই সামথিং নিউ!
কথাটা বলে ডাইনিং থেকে উঠে নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরলাম। পিছনে না তাকিয়েও বুঝতে পারছি যে কেউ আটশ আশি ভোল্টের ঝাটকা খেয়েছে। এখন তো কেবল শুরু আগে দেখো হোতা হে কেয়া! মুচকি হেসে নিজের রুমে ঢুকে দরজা দিয়ে উঁকি দিলাম। শুভ্র ভাইয়া এদিকে তাকাতেই মাথা ভিতরে নিয়ে নিলাম। আল্লাহ! একটুর জন্য বেঁচে গেছি!
শুভ্র ভাইয়া যেতেই রুমে থেকে বেরিয়ে এলাম। ড্রয়িং রুমে বসতেই আম্মু বলল,
- তুই এলওয়েজ ছেলেটার সাথে এমন করিস কেন বল তো! কবে ওর সাথে ভালো বিহেভ করবি!
- উনি যখন আমার সাথে ভালো বিহেভ করবেন তখন আমিও উনার সাথে ভালো বিহেভ করবো।
 বসে বসে মোবাইল টিপতে টিপতে আনমনে কথাটা বললাম। আম্মু ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলেন,
- ঐ তোর সাথে কি এমন খারাপ বিহেভ করলো!
আম্মুর কথায় টনক নড়লো। কি থেকে কি বলে ফেলি নিজেও বুঝি না! নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম,
- আপনি তো উনার কোন দোষ দেখবেনই না! সব দোষ শুধু আমার আর আমার বাপের, তাই না?
আমার কথাকে আম্মু পাত্তা না দিয়ে নিজের সাথে লেগে পড়লো। আমিও আমার কাজ মানে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। দুজনেই যখন নিজেদের কাজে ব্যস্ত তখন হঠাৎ করে কল বেজে উঠল।যদিওআমার মোবাইলে কল এসেছে, তবুও কিছুটা হরর হরর ফিল দিতে হয়, কারণ কলটা আমার বেস্টু, মেধার! আড়চোখে আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মুও আড়চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। না, এই মুহুর্তে উঠে নিজের রুমে যাওয়া সম্ভব না! কল না ধরলেও সন্দেহ করবে! তাই না পেরে কলটা রিসিভ করলাম। কলটা কানে নিতে মেধা গদগদ কন্ঠে বলল, 
- দোস্ত, তোর ক্রাশের খবর কি!
আমার খবর না জিজ্ঞেস করে আমার ক্রাশের খবর নেয়! বাহ! কি বেস্টু বানিয়েছি! সাব্বাস, আরোহী!
আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম আম্মু কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। আল্লাহ! এতো সন্দেহ তো কেউ খুন করলেও করে না!
হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে বললাম,
- ওহ, ক্লাস আছে!
- ঐ কানে বেশ শুনিস নাকি! আর ভূতের মুখে রাম রাম কিভাবে! পাশে কি কেউ আছে নাকি! (মেধা)
আমি আম্মুর দিকে তাকালাম। আড়চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখে চোখ পড়তেই বললাম,
- আম্মু, কালকে মফিজ স্যারের এক্সট্রা ক্লাস আছে, যাবো?
আসলে মফিজ স্যার নামে কোন স্যারই নেই! ঢোপ মারলাম! আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
- তোর মর্জি! গেলে যাবি না গেলে নাই!
- আমার আম্মুটা কতো ভালো!
- যা, মাখন মারতে হবে না!
মোবাইল কানে নিতেই মেধা বলল,
- তো আন্টি ছিলো পাশে!! (মেধা)
- কোনটা পারিস না এটা তো বল!
- আবার কি হলো! (মেধা)
- কতো অধ্যায়ের? আচ্ছা, রুমে গিয়ে দেখে কল দিচ্ছি, কেমন?
- তুই-ও পারিস! যা, রুমে গিয়ে কল করিস! (মেধা)
কল কেটে আম্মুকে বললাম,
- আম্মু, আমি রুমে যাচ্ছি!
কথাটা বলে আর অপেক্ষা করলাম না। দ্রুত পায়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলাম। মেধাকে কল করতেই ও রিসিভ করলো। ওকে কিছু বলতে না দিয়েই বললাম, 
- ঐ ছেমড়ি! এখন যদি অন্য কেউ কল রিসিভ করতো তাহলে কি হতো জানিস!
আমি রাগী স্বরে কথাটা বললেও মেধা শান্তভাবে বলল,
- কিছু তো না! কারণ, আমি নিঃশ্বাস শুনেই বুঝে ফেলি যে এটা তুই।
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
- কেন রে! আমি কি স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে আলাদা ভাবে নিঃশ্বাস নিই নাকি!
মেধা আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলল,
- এটা ভালবাসা, দোস্ত! ভালবাসা!
এভাবেই রেগে আছি ওর কথায় রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। রাগী ভাটা বজায় রেখে বললাম, 
- দেখ, দোস্ত! তোর আজিরা কথা শুনার জন্য আমার টাইম নেই! রাখি!
মেধা বাধা দেওয়ার কন্ঠে বলল,
- আরে! আরে! কথাটা তো শোন! তোর ক্রাশকে তোর সাথে মেলানোর প্লান করেছি!
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
- কি প্লান!
- হ্যাঁ, হ্যাঁ, এখন তো আমার কথা তোর মনে পড়বে! (মেধা)
- বলবি নাকি কল কাটবো!
- বলছি তো! এমন করিস কেন! (মেধা)
- বল!
- কালকে তোদের বাসায় শান্ত ভাইয়া আসবে, তাই না?
শান্ত ভাইয়া সম্পর্কে আমার ফুফাতো ভাই। নাম শান্ত হলেও প্রাণিটা একদম অশান্ত। বলে না, কেমন একটা চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা। তার ক্ষেত্রেও তাই। অজানা কারণে আমার সাথে তার সাপে নেউলে সম্পর্ক, যাকে সবাই ভাব মনে করার ভুল করে।
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
- হ্যাঁ, তো!
মেধা উৎসাহের জোয়ারে ভেসে বলল, তাহলে তো হলোই কাজ। শুভ্র ভাইয়ার সামনে শান্ত ভাইয়ার সাথে ভাব জমাবি!
ভাব, তাও শান্ত ভাইয়ার সাথে! ভ্রু কুচকে বললাম,
- দুনিয়াতে আর মানুষ পেলি না!
- দেখ, তোর কিছু করতে হবে না। তোদের দেখলেই মনে হয় বেশ ভালোই ভাব আছে! (মেধা)
- নাইস জোকস!
- দেখ, এদিকে তুই ভাব জমাবি আর ঐদিকে শুভ্র ভাইয়া জ্বলে পুড়ে কালা ভুনা হবে (মেধা)
- বুঝলাম!
- দোস্ত, শোন না! (মেধা)
- বল!
- ঐদিন রিভিউ দেখলাম কালা ভুনা পিজ্জা কিন্তু অনেক ইয়াম্মি! (মেধা)
- তো?
- তোর বিয়েতে কালা ভুনা পিজ্জা ট্রিট চাই (মেধা)
- গাও আভি বাসা নেহি, ওর লুটনে ওয়ালা হাজির!
- এভাবে বলতে পারলি! (মেধা)
- যা ভাগ! ফোন রাখ!
জীবনে আর কত কি যে করতে হবে আল্লাহ মালুম! শেষমেশ শান্ত ভাইয়ার সাথে ভাব! যাই হোক, এখন কথা হচ্ছে, কাল থেকে শুরু হবে #লাভ_টর্চারের প্রথম অধ্যায়      #Jealousy_Game!

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔 পর্বঃ ০৩ 

আমি ঘুম থেকে উঠলে মোটেও পাখির কিচির মিচির শব্দ শোনা যায় না। কেননা, আমি নবাব সিরাজউদ্দোলার বংশধর আই মিন বেলা করে উঠতে পছন্দ করি। কলেজ কোচিং না থাকলে তো কথাই নাই! আজও তার ব্যতিক্রম হলো না! আমি উঠতে উঠতে সূর্যিমামা মাথার উপরে উঠে গেছে। ঘুমাতে ঘুমাতে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছি তাই কিছুক্ষণ পড়ে পড়ে রেস্ট নিলাম। রেস্ট নিতে নিতেই আম্মুর ডাক পড়লো। কি আর করা! উঠে চলে গেলাম ওয়াসরুম। ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে ডুকতেই ভ্রু কুচকে বললাম,
- আপনি এখানে কি করছেন!
মানুষটা আর কেউ না, শুভ্র ভাইয়া! আমার কথা শুনে আম্মু রেগে বলল,
- ওর সাথে তোর এতো সমস্যা কেন বলতো! তোকে তো কিছু করে না।
করে না বলে বলে যে মাথায় উঠাচ্ছে তা বেশ ভালোই টের পাচ্ছি। কিন্তু এখন কিছু বলে লাভ নেই। তাই শুভ্র ভাইয়াকে বাদ দিয়ে সামনে তাকালাম। মামিমণি আর ফুপ্পিকে গিয়ে সালাম করতেই দুজন জরিয়ে ধরলো। দুই জনেই বেশ আদরের আমি। শুধু তাদের ছেলেগুলোই দুনিয়া ছাড়া। সবার সাথে কুশল বিনিময় করে শান্ত ভাইয়ার পাশে গিয়ে আরামসে বললাম। মুখে দীর্ঘ হাসি টেনে বললাম,
- হোয়াটস আপ, ভাইয়া?
শান্ত ভাইয়া বসা অবস্থায়ই চেহারা কিছুটা দূরে সরিয়ে আমাকে বেশ ভালো মতো পর্যবেক্ষণ করলো। তারপর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
- তুই যাই-ই বলিস না কেন, বর্তমান জিএফের নিম আমি বলছি না! প্রতিবার কিভাবে জানি ব্রেকআপ করিয়ে দিস!
আমি রেগে শান্ত ভাইয়ার কানের কাছে গিয়ে বললাম,
- কি করব বলো! তোমার চেহারা দেখলেই আমার ব্রেকআপ করাতে ইচ্ছে করে!
শান্ত ভাইয়া আবার আমার কানের কাছে এসে বললো,
- আমার চেহারা বুঝি অনেক সুন্দর, তাই অন্য কাউকে সহ্য হয় না! 
ভ্রু নাচিয়ে কথাগুলো বলল শান্ত ভাইয়া। এ মানুষটার সাথে ভাব কিভাবে সম্ভব তাই বুঝি না। রেগে ফিসফিস করে বললাম,
- হ্যাঁ, অনেক সুন্দর! একদম বাটখারার মতো!
আমাদের ফুসফুসানি শুনে ফুপ্পি বলল,
- এসেই শুরু হয়ে গেছে। এদের কথার জ্বালায় আমরাই কোন কথা বলতে পারি না।
মামিমণি সঙ্গ দিয়ে বলল,
- এদের একজন আরেকজনকে পেলে আর কাউকে লাগে না! কবে যে শুভ্র আর আরোহীর এমন সম্পর্ক হবে!
কথাটা বলেই আফসুস করলো মামিমণি। আমরা কি কথা বলছি তা শুনলে নিশ্চয়ই দুজন হার্টফেল করতো! কথাটা ভাবতে ভাবতে শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম তিনি রাগে বোম্বাই মরিচ হয়ে আছে। তাকে দেখে মনে গান বাজছে, সোয়ান মেহ লাগ গায়ি আগ থুক্কু শুভ্র কি দিল মেহ লাগ গায়ি আগ!! গানটায় ডান্স দিতে পারলে বেশ ভালো হতো! মনের ইচ্ছা অপূর্ণ রাখতে হয় না, তাই রুমের দিকে পা বাড়ালাম। রুমে গিয়ে গান ছেড়ে উরাধুরা ডান্স করছি! হঠাৎ করে কেউ গান অফ করে দিলে রাগী চোখে তাকাতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া দাঁড়িয়ে! নিজে তো জ্বলবেই, মানুষকেও জ্বালাবে! রাগীভাব বজায় রেখে শুভ্র ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললাম, 
- গান অফ করলেন কেন!
শুভ্র ভাইয়া আমার সে কথার পাত্তা না দিয়ে বলল,
- তোর এতো খুশি আসে কোথা থেকে!
আহা! কষ্ট কষ্ট ফিল পাচ্ছি! মুখে হাসি টেনে বললাম,
- মন থেকে, ভাইয়া!
শুভ্র ভাইয়া রেগে অগ্নিশিখা হয়ে বলল,
- একজন রেগে আছে আর তুই খুশিতে ডান্স করছিস!
আব আয়া লাইন পে! বোকাসোকা ভাব নিয়ে বললাম, 
- কে রেগে আছে, ভাইয়া!
শুভ্র ভাইয়া অন্যদিকে মুখ করে বলল,
- কে রাগবে! কেউ না!
ভাঙবে কিন্তু মুচরাবে না! কি আর করার! যত পর্যন্ত শিকার না করবে তত পর্যন্ত #লাভ_টর্চার চলতেই থাকবে! মনে মনে ভাবছি এমন সময় শান্ত ভাইয়া এসে হাজির! শুভ্র ভাইয়াকে পাত্তা না দিয়েই বলল,
- রুহী, ছাদে চল তো! তোর সাথে দরকারী কথা আছে!
শান্ত ভাইয়ার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে! মনে মনে নিশ্চয়ই শান্ত ভাইয়ার গোষ্ঠী উদ্ধার করছে! করুক, তাতে আমার কি! আমি শান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
- চলো তাহলে!
শুভ্র ভাইয়া হয়তো সাথে যেতে চাইছেন! কিন্তু তিনি কিছু বলার আগেই ছাদের জন্য পা বাড়ালাম। ছাদের রিলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি! শান্ত ভাইয়া কিছু বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গলা পরিষ্কার করে বললাম,
- আচ্ছা, মেয়েরা কি পছন্দ করে বলতো!
উনি কি আমার থেকে টিপস চাচ্ছে! অবাক হওয়ার ভান করে বললাম,
- তুমি আমার থেকে টিপস চাচ্ছো! যে ঘন্টায় ঘন্টায় মেয়ে পটাতে পারে সে আমার কাছ থেকে টিপস চাচ্ছে! যার মাসে মাসে নতুন নতুন গার্লেফ্রেন্ড ধরে সে আমার থেকে টিপস চাচ্ছে!
আমার কথা শুনে শান্ত ভাইয়া ভ্রু কুচকে বললো,
- তুই কি আমার তারিফ করছিস নাকি ইজ্জত দিচ্ছিস!
আমি ভাব দেখিয়ে বললাম,
- এটাকে ম্যাক্স প্রো তারিফ বলে!!
শান্ত ভাইয়া ভ্রু কুচকে বলল,
- তুই ভালো করেই জানিস আমার ব্রেকআপের কারণ একমাত্র তুই! তোর জন্যই আমার কোন রিলেশন টিকে না, বলতে গেলে টিকতে দিস না! আচ্ছা, আমার প্রেম টেমে পড়লি নাকি বলতো!
- কি মনে হয়!!
ভ্রু নাচিয়ে কথাটা বলে উল্টো পথে হাঁটা ধরলাম। একটু সামনে এগুতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া রক্ত লাল চোখে তাকিয়ে আছে। হাতের মুঠো দুটো শক্ত! শান্ত ভাইয়ার কথা সিরিয়াসলি নিলো নাকি! নিলে নিক! এখন তো #লাভ_টর্চার কেবল শুরু!
সন্ধ্যা হতেই নিধিপি এসে হাজির! আমার একমাত্র খালার একমাত্র মেয়ে হলো নিধিপি! বয়সে শুভ্র আর শান্ত ভাইয়ার সমবয়সী! নিধিপির আম্মুকে আমি বড়আম্মু বলে ডাকি! বড়আম্মু যদিও আসে নি, তবে নিধিপি লাফিয়ে লাফিয়ে চলে এসেছে। আসলে আমাদের গেট টুগেদার করতে কোন কারণ বা সময় লাগে না। একজন আসলে তার সাথে সাথে পিপড়ার মতো সবাই হাজির হয়ে যায়! তবে এর জন্য ফেরোমন না, মনের টান লাগে!
নিধিপি আসতেই সবাই বসে পড়লাম লুডুর কোর্ট নিয়ে! চারজন একসাথে থাকলে লুডুর মতো মজার খেলা আর নেই! একে একে সবাই চালা শুরু করলাম। তবে শান্ত ভাইয়ার গুটি শুধু খাওয়াই যাচ্ছে! এটা নিয়ে তিনি বেশ বিরক্ত! এদিকে আমি একটুর জন্য জিতবো জিতবো বলে! হঠাৎ শান্ত ভাইয়া লুডুর কোর্ট উল্টিয়ে বলল,
- আর খেলবো না!
তার কাজ দেখে মন চাচ্ছে মঙ্গল গ্রহ থেকে ইট এনে তার মাথায় মারি! কিন্তু আমার যে ভাব জমাতে হবে। এরকম পরিস্থিতিতে ভাব কিভাবে জমায় তা আমার জানা নেই! তাই সেখান থেকে উঠলে উঠতে বললাম,
- হ্যাঁ, শান্ত ভাইয়া যা বলেছে তাই! আর খেলা হবে না!
আমার কথায় শান্ত ভাইয়া শকড! তিনি নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন যে এতক্ষণে তার মাথা থেকে চুলের খানদান সাফা হয়ে যাবে। কি ভেবে জানি বলল,
- না, না, খেলবো! রুহী, সবাইকে গুটি দে!
কথাটা বলে আমাকে তার পাশে বসালো! কানে ফুসফুস করে বলল,
- বইন, প্লিজ আমার গার্লেফ্রেন্ড আর ভাগাইস না! এভাবে যেতে থাকলে পরে চিরকুমার হয়ে মরতে হবে!
আল্লাহ! আমি ভাবলাম কি আর হলো কি! যাই হোচ, সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য বললাম, 
- আমার শান্ত ভাইয়া কতো ভালো! চো চুইট!
আমার কথায় শান্ত ভাইয়ার কিছু না গেলেও শুভ্র ভাইয়ার বহুত কিছু গিয়েছে! এই মুহুর্তে তিনি রাগি চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। শুভ্র ভাইয়ার দহন মুভিতে আমার জ্বলার কোন শখ নেই। তাই বললাম,
- তোমরা গুটি ঠিক করো, আমি খাওয়ার জন্য কিছু নিয়ে আসছি!
কথাটা বলেই দে দৌড়! সোজা চলে এলাম কিচেনে! কিন্তু সেখানে এসেও খুব একটা লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। কেননা, আমার সাথে সাথে শুভ্র ভাইয়াও এসেছে। তাকে পাত্তা না দিয়েই আমি কিচেনের জিনিসপত্র উল্টাতে শুরু করলাম। কি বানাবো তাই ভাবছি। আমাকে জিনিসপত্র উল্টাতে দেখে শুভ্র ভাইয়া বলল,
- তোর মতো অকর্মাকে দেখে মনে হয় না কিছু বানাতে পারিস!
কি! আমি অকর্মা! একটু রাঁধতে পারি না বলে এই কথা বললো! ভাব নিয়ে বললাম,
- আমি নুডুলস বানাতে পারি, ওকে? অমলেটও করতে পারি, যদিও মাঝে মাঝে সেটা টুইন টাওয়ারের মতো ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, তা কোন ব্যাপার না, এটাও একটা প্রতিভা! এছাড়া, কফিও বানাতে পারি! হুহ!
আমার কথা শুনে শুভ্র ভাইয়া হাসতে হাসতে বেহুশ প্রায়। মনে হচ্ছে কেউ লাফিং গ্যাস সামনে ধরে রেখেছে। কিছুক্ষণ হাসার পর বললো,
- এসব বাচ্চারাও পারে! এখন সর এখান থেকে, আমি কিছু বানিয়ে দিচ্ছি। পরে রাঁধতে গিয়ে হাত পা পুড়লে কেঁদে মরবি! তার চেয়ে ভালো আমিই কিছু করে দিই!
- কি চলছে এখানে!
শান্ত ভাইয়ার কন্ঠ শুনে টুপ করে মাথায় আইডিয়া হাজির! মুখে দীর্ঘ হাসে টেনে বললাম,
- আপনার এতো কষ্ট করতে হবে না। শান্ত ভাইয়া বেশ ভালো রাঁধতে জানে। তিনি থাকতে আমার কষ্ট করার কি প্রয়োজন!
আমার কথা শুনে শান্ত ভাইয়া ভ্রু কুচকে বলল, 
- আমি ভালো রাঁধতে  জানি?
আমি আবেগাপ্লুত কন্ঠে বললাম,
- এখন তারিফ করছি তাও নিতে চাইছেন না! দেখছেন, এতো মহৎ তিনি!
শান্ত ভাইয়া বিড়বিড় করে বলল,
- এটা শুধুমাত্র তারিফ না, এটা ম্যাক্স প্রো তারিফ!
এদিকে শুভ্র ভাইয়ার চেহেরা দেখার মতো! রাঁধতে গিয়ে নিজেই তেলে বেগুনে জ্বলছে। শেষে সহ্য করতে না পেরে কিচেন থেকে বের হয়ে গেল। শুভ্র ভাইয়া যেতেই শান্ত ভাইয়া বলে উঠলো,
- তুই জেনেশুনে আমার অপমান করছিলি, তাই না? তুই ভালো করেই জানিস যে, আমি রাঁধতে পারি না। এমনকি চুলাও জ্বালাতে পারি না।
এই পোলা সবসময় উল্টোই বুঝে! রাগি ভাব নিয়ে বললাম,
- এভাবে বলছো যেনো কি মহৎ কাজ করে ফেলেছো! এমন হলে কপালে বউ জুটবে বলে মনে হয় না!
শান্ত ভাইয়া জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
- বউ জুটবে না কেনো! আর আমারই বা রাঁধতে হবে কেনো!জানিস না, সংসার সুখে হয় রমণীর গুনে!
তার কথা শেষ হতেই বললাম,
- যদি থাকে গুনবান পতি তার সনে! আর একটা কথা! অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী! সুতরাং, পুরোটা জেনেই কিছু বলতে এসো, কেমন?
Continue                  
(কেউ কেউ মনে হয় প্রথম পার্টে রোদ আপুর গল্পের আভা পাচ্ছে, তবে থিমটা কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন! আমি নিজেও রোদ আপুর গল্প পড়ি! সুতরাং, ভুলবশত আভা পড়তেই পারে, তার জন্য আমি দুঃখিত। সবাই রোদ আপুর গল্পকে এতোটা ভালবাসেন দেখে আসলেই আমি খুশি, আমি নিজেও রোদ আপু ও তার গল্পকে অনেক ভালবাসি! একটা লেখিকা হিসেবে জানি যে একটা গল্প লেখতে কতোটা চেষ্টা আর শ্রমের প্রয়োজন হয়, সেই সাথে আমার নিজের অনেকগুলো গল্প চুরি হওয়ায় জানি গল্প কপি হলে কেমন লাগে! সুতরাং, অন্য রাইটারের চেষ্টা আর শ্রম চুরি করার ইচ্ছা আমার মোটেও নেই, আর তা যদি হয় রোদ আপুর! তাহলে তো কখনই না। আর এই ব্যাপার শুভ্র নামটার, এটা হুমায়ুন স্যারের আইকনিক ক্যারেক্টার, সাথে রোদ আপুও! আমি দুজনের লেখাই পছন্দ করি। তবে এই নামে আর কোন গল্প লেখা যাবে না তা তো কোথাও লেখা নেই! আমি ইতিমধ্যে পাঁচটা গল্প লেখেছি যেখানে শুভ্র আরোহীর জুটি আছে! এটা নিয়ে ছয় নম্বর হবে! পাঠকরা পছন্দ করেছিল বলেই কন্টিনিউ করতে পেরেছি! আর এই ব্যাপার কাজিন হওয়ার বর্তমানে কাজিনদের প্রেম নিয়ে অনেকেই লিখেছেন। এমন কি আমার নিজের কাজিনদেরও লাভ ম্যারেজ হয়েছে। প্রথম পার্টটায় সমস্যা হয়েছে বলে তা কিছুটা এডিট করেছি, এখন মনে হয় না কোন সমস্যা হওয়ার কথা। তবুও যদি কোথাও আভা থাকে তাহলে বিষয়টি জানাবেন। শুভ্র কাজিন হলেই যে কপি হবে তা তো সত্যি নয়, তাই না? তবে কোথাও যদি মনে হয় যে এটা কপি, তাহলে বিষয়টি আমাকে জানাবেন, তবে অবশ্যই তা প্রুফসহ! তাহলেই আমি বিষয়টা বুঝতে পারবো আর তার সমাধান করতে পারবো। আশা করি, বিষয়টি বুঝেছেন! আর হ্যাঁ, আমার গল্পটাকে এতো এতো ভালবাসা দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ! আপনাদের ভালবাসাই তো লেখিকার অনুপ্রেরণা, তাই না? তাই অবশ্যই গল্প সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানাবেন, তা হোক ভালো কিংবা মন্দ! তবে অবশ্যই তা গঠনমূলক হতে হবে যাতে আমি তা থেকে কিছু শিখে ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু গল্প আপনাদের উপহার দিতে পারি। ভালবাসা রইলো সকলের জন্য❤)

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔 পর্বঃ ০৪ 

খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার জমছে খেলা শুরু হলো! টানটান উত্তেজনায় মধ্যেও আগের বারের মতো এবারো শান্ত ভাইয়ার হারার পথে! শেষমেশ হেরেই তিনি শান্ত হলেন। খাওয়ার সময় কথা হয়েছিল যে, যে হারবে সে ট্রিট দিবে! এখন কথানুযায়ী শান্ত ভাইয়াকে আমাদের সবাইকে ট্রিট দিতে হবে! তবে এখন রাত হতে চলেছে বলে কালকে তা দেওয়া হবে বলে  সবাই যার রুমে চলে গেল। তবে নিধিপি আমার রুমেই থাকবে, তাই সারারাত দু বোন আড্ডা দিয়েই কাটিয়ে দিলাম।
সকাল সকাল হতেই ঘুমের বারোটা বাজানো শুরু! আমিও উঠেই পড়লাম। আমি আবার তাওহিদ আফ্রিদির মতোই ফ্রি খাবার মিস করতে চাই না। রেডি হয়ে বাসার বাইরে চারজন মিলে দাঁড়ালাম। চিন্তার বিষয় কি খাওয়া যায়! শান্ত ভাইয়া কথাটা জিজ্ঞেস করতেই ফটাফট বলে উঠলাম,
- ফুচকা!
কথাটা বলতেই একটা ঢোক গিললাম। শুভ্র ভাইয়া আমার দিকে রক্তচক্ষুতে তাকিয়ে আছে যেন আমি ফুচকা না, বরং তার মাথা খেতে চেয়েছি! হায়রে আমার ফুচকা! তোকে আর খাওয়া হলো না! মনের মধ্যে কথাটা ভেবেই আফসুস করছি!
রেস্টুরেন্টে বসে খাবারের ওয়েট করছি এমন সময় হঠাৎ একটা মেয়ে এসে শুভ্র ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরল। তাদের মিলন মেলা দেখা আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। মন তো চাচ্ছে সামনের গ্লাসের পুরোটা পানি মাথায় ঢেলে দিই! চিন্তা নাই, একদিন সুযোগ পেলে ঠিকই ঢেলে দিবো! হুহ! আর মাইয়া তো মাইয়াই! আমার কাজিন হয়ে কোনদিন জরিয়ে ধরলাম না, আর এই মাইয়া কিভাবে চিপকে আছে! শাকচুন্নী কোথাকার! শুধু শাকচুন্নী কেন! মাছচুন্নী, মাংসচুন্নী, ডিমচুন্নী, সবচুন্নী! আটা-ময়দার বস্তা! বিলেতী ইন্দুর কোথাকার! দেখো, এখনো ছাড়ছে না! শেষে সহ্য করতে না পেরে বললাম,
- উহুম! উহুম! এটা পাব্লিক প্লেস, কারো বেডরুম না!
মেয়েটা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে কড়া কন্ঠে বলল,
- আমার জানকে আমি ধরেছি! কার কি আসে যায়!
জান! কার জান! কিসের জান! তাহলে কি এই ধলা বিলাইয়ের জন্যই সাদা বিলাই আমাকে ইগনোর করতো! আম্মুউউউউ! এ খেলা খেলবো নট! মন চাচ্ছে জোরে জোরে চিৎকার করে কান্না করি! কিন্তু আমার কান্না দেখার কে আছে! সব তো ঐ বিলেতী ইন্দুরে!
শুভ্র ভাইয়া এবার মুখ খুললো! হাসি মুখে বলল,
- আসলে কাছের বন্ধু তো, তাই জান প্রাণ ডাকে! আসলে তেমন কিছুই নেই!
কতো কাছের তা তো দেখতেই পারছি! আর কি ডাকে! জান! প্রাণ! ঝাড়ু-জুতা ডাক! না, আরোহী! তুই হার মানবি না। এই ঝাড়ু আর জুতাকে তুই উচিত শিক্ষা দিবি! অবশ্যই দিবি! মুখে হাসি এঁকে বললাম,
- আহা! কি বন্ধুত্ব! দেখে প্রেম প্রেম ফিল আছে!
শুভ্র ভাইয়া আমার কথাকে পাত্তা না দিয়ে ঐ মেয়েটির সাথে ব্যস্ত হয়ে গেল। এভাবে হাসছে যেনো না হাসলে দুনিয়া শেষ হয়ে যাবে। মনে হচ্ছে, তার মাথায় কেউ বন্দুক দিয়ে বলছে, হাস! না হইলে গুলি করুম!
রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে বাসায় ঢুকতেই ভ্রু কুচকে তাকালাম। আমার বেস্টু সোফায় বসে মোবাইল টিপছে। নিজের বাসায় নিজের দাম নাই, আর বেস্টু বসে বসে ফোন টিপে। কি এক কপাল! যাই হোক, দেখা উচিত কি করছেন তিনি!
- ঐ! কি করিস এখানে!
আমার কথা শুনে বেস্টু মোবাইলের থেকে মুখ তুলে তাকালো। ভ্রু কুচকে বললো, 
- তোর বাসায় কেউ বেড়াতে আসলে এমন বিহেভ করিস!
বেস্টুরা কোনদিন সোজা কথা বুজে না। রেগে বললাম, 
- বলবি কি করছিস নাকি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করবো!
- বাসায় আসা মেহমানের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে! 
আম্মুর কন্ঠে পিছনে তাকালাম। খাবারের ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আম্মুর কথা শুনে ভ্রু কুচকে বললাম, 
- মেহমান! আর এই!
বেস্টুর কাছে গিয়ে ওকে দাঁড় করলাম। ডানে বামে সামনে পিছনে ভালো করে দেখে বললাম, 
- কোন এঙ্গেল দিয়ে একে মেহমান মনে হয়!
আম্মু টেবিলে খাবারের ট্রে রেখে রাগী মুখে বললো, 
- খুব বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস! এখন তোকে বিয়ে দিয়েই শান্তি হবো!
বিয়ে দিয়ে দিবে তা আমার আম্মুর রোজকার ডায়লগ। তাই সেটাকে গ্রাহ্য না করে বেস্টুকে বললাম, 
- এখানে বসে কি বড়দের পেঁচাল শুনবি নাকি! চল আমার রুমে।
কথাটা বলে বেস্টুর হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেলাম। ওকে আমি বেস্টু বললেও মেধা আমার বোনের চেয়ে কম না, বরং বেশিই! মুখে যাই বলি না কেন, প্রতিটা কিছুতে ওকে আমার চাই-ই চাই। আর আমাদের চৌদ্দ গোষ্ঠী আমাদের ব্যাপারে বেশ ভালো করে জানে, বিধায় একে অপরের বাসায় পড়ে থাকলেও কেউ কিছু বলে না।
রুমে এসে দরজা লক করে খাটে বসে পড়লাম। বড় একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলাম। তারপর মেধার দিকে তাকিয়ে বললাম, সত্যি করে বল তো কেন এসেছিস! আমি তোকে বেশ ভালো করেই চিনি, বুঝেছিস! আমি না থাকলে যে তুই ভুলেও এ বাড়িতে পারা দিবি না তাও জানি। তো তোতাপাখির মতো ফটাফট সত্যিটা বলে ফেল যে, কি করতে এসেছিস!
মেধা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল, তোর কি আসলেই মনে হয় যে তুই মরলে আমি আংকেল, আন্টির খোঁজ নিতে আসবো না! এভাবে বলতে পারলি তুই! বহুত কষ্ট পেয়েছি, বহুত!
বেস্টু সম্প্রদায় মানেই এটা! ভদ্র ভাষায় কিছু বুঝে না। মাঝে মাঝে গালি দিতে মন চায়। কিন্তু কি আর করার! আমি তো গালি দিই না। সো, এই চিন্তাটা ড্রেনে ফেলে দিয়ে নিজেকে শান্ত করে বললাম, 
- দেখ, বইন। আমি স্লেং ইউজ করি না তাই তুই বেঁচে গেলি। এখন যদি সোজাসুজি না বলিস তাহলে আমাকে বাধ্য হয়ে গুগল থেকে খুঁজে গালির রেকর্ড ডাউনলোড করতে হবে! তুই তো জানিস, গুগলকে খাটাতে আমার বেশ ভালো লাগে!
- এভাবে বলতে পারলি তুই! (ঠোঁট উল্টিয়ে)
এভাবেই রেগে আছি, তার উপর এর ঢং দেখে মেজাজ আরো বিগড়ে যাচ্ছে। রেগে বললাম, 
- বলবি তুই!
মেধা কাঁচুমাচু করে বলল,
- জিজ্ঞেস করছিলো যে, তুই কাউকে ভালবাসিস নাকি!
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
- তুই কি বললি!
মেধা মুখে দীর্ঘ হাসি এঁকে বলল, 
- আমার আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে শুভ্র ভাইয়ার কথা বলবো! বললাম, ওর মতো দুনিয়াতে মেয়ে হয় না! আসলেই হয় না। আর এতো ভালো যে বলতেই পারবো না! আসলেই বলতে পারবো না।
আমি ভ্রু কুচকানোকে গাঢ় করে বললাম,
- তুই তো বেশ বুদ্ধিমান প্রাণী হয়ে গিয়েছিস!
মেধা আবেগাপ্লুত হয়ে বলল,
- দোস্ত, তোর মুখে নিজের তারিফ শুনে এখন আমার কান্না চলে আসছে। আয়, দোস্ত! বুকে আয়!
- যা, সর! কথায় কথায় জড়াজড়ি শুরু করে! 
আমার কথায় মেধা মুখ ফুলালো! কিন্তু আমার চিন্তা অন্যদিকে। আম্মু আমার পছন্দের কথা জিজ্ঞেস করলো কেন? কি চলছে আম্মুর মাথায়! না, আমাকে জানতেই হবে যে আম্মুর মাথায় কি খিচুড়ি পাকাচ্ছে!
মেধার সাথে কথা বলে বসার রুমে আসতেই রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে! মাইয়াটার সাথে এভাবে চিপসে বসে আছে যেনো অমূল্য রত্ন, সরে গেলেই তা চুরি হয়ে যাবে! মেয়েটার দিকে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললাম,
- তো ঝাড়ু! 
সবাই আমার দিকে তাকাতেই একটা ঢোক গিললাম। কি থেকে কি বলে ফেলি তার তালই পাই না! মুখে হাসিটা বজায় রেখে বললাম,
- রুমটা কতো ময়লা হয়ে গেছে! ঝাড়ু দেওয়া দরকার!
আম্মু ভ্রু কুচকে বলল,
- ভূতের মুখে রাম রাম কিভাবে! আর কোথায় ময়লা দেখছিস!
ময়লা! ময়লা তো শুভ্র ভাইয়ার মনে আছে! এভাবে চিপকাতে হয় নাকি! আম্মু আমার দিকে এখনো ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে দেখে ঢোক গিলে বললাম,
- না মানে ঝাড়ু দিতে মন চাইলো      
কথা শেষ হওয়ার আগেই শান্ত ভাইয়া বলল,
- ঝাড়ু দিতেও মন চায় জীবনে প্রথম শুনলাম! ঝাড়ুদার হওয়ার শখ ঝাড়লো নাকি!
আমি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলল,
- মন এখন পাল্টে গিয়েছে। এখন ঝাড়ু দিতে না, ঝাড়ু দিয়ে পিটাতে মন চাইছে!
শান্ত ভাইয়া কিছু বলবে তার আগেই নিধিপি বলল, 
- বর্তমানে ঝাড়ুদাররাও অনেক কিউট হয়! হায় ম্যা মারজাবা!
নিধিপির কথায় ভ্রু কুচকালাম! এই মাইয়া যার তার উপর ক্রাশ খায়! না জানি রায়হান ভাইয়া একে কিভাবে সামলায়! আমাদের চাহনী দেখে নিধিপি বিষম খেলো। নিজেকে সামলে জোরপূর্বক হেসে বলল,
- না মানে বিদেশী একটা মুভিতে দেখেছিলাম নায়ক ঝাড়ুদার সাজে! তাই বলছিলাম আরকি!
কথাটা বলেই হাত মুচরাতে লাগলো। সবাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিধিপিকে দেখলেও পরক্ষণেই ভূবন কাপানো হাসতে মেতে উঠলো। নিধিপি প্রথমে না বুঝলেও পরে বুঝতে পেরে নিজেও সে হাসিতে যোগ দিলো।
বিকেল গড়িয়ে আসতেই রিয়া বাসায় পৌঁছানোর জন্য তাড়া দিলো। রিয়া হলো সেই ঝাড়ু থুক্কু শুভ্র ভাইয়ার অতি কাছের বন্ধুর নাম। এদিকে শুভ্র ভাইয়া জোর করলো তিনি নাকি তাকে বাসায় পৌঁছে দিবে, তাও আবার বাইকে। এখন ভেবেন না যে আমি জ্বলছি! আসলে এই করোনার যুগে বাইকে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসা মোটেও নিরাপদ না। তাই আর কি করা, বাইকের টায়ার পানচার করার কাজে লেগে পড়লাম। হিজাবের পিন দিয়ে টায়ার পানচার করছি এমন সময় পিছন থেকে কেউ খোঁচা দিলো। বিরক্ত হয়ে বললাম,
- দেখছো না, টায়ার পানচার করছি!
কিন্তু সেই ব্যক্তি দমে যাওয়ার পাত্র নয়, তাই আবার খোঁচা দিলো। রেগে পিছনে তাকাতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললাম,
- কি অবস্থা, ভাইয়া?
শুভ্র ভাইয়া কুঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে বলল,
- আমার অবস্থা তো ভালোই! কিন্তু তোর অবস্থা মনে হচ্ছে না ভালো! কি করছিলি?
আনমনেই বলে উঠলাম,
- টায়ার পানচার!
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
- কি!
এবার আমার হুস আসলো। নিজেকে সামলে বললাম, 
- একটা মানুষ টায়ার পানচার করছিলো!
- আর সেই মানুষটা নিশ্চয়ই তুই! (শুভ্র)
মুখে দীর্ঘ হেসে এঁকে বললাম,
- জি।
- ও এম জি! টায়ার পানচার হলো কিভাবে?
পিছন থেকে এগিয়ে এসে রিয়া কথাটা বললো। শুভ্র ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
- জ্বলতে জ্বলতে শেষে না পেরে বাঁধ ভেঙ্গে ফেলেছে!
শুভ্র ভাইয়ার কথার কিছুই বোধগম্য হলো না। তবে আমি খুশি যে, এই করোনার যুগে কেউ আর ঘেঁষাঘেঁষি করবে না।

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔 পর্বঃ ০৫ 

শুভ্র ভাইয়া একটু বেশিই উড়ছে, তাকে ঠিক করতেই হবে! শুভ্র ভাইয়া, তোমার উল্টো গিনতি শুরু! রুমে যেতে যেতে কথাগুলো মনে মনে বললাম। তবে তার আগে নিজেকে একটু রিল্যাক্সড করা দরকার তাই রুমে এসেই ঘুম দিলাম। সকাল সকাল উঠার সাইড এফেক্ট এটা!! ঘুম থেকে উঠতেই দেখি সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। তবে পুরো বাড়ি শান্ত কিভাবে? তাও আবার শান্ত ভাইয়া থাকাকালে!! আল্লাহই জানে যে, কে এই অশান্ত পোলার নাম শান্ত রেখেছে। আমি যদি তখন থাকতাম তাহলে এ ঘোর অপরাধ কখনোই মেনে নিতাম না। আর শুভ্র ভাইয়ার খবর কি!! তিনি কি চলে এসেছে নাকি ফ্যায়রি ট্যালের ডাইনির মতো ঝাড়ু নিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে! নিচে গিয়ে দেখা দরকার! ফ্রেশ হয়ে সিড়ির কাছে আসতেই দেখি শান্ত ভাইয়া হলরুমে বসে লেপটপ দিয়ে কিছু একটা করছে। কিন্তু কি করছে? এটা তো গিয়েই দেখতে হয়। সিড়ি থেকে নেমে ধীর পায়ে শান্ত ভাইয়ার কাছে গিয়ে হালকা গলায় বললাম,
- কি করছো?
শান্ত ভাইয়া একবার ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে ঘুরে নিজের কাজে লেগে পড়লো। এই মুহুর্তে উনার সাথে ঝগড়া করার মুড নেই তাই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম। কিন্তু মাঝপথেই বাধা দিয়ে শান্ত ভাইয়া বলল,
- তোর সাথে একটা দরকারী কথা ছিলো! 
দরকারী কথা ছিলো        বলে পাঁচ মিনিট যাবৎ খাম্বার মতো দাঁড়া করিয়ে রেখেছে। না আছে কোন কথা, না আছে কোন বার্তা। এ কারণেই এই লোকটাকে আমি দেখতে পারি না। যখনই দেখা হয়, তখনই জ্বালিয়ে খায়। কেন যে উনার কথা শুনতে গেলাম, আল্লাহ মালুম। মন তো চাচ্ছে মাথা ফাটিয়ে দিই, কিন্তু কি করি বলুন? আমি তো সবার মতো নির্দয় না, তাই ছেড়ে দিলাম। যা জিলে আপনি জিন্দিগি। কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানে হয় না তাই বললাম,
- তোমার কথা তোমার কাছেই রাখো! একটা মাসুম বাচ্চাকে এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখতে লজ্জা লাগে না! মায়া দয়ার অংশবিশেষও তোমার মাঝে নেই! যদি এক বিন্দুও থাকতো তাহলে আমি ধন্য হয়ে যেতাম। গলা ছেড়ে গাইতাম,
ধন ধন্য পুষ্পে ঘেরা,
আমাদেরই শান্ত ভাইয়া।।
শান্ত ভাইয়া আমার গানকে পাত্তা না দিয়ে বলল,
- নিজে যেমন আজিরা তেমন কথাও বলিস আজিরা! এখন আজিরা পেঁচাল বাদ দিয়ে আমার কথা শুন!
ভ্রু কুচকে বললাম,
- এতক্ষণ যাবৎ তো মনে হয় উগান্ডায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তাই না?
- তোর মতো মানুষ উগান্ডায়ও ঠাঁই পাবে না! (শান্ত)
- তোমার মতো মানুষ তো পাবে! যাও, ভাগো!
শান্ত ভাইয়া এবার কাঁচুমাচু করে বলল,
- শোন না!
এবার আমার মুখে বিজয়ের হাসি! ভ্রু নাচিয়ে বললাম,
- কি!
শান্ত ভাইয়া কাঁচুমাচু করেই যাচ্ছে। তার কাঁচুমাচু দেখে এখন বিরক্তি লাগছে। রেগে বললাম,
- না বললে ফুটো!
শান্ত ভাইয়া এবার নিজেকে শক্ত করল। আমার চোখে চোখ রেখে বলল,
- আ-ম ইন লাভ!
ভ্রু কুঁচকে বললাম,
- এটা কি নতুন কিছু ছিলো!
শান্ত ভাইয়া হালকা রেগে বলল,
- শুনবি!
- বলো!
- এখন টিপস দে! তখন ফাজলামি করে বললেও এখন কিন্তু সিরিয়াস! আমি টিপস চাই মানে চাই! কেননা আমি জানি, এক্ষেত্রে তোর থেকে ভালো টিপস কেউ দিতে পারবে না!
ভ্রু কুঁচকে বললাম,
- তোমার কি মনে হয়, আমি হাজারটা প্রেম করি যে ভালো টিপস দিতে পারবো!
- প্লিজ, না করিস না!
করুণ কন্ঠে বলল শান্ত ভাইয়া! আইডিয়া!! ভাব নিয়ে বললাম,
- আচ্ছা, আর পাও ধরতে হবে না! দয়া খেলাম!
শান্ত ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
- আমি কবে তোর পা ধরলাম!
- টিপস চাও নাকি না!
শান্ত ভাইয়া ভেবে বলল,
- আচ্ছা, যা মন চায় বল! এখন তোরই দিন!
দুর্গ বিজয় হাসি দিয়ে বললাম,
- তুমি আমার ভাই বলে হেল্প করছি! তবে যা যা বলবো তাই তাই করতে হবে!
- ঠিক আছে, বুঝলাম! (শান্ত)
- তাহলে এখন থেকেই শুরু করা যাক!
- এখন! (শান্ত)
- হুম!
- ওকে, বল কি করতে হবে! (শান্ত)
একটু ভেবে বললাম,
- বর্তমান জিএফ মানেই প্যারা তা তো জানোই! সুতরাং, তোমাকে বেশ খাটাখাটনি করতে হবে। এ টু জেড সব পারতে হবে! আর আমি শুধু জিএফ সামলানোর না, বউ সামলানোরও টিপস দিবো বুঝলে!
- হুম (শান্ত)
শান্ত ভাইয়ার সাথে কথা বলে নিজের রুমের গেলাম। সেখান থেকে ফিরে এলাম কিছু বইপত্র নিয়ে! শান্ত ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
- এগুলো দিয়ে কি করবি!
আমি মুখে হাসি এঁকে বললাম,
- তুমি এখন আমার পড়াতে হেল্প করবে!
শান্ত ভাইয়া বিরক্তি নিয়ে বলল,
- আমার তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই!
- না করলে নাই! তবে মনে রেখো, গার্লফ্রেন্ডকে কিন্তু পড়াশুনায় হেল্প করতে হয়! তাহলেই না বুঝবে তুমি জেন্টালম্যান অফ দ্যা ইয়ার!
- আচ্ছা, বস!
ফিজিক্স বই হাতে নিয়ে বসে পড়লাম। শান্ত ভাইয়া একটা টপিকের উপর লেকচার দিচ্ছে যার কিছুই বোধগম্য হলো। হঠাৎ দেখলাম শুভ্র ভাইয়া ভিতরে আসছে। এই তো সুযোগ! মুহুর্তেই এমন ভাব নিলাম জানি পড়ে দুনিয়া উল্টিয়ে ফেলছি! শুভ্র ভাইয়া আমাদের দেখে সেখানেই দাঁড়িয়ে গেলো। সেখান থেকে চোখ সরিয়ে শান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
- আচ্ছা, এটা পড়ে কি লাভ!
শান্ত ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
- লাভ! লাভ আছে বলে মনে হয় না! তবে পাশ করতে হলে পড়তে হবে!
আমি খুশিতে গদগদ হয়ে বললাম,
- কি সুন্দর উত্তর দিয়েছো! তুমি আসলেই সত্যিবাদি! সবাই বলে লাভ আছে! লাভ আছে! তবে তুমি সত্যিটা তুলে ধরলে! আচ্ছা, নিউটন কি ছ্যাকা খেয়েছিলো নাকি যে গাছের নিচে বলেছিলো!
শান্ত ভাইয়া বিরক্ত হলেও মুখে প্রকাশ করছে না। মুখে জোরপূর্বক হাসি নিয়ে বলল,
- আসলে সে তো তোর মতো বুদ্ধিমান ছিলো না যে জানবে ছ্যাকা খেলেই গাছের নিচে বসতে হবে!
অন্য সময় হলে এটাকে অপমান হিসেবে নিলেও এখন এটাকে তারিফ হিসেবেই নিলাম। গদগদ কন্ঠে বললাম,
- তুমিই প্রথম যে কিনা আমার বুদ্ধির মূল্য বুঝেছো! মন তো চাচ্ছে তোমাকে জরিয়ে ধরি!
শুভ্র ভাইয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম বাতির মতো জ্বলে জ্বলে লাল নীল হচ্ছে! শুভ্র ভাইয়ার থেকে শান্ত ভাইয়ার দিকে তাকাতেই শান্ত ভাইয়া বলল,
- থাক! লাগবে না!
একথা শুনে আমার খুশির মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে গেলো! খুশির ঠ্যালায় বললাম,
- তুমি কতো ভালো! একটা মেয়ে জরিয়ে ধরতে চাইলেও তুমি মানা করছো। আসলে আমি পরীক্ষা করে দেখছিলাম কি বলো! তুমি উত্তীর্ণ হয়েছো! যেকোন মেয়ে বিনা দ্বিধায় তোমাকে বিয়ে করে নিবে!
এবার শান্ত ভাইয়ার মুখে হাসি ফুটলো,
- তাই নাকি!
- হুম, হুম!
আমার কথা হয়তো শুভ্র ভাইয়া ভাইয়ার পছন্দ হয় নি। তাই এগিয়ে এসে বলল,
- পড়া বাদ দিয়ে এসব হচ্ছে! আস, আমি তোকে পড়াই!
- কিন্তু    
শুভ্র ভাইয়া রাগী কন্ঠে বললো, আরেকটা কথা বললে স্কেল দিয়ে মারবো! চুপচাপ পড়!
চুপচাপ পড় বলে শুভ্র ভাইয়া একটানে ছয় ঘন্টা পড়ালো। খাওয়া দাওয়া সব বাদ। শেষে রাত একটায় ছাড় দিলো। পা ব্যথায় টনটন করছে। এদিকে দেখি শান্ত ভাইয়া খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছ। আইডিয়া!! হালকা জোরে বললাম,
- শান্ত ভাইয়া!
শুভ্র ভাইয়া আমার দিকে তাকালো। শান্ত ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,
- বল!
করুণ কন্ঠে বললাম,
- পা ব্যথায় মরে যাচ্ছি। একটু টিপে দাও না!
- আমি! (শান্ত)
- দেখো জেন্টালম্যানরা অনেক কেয়ারিং হয়! আর কেয়ারিং কাউকেই মেয়েরা চায়!
শান্ত ভাইয়া একটু ভেবে বললো,
- আচ্ছা, দিচ্ছি!
শান্ত ভাইয়া কাছে আসতেই শুভ্র ভাইয়া বললো,
- তোমার কষ্ট করতে হবে না! আমার জন্য পা ব্যথা হয়েছে, আমিই ঠিক করছি!
ইয়াহু! শুভ্র ভাইয়া আমার পা টিপবে! বিশ্বাসই হচ্ছে না! মনে মনে জান বাজছে, উড়ি উড়ি যায়, উড়ি উড়ি যায়, দিল কি পাতাং দেখো উড়ি উড়ি যায়! কিন্তু শুভ্র ভাইয়াকে দেখে মনে হচ্ছে না তিনি খুশি! এভাবে পাও টিপছে যেন লোহাতে হাতুড়ি চালাচ্ছে! করুণ কন্ঠে বললাম,
- ভাইয়া, এটা আমার পা! মুরগীর লেগপিস না!
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই বললাম,
- আপনার দ্বারা এসব সম্ভব না। রাখুন!
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
- দোষটা আমার না, দোষটা তোর পায়ের!
অবাক হয়ে বললাম,
- আমার পায়ের!
শুভ্র ভাইয়া কষ্ঠভরা কন্ঠে বললো,
- হ্যাঁ, তোর পায়ের! আল্লাহ! কি শক্ত রে বাবা!
আমি চিৎকার করে বললাম,
- শান্ত ভাইয়া! শান্ত ভাইয়া!
শান্ত ভাইয়া আস্তে আস্তে ধীরে সুস্থে এসে বলল,
- কি হয়েছে! এতো রাতে এভাবে বাজখার গলায় চিলাচ্ছিস কেন! মানুষরা তো ভূতনীর কন্ঠ মনে করে ভয় পাবে!
আমার কন্ঠকে ভূতনীর কন্ঠ বলা! দাঁড়াও, দেখাচ্ছি মজা! রেগে বললাম,
- পাও টিপো!
- না, টিপবো না। ওই অফার স্বলপ সময়ের জন্য ছিলো, এখন শেষ! (শান্ত)
- একটু কাছে আসো তো!
শান্ত ভাইয়া ভ্রু কুচকে বললো,
- ক্লোজ আপের এড দিচ্ছিস নাকি!
- আসো না একটু!
একরাশ ভাবনা নিয়ে শান্ত ভাইয়া কাছে আসলো। কাছে আসতেই কানে ফিসফিস করে বললাম,
- আজ আমার গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে গানটা গাওয়ার জন্য তৈরি থেকো!
শান্ত ভাইয়া আমার দিকে তাকাতেই ভ্রু নাচালাম। শান্ত ভাইয়া আর কিছু না ভেবে আমার পা টিপায় লেগে পড়লো! শান্ত ভাইয়ার এই রূপটা মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না। অন্য কোন সময় হলে পা না টিপে, পা ভাঙ্গতো! আর আজকে এতো সহজে সব মেনে নিচ্ছে! কারণটা কি!! আর এদিকে শুভ্র ভাইয়ার রিয়েকশন দেখে মনে হচ্ছে তিনি পারলে এখন শান্ত ভাইয়াকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফোন কানে নিয়ে বলল,
- রিয়া, কালকে কি ফ্রি আছো!
শুভ্র ভাইয়া তাহলে কালকে ঝাড়ুর সাথে দেখা করবে! করুক, তাতে আমার কি! আমি তো ফুট ম্যাসাজ নিয়ে বিন্দাস আছি! শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ম্যাসাজ ইনজয়ে লেগে পড়লাম।
রুমে এসে দেখি মেধার এত্তোগুলো কল! শুভ্র ভাইয়ার পড়ানোর কারণে মেয়েটাকে ঠিকমতো বিদায়ও জানাতে পারি নি! কল ব্যাক করতেই মেধা রিসিভ করলো। অভিমানী স্বরে বলল,
- এখন সময় হলো তোর কল ব্যাক করার!
করুণ কন্ঠে বললাম,
- আমার কি দোষ! শুভ্র ভাইয়া সেই যে পড়ানো শুরু করেছে এখন ছাড়লো!
মেধা অবাক হয়ে বলল,
- এতক্ষণ ধরে পড়িয়েছে!
- হুম!
উদাস কন্ঠে কথাটা বললাম। মানুষকে ফাঁসালে যে নিজে ফাঁসতে হয় তা একদম সত্যি! শুভ্র ভাইয়াকে #লাভ_টর্চার করতে গিয়ে নিজেই #টর্চার হয়ে গেলাম। কথাগুলো ভাবছি এমন সময় মেধা বললো,
- শান্ত ভাইয়া অনেক মেধাবী, তাই না!
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
- এতো বছরে আমি মেধার ছিঁটেফোঁটাও দেখলাম না, তুই বলিস মেধাবী!
কথাটা বলতেই মেধা বললো,
- না মানে, তোকে পড়াতে দেখেছিলাম। তো বিদায় নিয়ে তোর বাসার নিচে আসতেই দেখি শান্ত ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। কথা না বললে কেমন জানি লাগে তাই বললাম যে, ভালোই তো পড়ান! এই টপিকে আমারও একটু সমস্যা! আপনি দেখি খুব সহজেই আরোহীকে বুঝিয়ে দিলেন। এই কথা বলতেই শান্ত ভাইয়া সেখানে দাঁড়িয়েই টপিকটা আমাকে বুঝানো শুরু করলো। সেই সাথে বাসা পর্যন্ত পৌঁছেও দিলো!
অবাক হয়ে বললাম,
- তাই নাকী!
- হুম (মেধা)
মেধার সাথে কথা বলা শেষ করে চিন্তায় পরে গেলাম! তাহলে তলে তলে এসব চলছে! পড়াও বুঝিয়েছে, আবার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছেও দিয়েছে। ডাল ম্যাহ কুচ না কুচ কালা জারুর হ্যা! আরোহী, কাজে লেগে পড়! তোকে এই রহস্য উদঘাটন করতেই হবে।

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔 পর্বঃ ০৬

সকাল হতেই কাজে লেগে পড়লাম। প্রথম কাজ শান্ত ভাইয়াকে ঘুম থেকে টেনে উঠানো। ঢিং ঢিং করতে করতে চলে গেলাম শান্ত ভাইয়ার রুমে। ঢুম করে দরজা খুলতেই দেখি শান্ত ভাইয়া আর শুভ্র ভাইয়া গলাগলি ধরে ঘুমিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কতো পুরানো দোস্ত! যাক গে! আমার কাজ হলো এদের মধ্যে জেলাসি নামক বস্তু সৃষ্টি করা! মন তো চাচ্ছে শুভ্র ভাইয়াকে দিয়ে শান্ত ভাইয়াকে দুই তিনটা মার খাইয়েই দিই! আমার নাকে নিচ দিয়ে আমার বেস্টুর উপর লাইন মারা! দাড়াও, বাচ্চু! মার তো তোমাকে খেতেই হবে। শুভ্র ভাইয়া না মারলে আমি মারবো। আর তার শুরু হবে এখন থেকে! কথাটা ভেবেই শান্ত ভাইয়ার কাছে গেলাম। নরম কন্ঠে বললাম,
- শান্ত ভাইয়া!
শান্ত ভাইয়া ঘুমে বিভোর! আবার নরম গলায় বললাম,
- শান্ত ভাইয়া!
এবার একটু নড়েচড়ে উঠলো। মন তো চাচ্ছে পানি ঢেলে দিই, কিন্তু ঘুমের মধ্যে হঠাৎ কিছু করলে যদি হার্ট এর্টাক করে তবে পরে আমার দোষ হবে! না, বাবা। এসব কেস ফেসে পড়তে চাই না! তাই আবার ডাকলাম,
- শান্ত ভাইয়া!
শান্ত ভাইয়া এবার ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলল,
- বেবি, পরে! অনেক ঘুম আসছে!
বেবি! কার বেবি! কিসের বেবি! মন তো চাচ্ছে গরম পানিতে চুবাই! না, না, ঠান্ডার দিনে গরম পানিতে আরাম পাবে। একে বরং বরফ পানিতে চুবাবো! হ্যাঁ, তাই করবো! কথাটা ভাবছি দেখলাম শুভ্র ভাইয়া চোখ খুলেছে! আমি তাকাতেই সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলো। ওহ, তাহলে আমাদের কথা শুনা হচ্ছে! দাঁড়াও, মনু! এখন বুঝাবে ঝাড়ুর সাথে ঘোরার সাইড এফেক্ট! কোমল কন্ঠে বললাম,
- বেবি, সকাল হয়ে গেছে! উঠে পড়ো!
আমার কথা শান্ত ভাইয়ার কানে যেতেই তিনি ধড়ফড়িয়ে উঠলেন! দেখে মনে হচ্ছে খুব বাজে স্বপ্ন দেখেছে! বসে বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,
- কি হয়েছে, ভাইয়া?
শান্ত ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল, 
- তুই আমাকে কিছুক্ষণ আগে কি বলেছিলি!
আমি না জানার ভান করে বললাম, 
- কি বলেছি!
শান্ত ভাইয়া কুঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে বলল,
- তুই আমাকে বেবি বলেছিলি!
আমি মুখে দীর্ঘ হাসি এঁকে বললাম,
- তাই নাকি!
শান্ত ভাইয়া তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
- হ্যাঁ!
আমি হাসিটা বজায় রেখে বললাম,
- আমি তো বেবি শুভ্র ভাইয়াকে বলেছিলাম!
আমার কথা শেষ হতেই শুভ্র ভাইয়া ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। চোখ বড় বড় করে বললো,
- কি বললি!
এবার আমি হাসিটা একটু কমিয়ে বললাম,
- এমন কিছুই না! শান্ত ভাইয়া ঘুমে আবোল তাবোল বকছিল তাই একটু জব্দ করলাম আর কি!
আমার কথায় শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকালো। কিন্তু তাতে আমার কি! শান্ত ভাইয়াকে নিচে আসতে বলে হেলেদুলে সেখান থেকে চলে আসলাম।
কিচেনে দাঁড়িয়ে ডিম ভাঁজছি আই মিন অমলেট করছি। আমার সহকারী হিসেবে আছে শান্ত ভাইয়া। ভালো জিএফ পেতে হলে রান্না জানা অবশ্যক, কেননা প্রতিটা মেয়ে চায় অফডে টে হলেও তার জামাই তার জন্য রান্না করুক। শান্ত ভাইয়া যদিও রান্নার নামে কিছু রছে না তবে এখানে থাকলেই আমার কাজ চলে যাবে! কেননা বাইরে ডাইনিংয়ে বসে আছে শুভ্র ভাইয়া! 
ডিম ভেঙ্গে চুলায় দিয়ে শান্ত ভাইয়াকে বললাম এটাকে উল্টাতে! শান্ত ভাইয়া বেশ কিছুক্ষণ গবেষণা করে বললো,
- দুনিয়াতে এতো সহজ সহজ রান্না থাকতে এতো কষ্ট করে ডিম ভাঁজার প্রয়োজনটা কি!
ডিম ভাঁজার চেয়ে সহজ রান্নাও আছে তা আমার জানা ছিলো না। শান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম, 
- সহজ রান্নাগুলোর নাম শুনি একটু!
শান্ত ভাইয়া ভাবসাব নিয়ে বলল,
- লাইক পিজ্জা! ওভেনে দাও আর হয়ে গেলো! আবার দেখো বার্গার! দুই বানের মাঝে দাও আর হয়ে গেলো! কতো সিম্পল দেখলি!
পিজ্জা, বার্গার বানানো এতো সহজ! দাও আর হয়ে গেলো! ভ্রু কুঁচকে বললাম, দিবো আর হয়ে যাবে তাতো বুঝলাম। কিন্তু দিবোটা কি! তোমার মাথা!
শান্ত ভাইয়া কিছু বলার আগে শুভ্র ভাইয়া কিচেনে এসে ডিম উল্টিয়ে দিলো! শান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,
- যখন পারিস না তখন কিচেনে এসেছিস কেন! আর তুই! (আমার দিকে তাকিয়ে) তোর কিছু লাগলে আমাকে বলবি! অন্যদের জ্বালানোর প্রয়োজন নেই!
আমি না বুঝার ভাব করে বললাম,
- আপনাকে বলা আর শান্ত ভাইয়াকে বলা একই তো হলো! দুজনেই তো আমার ভাই, তাই নয় কি!
শুভ্র ভাইয়া রাগী গলায় বলল,
- আমি তোর কোন মার পেটের ভাই যে খালি ভাই ভাই করিস!
- কার আবার! আমার!
পিছন থেকে মামিমণি এগিয়ে এসে বললো! শুভ্র ভাইয়া মামিমণির দিকে তাকাতেই মামিমণি বলল,
- আমিও তো ওর মা, তাই না?
আমি খুশিতে গদগদ হয়ে বললাম,
- একদম!
শুভ্র ভাইয়া কিচেন থেকে যেতে যেতে বলল,
- মা হতে মন চাইলে অন্য ভাবে হোন! কিন্তু এই ভাবে আমি কিছুতেই মেনে নিবো না!
মামিমণি গলা উঁচু করে বলল,
- তুই রাজি হলে সব ভাবেই হতে পারি! আমার সমস্যা নেই!
শুভ্র ভাইয়া কিচেনের বাইরে থেকে বলল,
- আমি কি মানা করেছি নাকি! হতে চাইলে হোন!
মামিমণি একটা রহস্যময় হাসি দিলো! যা আমাকে জানান দিচ্ছে সামনে কিছু একটা হতে চলছে!
জরুরি তলবে বসে আছি। জরুরি তলবের বক্তা হলেন আমার মা। শ্রোতা হিসেবে থাকছি আমি, শান্ত ভাইয়া, শুভ্র ভাইয়া, মামিমণি, ফুপ্পি আর নিধিপি! সোফায় বসে বসে ঝিমুচ্ছি আর ভাবছি কি হতে পারে! কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করার পর আম্মু বলল,
- আপনাদের সবাইকে এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য ডাকানো হয়েছে।
সবাই মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছে! এতোই মনোযোগ দিয়ে শুনছে যে কেউ যে প্রশ্ন করবে যে কি কারণ তা আর করা হলো না। কেউ প্রশ্ন করছে না দেখে আম্মু নিজেই বলল,
- আর কথাটা হলো আরোহীর বিয়ে!
কথাটা কানে যেতেই চোখ বড় করে তাকালাম। বিয়ে! তাও আবার আমার! কিন্তু কিভাবে কি!!

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔 পর্বঃ ০৭ 

তাসিন নামটা শুনেই চোখ বড় করে তাকালাম। এদিকে শুভ্র ভাইয়া রাগী চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। ছেলেও আর কোন নাম পেল না যে তাসিন নামটাই নিতে হলো। যে নামটা রেখেছে তা জানতে পারলে বেশ হতো! কিন্তু এখন কি করি! 
কিছুক্ষণ আগে আম্মু বলেছে একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে, ছেলে খুব ভালো, নাম তাসিন! তা শোনার পর থেকেই আমার অবস্থা কাহিল। কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছি না।
ঘরে এদিক থেকে ওদিক পায়চারী করছি এমন সময় শুভ্র ভাইয়া এসে হাতের বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরালো। ব্যথায় কুঁকড়ে আহহ শব্দ করে উঠলাম। এতোই শক্ত করে ধরেছে যে মনে হচ্ছে হাত ভেঙে পড়বে। শুভ্র ভাইয়া রাগী কন্ঠে বলল,
- তাহলে উনিই তোর সেই তাসিন ভাইয়া!
ব্যথায় ঠোঁট চেপে বললাম,
- ভাইয়া, লাগছে।
শুভ্র ভাইয়া আরো জোরে চেপে ধরে বলল,
- লাগুক, আরো লাগুক। কি মনে করিস নিজেকে! যা মন চায় তাই করে বেড়াবি আর কেউ কিছু বলবে না!
কিছু না জেনে কিভাবে এরকম একটা অপবাদ দিতে পারে শুভ্র ভাইয়া! হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম তাসিন ভাইয়ার কথা! কিন্তু এর মানে এই তো হয় যে আমি খারাপ কিছু করে বেড়াচ্ছি! তার কথায় রাগ মাথায় উঠে নাচছে। রেগে বললাম,
- যাই করে বেড়াই না কেন, হবু জামাইয়ের সাথে করেছি। আপনার কি!
শুভ্র ভাইয়া রাগে কিটমিট করে বললো,
- হবু জামাই!
এতক্ষণে হাতের বাঁধন হালকা হয়েছে। হাত ছাড়িয়ে বললাম,
- জি! হবু জামাই! শুনেন নি, আম্মুর ছেলে পছন্দ!
আমার কথা শুনে শুভ্র ভাইয়া যে রেগে যাচ্ছে তা তার চোখগুলো দেখেই বুঝতে পারছি। লাল টকটকে চোখগুলো থেকে যেন এই মুহুর্তেই রক্ত ঝরবে। চোখ দিয়েই যেন আমাকে জ্বালিয়ে ছারখার করছে। কিন্তু আমার কি দোষ! শুভ্র ভাইয়া না জেনেই এমন একটা অপবাদ কিভাবে দিলো! কিভাবে! 
কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে শুভ্র ভাইয়া সেখান থেকে প্রস্থান করলো। শুভ্র ভাইয়া যেতেই শান্ত ভাইয়া হাজির। নিশ্চয়ই মেজাজের বারোটা বাজানোর জন্য তার আসা! কঠিন গলায় বললাম,
- কিছু লাগবে!
শান্ত ভাইয়া মুখ ফুলিয়ে বলল,
- শুনেছিলাম বিয়ের পর বোনেরা পর হয়! এখন তো দেখছি বিয়ের আগেই পর হয়ে গেছিস!
রাগী গলায় বললাম,
- হয়েছি, বেশ করেছি! এখন ফুটো!
শান্ত ভাইয়ার আচরণে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলো না। উল্টো তিনি বেশ আরামসে খাটে বসে বলল,
- হয়েছি, বেশ করেছির জায়গায় যদি প্রেম করেছি, বেশ করেছি বলতি তাহলে আরো বেশি সুন্দর হতো!
রাগটা এখন আকাশ ছুঁই ছুঁই। যেনো সময় এই শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট প্রাণীটা আমার হাতে ঝাঁটার বাড়ি খেতে পারে তা বেশ বুঝতে পারছি। রেগে বললাম,
- তোমার সুন্দরের খেতাপুরি! ঝাঁটার বাড়ি থেকে না চাইলে নিজের পথ দেখো!
এবারও আমার কথা তার বোধগম্য হলো না। দাঁত কেলিয়ে বলল,
- সত্যি করে বল তো, প্রেম ট্রেম করিস নাকি! এতো প্রেম প্রেম গন্ধ পাই কোথা থেকে!
দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
- নিজের শরীর থেকে!
শান্ত ভাইয়া অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
- মানুষের শরীর থেকে ঘামে গন্ধ আসে শুনতাম, প্রেমের গন্ধও আসে তা প্রথম শুনলাম!
রাগ দমিয়ে বললাম,
- সব কথা কখনো না কখনো প্রথম শুনতে হয়। এই কথার সূচনা আজ হলো। এখন বাইরে গিয়ে মিঠাই বিলাও! প্লিজ, যাও!
আমার করুণ কন্ঠ তার কানে গেলো না। নির্দয় হলে যা হয় আর কি! 
শান্ত ভাইয়া জ্ঞানী ভাব নিয়ে বলল,
- আমার মনে হয়, প্রেম প্রেম গন্ধটা মন থেকে আসে। আর আমার সিক্স সেন্স বলছে, এই গন্ধটা তোর মন থেকে আসছে।
এবার আর নিজের রাগকে দমাতে পারলাম না। রেগে আগুন হয়ে বললাম,
- আসছে, ভালো হচ্ছে! খুশি?
শান্ত ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে বলল,
- তুই না বললেও তা আমি জানি। এখন শোন, কাল দুপুরে ছেলের সাথে তোর ডেট ঠিক করা হয়েছে! আই মিন, পাত্র দেখা টেখা আর কি! মামিমা তোকে কাল সকাল থেকেই রেডি থাকতে বলেছে। তুই তো আবার লেট লতিফ থুক্কু লেট লতিফা! তাই আগে ভাগে রেডি হয়ে থাকিস! বুঝলি?
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই তিনি তার পথ ধরলো। যখন যেতে বলি তখন যাওয়ার নাম নেয় না, আর এখন আমার উত্তরটা পর্যন্ত শুনলো না! এর জন্যই একে আমি দেখতে পারি না। এখন কথা হলো, করবোটা কি!  মাথাও কাজ করছে না! তবে কিছু একটা তো করতেই হবে! 
সকালের ঘুম ভাঙল মেধার ডাকে। আমাকে সাজানোর জন্য তিনি নিজের ঘুম বির্সজন দিয়ে হাজির হয়েছে। মেধাকে দেখে করুণ কন্ঠে বললাম,
- তুই সত্যি আমাকে সাজাবি!
মেধা খুশিতে গদগদ হওয়া কন্ঠে বলল, 
- সাজাবো মানে! আমি তো পারলে এখনই তোর বিয়ে করিয়ে দিই!
ছোট মুখটা আরো ছোট করে বললাম,
-  তুই এটা বলতে পারলি!
মেধা মুখে দীর্ঘ হাসি টেনে বললো,
- মুখ তো আছেই বলার জন্য, তাই না? এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আস! সাজাতে হবে তো!
মেধা কথাটা সুন্দর করে বললেও আমার মনে হচ্ছে একটা কসাই ছাগলকে বলছে ফ্রেশ হয়ে আসতে, যেনো তাকে বলি দেওয়া যায়। আমিও হার মানার পাত্রী নই! এই পাত্রকে আমি দেখে ছাড়বো,হুহ!

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔 পর্বঃ ০৮ 

রেস্টুরেন্টের কর্ণারের একটা চেয়ারে বসে আছি। পাশের চেয়ারে মেধা বসে রাগে ফুসফাস করছে। বান্ধবীর পাত্র দেখতে আসার মতো কাজ সে করতে নারাজ। এই নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ রাগারাগি করছে সে। শেষে না পেরে সঙ্গে আসতে হয়েছে তাকে। আর তার জন্যি এই ফুসফাসানি। তবে আমার খেয়াল এই দিকে নয়! আমার খেয়াল হলো দু টেবিল পরে থাকা শুভ্র ভাইয়ার উপর, যে কিনা ঝাড়ুর সাথে গপসপ করছে। যাই হোক, কিছুক্ষণ আগে সামনে একটা মানুষ এসে বসেছে, পাত্র মেবি তিনি!
পাত্র মুখে দীর্ঘ হাসি এঁকে বলল,
- হাই, গার্লস!
মেধা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
- হাই!
আমিও হালকা হাসি টেনে হাই বললাম। ছেলেটা দেখতে খারাপ না, তবে শুভ্র ভাইয়ার মতোও না। আমার দিকে একনজর তাকিয়ে বলল,
- তাহলে আপনি পাত্রী।
- জি।
উত্তর দিতে দিতে শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম তিনি ঝাড়ুর সাথে হেসেখেলে কথা বলছে। মন তো চাচ্ছে টেবিলে রাখা পানিটা মাথাই ঢালি! এতো হাসার কি আছে বুঝি না! 
সামনে থাকা পাত্র মানে তাসিন আমাকে উদ্দেশ্য করে একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে। কিন্তু আমার নজর এখনো শুভ্র ভাইয়ার দিকে। অনেক হয়েছে #Jealousy_Game! এখন হবে #Just_Ingore! দেখি আমার অবহেলা কিভাবে সহ্য করে এখন!
শুভ্র ভাইয়ার থেকে চোখ সরিয়ে এবার তাসিনের দিকে তাকালাম। তাসিন হালকা হেসে জিজ্ঞেস করলো,
- সব তো বললাম! আর কিছু কি জানা বাকি আছে!
আমিও উত্তরে একটা হাসি দিয়ে বললাম,
- না! আপনি কিছু জানতে চাইলে বলুন!
তাসিন মুখের হাসি বজায় রেখে বলল, 
- আমার যা জানা দরকার তা আমার জানা হয়ে গেছে। এখন বলুন, আপনাকে আপনার পছন্দ হয়েছে?
একনজর শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকালাম। না, তিনি ঝাড়ুর সাথে বেশ খুশিই আছে। আমি তাহলে কেন কষ্ট পাবো! না, পাবো না আমি কষ্ট! বুকে পাথর রেখেই বললাম,
- জি, আপনার?
তাসিনের মুখের হাসিটা আরো দীর্ঘ হলো। হাসি মুখে বলল,
- তা তো বাসায় গিয়েই জানবেন! চলি, তাহলে!
তাসিন উঠে দাঁড়াতেই আমরাও উঠে দাঁড়ালাম। তাসিনকে বিদায় দিয়ে এক নজর শুভ্র ভাইয়ার টেবিলে চোখ দিলাম। পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।
রিকশায় বসে আছি। মেধা তখন থেকে বলেই যাচ্ছে যে, বিয়েতে হ্যাঁ করলাম কেন! আমি তো শুভ্র ভাইয়াকে পছন্দ করি!
মেধার কথা শুনতে শুনতে এক পর্যায়ে বললাম,
- উনি আমাকে পছন্দ করে? জানি না। আমি অন্য সবার মতো না যে পছন্দ করি বলে সারা জীবন নষ্ট করে দিবো। আর তিনি পছন্দ করতেন তাহলে বিয়ে আটকাতেন, ঝাড়ুর সাথে ইটিসপিটিস না! তার জন্য আমি কেন অপেক্ষা করে মরবো! বল! তার কি কোন দায়িত্ব নেই!
মেধা মাঝখানে বলল,
- কিন্তু   
ওকে বাধা দিয়ে বললাম,
- আমি যা চেষ্টা করার করেছি! আর পারবো না। বাকিটা শুভ্র ভাইয়ার উপর! তিনি যদি কিছু না করে তাহলে তার রাস্তা আলাদা, আমার রাস্তা আলাদা।
কথাটা বলেই চুপচাপ বসে পড়লাম। বলতে সহজ হলেও করতে সহজ সহজ না। আমার ভিতরে কি চলছে তা আমিই জানি!
বাসায় এসে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলাম। সবাই অনেক জিজ্ঞেস করেছে যে ওখানে কি হয়েছে, কিন্তু কারোই উত্তর দিই নি। এখন আমার একা থাকা প্রয়োজন।
রুমে গিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে রইলাম। চোখ থেকে জলধারা ক্রমশ পড়েই যাচ্ছে। হাত দিয়ে চোখ মুছতে নিলাম হঠাৎ অনুভব করলাম পিছনে কেউ আছে। তাড়াতাড়ি চোখ মুছে উঠে বসতেই দেখলাম শুভ্র ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে মুখে হাসি এঁকে বললাম,
- কিছু বলবেন!
শুভ্র ভাইয়া আমার চোখে চোখ রেখে বললো,
- কিছু না বলার বাকি আছে!
শুভ্র ভাইয়ার চোখ ক্রমশ জ্বালিয়ে দিচ্ছে আমাকে। শেষে সহ্য করতে না পেরে চোখ সরিয়ে নিলাম। শুভ্র ভাইয়া শুকনো হেসে বললো,
- রেস্টুরেন্টে দেখতে গিয়েছিলাম তুই কি করিস! তো হ্যাঁ করে দিলি, তাই না?
শুভ্র ভাইয়ার কথায় মাথা নিচু করে রাখলাম। কি উত্তর দিবো বুঝতে পারছি না। শুভ্র ভাইয়া হয়তো আমার নিশ্চুপ থাকা ভাষাই বুঝতে পেরেছে, তাই শুকনো হাসি দিয়ে বলল,
- বুঝলাম। খুশি থাকিস।
কথাটা বলে এক সেকেন্ডের জন্যও অপেক্ষা করলেন না। সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। তাহলে কি শুভ্র ভাইয়া ভেবেছিলো আমি বাধা দিবো! তবে কি #লাভ_টর্চার করতে গিয়ে নিজেই শুভ্র ভাইয়াকে নিজের থেকে দূর করে দিলাম!

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔 পর্বঃ ০৯ 

সন্ধ্যার দিকে রুমে থেকে বের হয়ে নিচে যেতেই দেখি সবাই আড্ডা দিচ্ছে। আমাকে দেখে আম্মু বলল,
- চোখমুখ এতো ফুলেছে কিভাবে!
আম্মুর কথা শুনে আমমুর দিকে তাকালাম। কিছু উত্তর দিবো তার আগেই শান্ত ভাইয়া বলল,
- প্রিয় মানুষ থেকে দূরে যাওয়ার বেদনা।
শান্ত ভাইয়ার কথায় তার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি বললেন,
- না মানে আমি আমার কথা বলছিলাম। আমিও তো তোর প্রিয় মানুষ। বিয়ের পর আমার থেকেও তো দূরে চলে যাবি।  
শান্ত ভাইয়ার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। প্রিয় মানুষ! তাও আবার শান্ত ভাইয়া! আমার আর মানুষ পেলাম না। তীক্ষ্ম গলায় বললাম,
- দুনিয়াতে তো মানুষের অভাব পড়েছে।
শান্ত ভাইয়া একনজর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
- পড়লে তো হতোই কাজ!
শান্ত ভাইয়ার কথাকে তেমন পাত্তা না দিয়ে রুমের চারদিকে চোখ বুলালাম। না, শুভ্র ভাইয়াকে খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় হতে পারে! নিশ্চয়ই রুমে হবে! কথাটা মাথায় আসতেই রুমের দিকে পা বাড়ালাম। দরজায় টোকা দিবো এমন সময় কানে আসলো,
- ওকে আমার চাই-ই চাই! কোনকিছুর বিনিময়ে হলেও চাই! আর একবার কাছে পেয়ে নিই! এমন শাস্তি দিবো যে দূরে যাওয়ার নামও নিবে না!
কথাটা শুনেই ঢোক গিললাম। বুকে এক বস্তা সাহস কুড়িয়ে দরজায় টোকা দিলাম। টোকা দিতেই সাথে সাথে কঠিন কন্ঠে বলল, 
- কে?
যা ও একটু সাহস কুড়িয়েছিলাম তা ফুস! তাও নিজের মনকে সান্ত্বনা দিয়ে কিছু বলতে যাবো,,, তার আগেই দরজা খুলে গেলো। দরজার ওপাশে শুভ্র ভাইয়াকে দেখে ভ্যাবলাকান্তের মতো একটা হাসি দিলাম! আমার হাসি দেখে শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
- কি চাই!
শুভ্র ভাইয়াকে দেখেই আমার গলা শুকিয়ে আসছে। কথার বুলিগুলো যেনো তোতাপাখি হয়ে আকাশে উড়াল দিয়েছে। এদিকে শুভ্র ভাইয়া আমার দিকে তীক্ষ্মতে তাকিয়ে আছে। শুভ্র ভাইয়ার তীক্ষ্ম দৃষ্টি দেখে একটা জোরপূর্বক হাসি দিলাম। গলা একটু ভিজিয়ে বললাম,
- কি করছেন!
শুভ্র ভাইয়া এবার একটা হাসি দিলো। পাঠাকে বলি দেওয়ার আগে যে হাসি টা দেয় ঠিক সেই হাসিটা। হাসিটা মুখে ফেভিকলের আটা দিয়ে আটকে রেখেই বলল,
- বসে বসে পিঠা বিক্রি করছি। আয়, খেয়ে যা।
শুভ্র ভাইয়ার হাসিটা যে কতোটা প্রাণঘাতী হতে পারে তা তলে তলে বুঝতে পারছি। জোর করে একটু হাসি দিয়ে বললাম,
- না, থাক। পরে না হয় ঐ টাকার ফুচকা কিনে দিয়েন।
কথাটা বলে শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। ওরে আমার ফুচকা রে! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ব্যটা ফুচকা পছন্দ করে না। না করার কারণটাও আমি। কেন যে ঐদিন ফুচকা খেতে খেতে কথাটা বললাম! দুনিয়াতে কি আর কোন খাওয়া ছিলো না! নাকি সব খাওয়া বন্যার জ্বলে ভেসে গেছে! মনে মনে এতো কিছু ভেবে চলছি এমন সময় শুভ্র ভাইয়া আমার হাত ধরে বলল,
- চল!
আমি শুভ্র ভাইয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,
- এখনই ফুসকা খাওয়াবেন নাকি!
কথাটা বলতেই শুভ্র ভাইয়া যা চাহনি দিলো তাকে আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। শুভ্র ভাইয়া আমাকে টেনে বসার রুমে নিয়ে গিয়ে সবার সামনে দাঁড় করালো। আমাদের এভাবে দেখে সবাই চোখে তাকিয়ে আছে। সবার চাহনিকে উপেক্ষা করে শুভ্র ভাইয়া বলল,
- আরোহীকে ফুচকাওয়ালার সাথে বিয়ে দিবেন, তাও আবার কালকে।
শুভ্র ভাইয়ার কথার শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। ফুচকা পছন্দ বলে ফুচকাওয়ালার সাথে বিয়ে দিতে হবে নাকি! আজব! আমার মতো সবাই যে চারশ চল্লিশ ভোল্টের ঝাটকা খেয়েছে তা তাদের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বিস্ময় কাটিয়ে মামিমণি কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাকে থামিয়ে দিয়ে শুভ্র ভাইয়া বলল,
- কাল থেকে আমি ফুচকা বিক্রি করা শুরু করছি।
আগের কথায় যতটা না শক খেয়েছি এখনকার কথায় তার চেয়ে হাজার গুন বেশি শক খেলাম। বাসার সবার অবস্থাও ছিলো দেখার মতো। কারো মুখের থেকে কথা বের হচ্ছে না। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে, সে কি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিচ্ছে নাকি! আর যদি দিয়েও থাকে তাহলে আমার অতি সাধু পরিবার কি তা বুঝতে পারবে! যদি বুঝতে পারেও তাহলে কি বিয়েটা দিবে! আল্লাহ! কতো টেনশন! এতো টেনশন এখন কোথায় রাখবো তাই ভেবে আমার অবস্থা খারাপ!
চিন্তার সাগরে ঘুরে যাচ্ছি এমন সময় মামিমণি বলল, 
- তাহলে তো ভালোই হয়। তুই ফুচকাওয়ালা হলে আশেপাশে যদি কোন ভালো ফুচকাওয়ালা পাস তাহলে আমাদের বলিস! বলে না, চোর চোর মসেরা ভাই, তেমনটাই! বোনকে এতো আদর করে যে ভালো জামাই খুঁজতে নিজে ফুচকাওয়ালা হয়ে যাবে! আহা! কতো ভালবাসা! দেখে মনটা জুরিয়ে যায়। তাহলে এটাই কথা থাক! তুই ভালো ফুচকাওফয়ালা পেলে বলিস, আমরা নিজে গিয়ে কথা বলবো। আমার আদরের মেয়ে বলে কথা!
মামিমণির জবাব শুনার পর শুভ্র ভাইয়া যা ফেস করেছে তা দেখে দম ফাটানো হাসি আসছে। কিন্তু এখন হাসলে যে সব রাগ আমার উপর দিয়ে যাবে তা ভালোই বুঝতে পারছি। আমার চাপা হাসি দেখে শুভ্র ভাইয়া বলল,
- এখানে হাসার কি আছে যে বাঁন্দরের মতো হাসছিস!
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
- কি বললেন! আমি বাঁন্দরের মতো হাসি!
শুভ্র ভাইয়া তওবা, তওবার ভঙ্গি করে বললো,
- তওবা, তওবা! তুই বাঁন্দরের মতো কেন হাসবি! তুই তো বাঁন্দরণীর মতো হাসছিস!
কথাটা বলেই হাসিতে ফেটে পড়লো। সাথে সাথে পুরো ঘরভর্তি লোক হেসে চলছে। আমি রাগে মুখ ফুলিয়ে বললাম,
- আমি এখন ফুচকাওয়ালাকেই বিয়ে করবো, তাও আবার কালকের মধ্যেই! সবাই পাত্র খুঁজা শুরু করো!
সবাই এখনো হেসেই চলছে। কেউ আমার কথাকে পাত্তা দিচ্ছে না দেখে রেগে চলে এলাম। এই শুভ্র বিলাইকে দেখে ছাড়বো! হুহ!
Continue                    
(আমি আগেও বলেছি, আমি অসুস্থ! সিজন চেন্জের কারণে হঠাৎ করেই অসুস্হ হয়ে পড়েছিলাম, যার ফলে লেখালেখি তেমন একটা করতে পারি না। তবে আল্লাহর রহমতে এখন বেটার আছি তাই চেষ্টা করবো রিগুলার গল্পটা দেওয়ার। আর হ্যাঁ, গল্পের ক্যারেক্টারের নাম কোথায় রেজিস্টার করা হয় তা একটু বলবেন! কেননা, এই গল্পটা শুরু করার সময় কিছু মানুষের ভাব এমন ছিলো যে শুভ্র নামটা শুধু নির্দিষ্ট গল্পের জন্য রেজিস্টার করা হয়েছে। তাই আগে থেকেই বলে দিচ্ছি আমার পরের গল্প #অন্যরকম_চাওয়া তেও শুভ্র নামটা শ্রীঘই আসতে চলছে। তবে এতো শ্রীঘইও না। সো, জাস্ট চিল)

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔 পর্বঃ ১০  

ঘুম থেকে উঠেই বড়সড় ধাক্কা খেলাম। শুভ্র ভাইয়া দরজার কাছে গলা উঁচু করে বলছে, আমার নাকি বিয়ে, তাও ফুচকাওয়ালার সাথে। জীবনে এতো কথা বললাম কেউ সিরিয়াসলি নিলো না, আর এবার একবার রেগে বললাম না বললাম সবাই মেনেও নিলো। নিশ্চয়ই শুভ্র ভাইয়ার কারসাজি! এখন দেখেন আরোহীর কারনামা! আহারে! ফুচকাওয়ালার জন্য কষ্ট লাগছে। তার কপালে আজকে শুভ্র ভাইয়ার হাতের মার খাওয়া লেখা আছে।
কথাটা ভাবতেই লাফিয়ে লাফিয়ে আম্মুর কাছে গেলাম। আম্মু মামিমণির সাথে কি নিয়ে জানি আলাপ করেছে, দূরে শুভ্রভাইয়াও আছে। গলার আওয়াজ একটু উঁচু করে বললাম,
- আম্মুউউউউ!
আম্মু ভ্রু কুঁচকে বলল,
- কি সমস্যা!
আম্মুর কথায় আমি মুখে লাজুক হাসি এনে বললাম,
- মেহেদি লাগাবো।
আমার কথায় আম্মুর কুঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে গেলো। শুভ্র ভাইয়াও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মু তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
- তুই তো ঈদেও মেহেদি দিস না। এখন কি হলো!
আমি শুভ্র ভাইয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললাম, 
- শুভ্র ভাইয়া তখন বলছিলো আমার নাকি বিয়ে! তাই ভাবলাম একটু লাগাই।
আমার কথা শেষ না হতেই শুভ্র ভাইয়া কাশতে লাগলো। মনে হচ্ছে যেন এখনই দম বন্ধ হয়ে যাবে। তার অবস্থা দেখে আম্মু বলল,
- ছেলেটার হঠাৎ কি হলো! আরোহী, জলদি পানি দে।
আমি পানি আনার জন্য পা বাড়াতেই শুভ্র ভাইয়া আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
- চল, আমিও যাই।
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই শুভ্র ভাইয়া আমাকে টেনে আমার রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দিলো। আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
- হচ্ছেটা কি!
শুভ্র ভাইয়া আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
- তুই বল, তোর কি হয়েছে!
আমি এবার মুখে হাসি এঁকে বললাম,
- আমার আবার কি হবে!
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
- আগে তো আমার পিছনে ঘুরতি এখন এমন করছিস কেন!
সবসময় আমি ঘুরবো আর নিজে মজা নিবে! ভালোই! চোয়াল শক্ত করে বললাম,
- ভুল করতে করতে শিখে গেছি! তাই ভুল করা বন্ধ করে দিয়েছি!
শুভ্র ভাইয়া অবাক হয়ে বলল,
- আমাকে ভালবাসা তোর ভুল ছিলো!
আমি না বুঝার ভান করে বললাম,
- হয়তো! ভুল না করলে ওভাবে অপমান করতে নাকি! আর আপনিই তো বলতে যে, বাচ্চা মেয়ের সাথে প্রেম করে মজা নেই! এখন আমি বলি, বুইড়া ব্যটার সাথে প্রেম করে মজা নেই!
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
- আমি বুইড়া!
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
- নয়তো কি!
শুভ্র ভাইয়া চোখমুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে। তাকে কিছু বলতে না দিয়ে বললাম,
- এখন এসব কথা বাদ দেন তো! সামনেই কাশেমের সাথে আমার বিয়ে!
শুভ্র ভাইয়া অবাক চোখে বলল,
- কাশেম কে!
আমি মুখে লাজুক হাসি নিয়ে বললাম,
- আমার ফুচকাওয়ালা জামাইয়ের নাম আমি কাশেম রাখবো!
শুভ্র ভাইয়া বিরক্তি নিয়ে বলল,
- আবার ফুচকাওয়ালা!
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, 
- কেন! তাসিন ভাইয়াও ফুচকাওয়ালা নাকি!
শুভ্র ভাইয়া অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
- যাকে জোস ছেলে, জোস ছেলে বলছিলি সে ফুচকাওয়ালাই ছিলো।
এবার ঐ হ্যাবলাকান্তের কথা মনে পড়লো। তাহলে সে ফুচকাওয়ালা ছিলো! তাই বুঝি মহাশয় ফুচকাওয়ালা হতে চেয়েছে! আহারে! বেচারা! 
আমি মুখে হাসি এঁকে বললাম,
- ছেলেটা কিন্তু আসলেই জোস ছিলো।
শুভ্র ভাইয়া রাগী ফেস নিয়ে বলল,
- দুনিয়ার সব ছেলেই জোস লাগে, আমি ছাড়া।
আহারে! শুভ্র বিলাই জেলাস! তাহলে তো আগুন ঘি ঢালতে হয়! যেই ভাবা সেই কাজ! হাসি হাসি মুখে বললাম,
- তাসিনও কিন্তু জোস ছিলো।
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বললাম,
- তাসিন!
আমি লাজুক হেসে ফললাম,
- হবু জামাইকে কি আর ভাইয়া বলে সম্বোধন করা যায়!
শুভ্র ভাইয়া আমার হাত শক্ত করে ধরে বলল,
- তোর ভাইয়াকে দেখাচ্ছি! চল!
শুভ্র ভাইয়া আমাকে টেনে সবার সামনে নিয়ে দাঁড় করালো। কোন প্রকার ভণিতা ছাড়াই বলল,
- মম, কাজি ডাকেন, আমি এখনই বিয়ে করব!
শুভ্র ভাইয়ার কথায় আকাশ থেকে পড়লাম। বিয়ে! এখন! কিভাবে কি! আর আমাকে একবার জিজ্ঞেসও করলো না! করবো না বিয়ে! হুহ!
শুভ্র ভাইয়া কথা শুনে মামিমণি অবাক চোখে বলল,
- বিয়ে করবি! এখন! কেমনে কি!
শুভ্র ভাইয়া কঠিন গলায় বলল,
- আমি আর কিছু শুনতে চাই না। আমি কাজিকে কল করেছি, এখনই চলে আসবে।
কল করেও ফেলছে! কিন্তু কখন! আল্লাহ! এখন কি এগুলো ভাবার সময়! কিভাবে বিয়ে আটকাবো তা ভাব!
মামিমণি ভ্রু কুঁচকে বলল,
- পুতুল বিয়ে পেয়েছিস নাকি! আর কনে কে!
আর কিছু বলার আগেই কাজি এসে হাজির। শুভ্র ভাইয়া আমার কাজিকে বসিয়ে আম্মু আর মামিমণিকে আমরা বিয়ে করছি!
আম্মু অবাক হয়ে বলল,
- আমরা মানে!
শুভ্র ভাইয়া সোজাসুজি বলল,
- আমি আর আরোহী!
মামিমণি বিস্ময় নিয়ে বলল,
- তোরা তো দেখছি সুপার ফাস্ট। আমি তো এই নিয়েই ভাবছিলাম আর তোরা কর্মও করে ফেলছিস! বাহ!
শুভ্র ভাইয়া মুচকি হেসে বলল,
- এটা আরোহীর প্লান!
এবার আকাশ কি মহাবিশ্বের সবচেয়ে উঁচু যে জায়গা আছে সেখান থেকে পড়লাম। বিয়ে করবি ভালো কথা! আমাকে ফাসাচ্ছিস কেন! আম্মুর দিকে তাকাতেই একটা ঢোক গিললাম। আম্মু আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আম্মু বলল,
- আগে বিয়েটা হোক, তারপর তোকে দেখছি!
কথাটা বলেই বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দিলো। কবুল বলবো না বলবো না করে শেষে আম্মুর ধমক আর শুভ্র ভাইয়ার চোখ রাঙানি দেখে বলেই দিলাম।  

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔 পর্বঃ ১১

শুভ্র ভাইয়ার রুমে ঘুরে বেড়াচ্ছি। বিয়ে হতেই জোর করে বাপের বাড়ি থেকে শুশুর বাড়ি নিয়ে এসেছে। এতোদিন ছিলো যখন আর একদিন থাকলে কি হতো! ঘরটাও সাজায় নি, যদিও অনেক পরিপাটি কিন্তু বাসর ঘরের লক্ষণ বলতে কিছু নেই! ব্যটা আস্ত একটা বোরিংয়ের ডিব্বা। এখন তো মনে হচ্ছে একটা আনরোমান্টিক বিলাইকে ভালবেসেছি। পুরো জীবন তেজপাতা করে দিলো।
মনে মনে বকে চলছি এমন সময় শুভ্র ভাইয়ার এন্টি। দরজায় টোকা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো। বিলাই তাহলে আদব কায়দা শিখেছে! টোকা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই কাছে গেলাম। শুভ্র ভাইয়া কিছুটা দূরে গিয়ে বলল,
- এসব করা লাগবে না। আমার পছন্দ না।
ভ্রু কুঁচকে বললাম,
- কি পছন্দ না!
শুভ্র ভাইয়া ইতস্তত হয়ে বলল,
- ঐ যে পা ধরে সালাম করা।
শুভ্র ভাইয়ার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। যেখানে বিয়েই করতে চাই নি, সেখানে এসব করবো! আর এভাবেও আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সাথে মাথা নিচু করা আমার পছন্দ না। ভ্রু কুঁচকে বললাম,
- আমি এসব করতে যাবো কেন!
শুভ্র ভাইয়া এবার কাঁচুমাচু করে বলল,
- না মানে বাঙ্গালী মেয়েরা করে তো! তাই বললাম আর কি!
আমি ভাব নিয়ে বললাম, 
- সবাই করে দেখে আমারও করতে হবে নাকি! আর এভাবেও আমি সবার চেয়ে আলাদা, সো এসব আমার দ্বারা আশা করেন না।
শুভ্র ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
- বুঝলাম। এখন পড়তে বসো।
পড়তে বসার কথা শুনে মাথা পড়ে যাবার অবস্থা। অবাক হয়ে বললাম,
- বাসর রাতে কেউ পড়ে নাকি!
কথাটা শুনে শুভ্র ভাইয়ার চেহেরার রূপ পাল্টে গেলো। আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্ট হাসি দিয়ে এগোতে লাগলো। তাকে কাছে আসতে দেখে আমি পিছনে দিকে যেতে লাগলাম। এক কদম, দু কদম করে শেষে পিঠ দেওয়ালে গিয়ে ঠেকলো। পিছনে আর যাওয়ার জায়গা নেই দেখে ঢোক গিললাম। শুভ্র ভাইয়া আমার থেমে যাওয়া দেখে একদম আমার কাছে এসে থামলো। মাঝের দূরত্ব অনেক কমে গেছে। শুভ্র ভাইয়ার নিঃশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। মন আমার ধুপ ধুপ করছে। দম ভারী হয়ে এসেছে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছি। শুভ্র ভাইয়া আরো আমার কাছে চলে আসলো। হৃদস্পন্দন ক্রমশ বেড়ে চলছে। মনে হচ্ছে, জানপাখি এখনই দেহ থেকে উড়াল দিবে। তাকে কাছে আসতে দেখে আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলাম। শুভ্র ভাইয়া আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল,
- তাহলে কি করে বাসর রাতে!
শুভ্র ভাইয়ার কথায় বুকের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে। আরো কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে চল্লিশ দিন পর আমার চল্লিশা হবে বলে মনে হচ্ছে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বললাম,
- বাস   র রা    তে     
শুভ্র ভাইয়া নিজের ঠোঁট আমার কানে ছোঁয়াতেই যা বলছিলাম তাও ভুলে খেয়ে ফেললাম। শরীর একদম ফিজ হয়ে গিয়েছে। শুভ্র ভাইয়া ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,
- বাসর রাতে?
না, আরোহী! এতো জলদি নিজেকে সমর্পণ করবি না। কথাটা মাথায় আসতেই শুভ্র ভাইয়াকে হালকা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে  অন্য পাশে চলে আসলাম। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়েই চলছি। মনে হচ্ছে, কতক্ষণ পর যেন খোলা বাতাসে এসেছি। শ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম তিনি মিটমিট করে হেসে চলছে। নিজের শাড়িটাকে হাত দিয়ে একটু ঠিক করে নিলাম। আমার এই কান্ড দেখে শুভ্র ভাইয়ার হাসির মাত্রা যেন আরো বেড়ে গেলো। আজব! এখানে হাসার কি আছে! তিনি কি বুঝতে পারছে না যে তার হাসি আমাকে অস্বস্তিতে ফেলছে! নিশ্চয়ই এই শুভ্র বিলাই জেনেশুনে এসব করছে। রাগে মাথা একদম ফেটে যাচ্ছে। শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
- বাসর রাতে মানুষ ঘুমায়, আর আমিও ঘুমাতেই যাচ্ছি।
কথাটা বলে বিছানার দিকে পা বাড়ালাম। বিছানায় যেতেই শুভ্র ভাইয়া আমার হাত ধরে ফেললো। আমি ঘুরে তাকাতেই শুভ্র ভাইয়া বললো,
- তোকে এখানে ঘুরাতে কে বলছে!
আমি জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই বললো,
- বিয়ে করেছি বলে মনে করিস না যে তোকে বউ মেনে নিয়েছি। তুই বেশি উড়ছিলি তাই পায়ে শিকল পড়িয়ে দিলাম। দ্যাটস ইট।
শুভ্র ভাইয়ার কথায় মাথায় আগুন ধরে যাচ্ছে। মন তো চাচ্ছে সেই আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করি। রাগী কন্ঠে বললাম,
- আপনার কি মনে হয়, আমি আপনাকে জামাই মানি! মোটেও না। আর আমি বিছানায় শুতে যাচ্ছি তার মানে এই না যে আমি আপনার সাথে ঘুমাবো। আমি মেহমান তাই বিছানায় ঘুমাবো, আর আপনি সোফায়!
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
- তুই মেহমান!
জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললাম,
- না, মেহমান হবো কেন! আমি তো আপনার বউ হই! তাই না? আজব পাব্লিক! নিজে বলে বউ না, এখন আবার জিজ্ঞেস করে, তুই মেহমান! 
শুভ্র ভাইয়া আমার কথাকে পাত্তা না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আসছে আমাকে অপমান করতে! উনিও ভুলে গেছেন, আমি আরোহী! আমাকে কিছু বললে তার দ্বিগুণ শুনতে হবে! আর আমাদের সম্পর্কটাই তো #লাভ_টর্চারের। সো, টর্চারেড তো হবেই! হি হি হি!
মনে মনে এসব ভাবছি এমন সময় শুভ্র ভাইয়া আবার আসলো। হাতে একগাদা বই! বইগুলো বিছানায় রেখে বললো,
- বিয়ে হয়েছে মানে এই না যে পড়া থেকে বেঁচে যাবি, উল্টো আগে যা পড়তি তার ডাবল পড়বি। তোর বই সাথে এনেছি যাতে বাহনা না করিস! এখন পড়া শুরু কর!
#লাভ_টর্চার শুধু আমিই না, উনিও করছে। কেউ কারো থেকে কম না। আর তাই হয়তো আমরা এক হয়েছি। কিন্তু কথা হচ্ছে, জিত যারই হোক না কেন, আসল জিত ভালবাসারই হবে!
আল্লাহ! আমি তো ইমোশনাল হয়ে সেন্টি সেন্টি কথা বলছি। না, আরোহী। তোর হারলে চলবে না! তোর জিত আনতেই হবে! এই শুভ্র বিলাইয়ের কাছে তুই কিছুতেই হারবি না! 
মনে মনে জিতের জন্য নিজেকে তৈরি করলেও জিতবো কিভাবে তাই ভেবে পাচ্ছি না। শুভ্র ভাইয়া এখানে বই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। না পড়ে যাবোই বা কোথায়! মনে মনে এসব ভাবছি তখন শুভ্র ভাইয়া বলল,
- পড়া শুরু কর!
আমি শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললাম,
- আমি জানি, আপনি কেন পড়াতে চাচ্ছেন!
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
- কেন!
আমি মুখে হাসি এঁকে বললাম,
- যেন লোকে না বলে যে, শুভ্রর বোন ডাব্বা পেয়েছে!
শুভ্র ভাইয়ার চেহারা দেখার মতো! কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না! আর এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক! বউ নিজেকে তার বোন হিসেবে পরিচয় দিলে তারই বা কি করার থাকে! তবে যাই হোক! খেলা কিন্তু এখনো আমার হাতেই আছে! কথা ভেবেই মনে মনে হেসে চলছি।
শুভ্র ভাইয়া কিছু না বলে ওয়াসরুমে চলে গেল। বসে বসে ফোন নিয়ে টিপে চলছি এমন সময় শুভ্র ভাইয়া ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে একনজর আমার দিকে তাকালেন। বিছানা থেকে একটা বালিশ হাতে নিয়ে বলল,
- আমি ঘুমাতে যাচ্ছি, সকালে যেন দেখি সব পড়া কমপ্লিট! এতদিন অনেক ফাঁকি দিয়েছিস আর না! 
কথাটা বলেই শুভ্র ভাইয়া সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। আমি এখন কি করবো তাই ভেবে পাচ্ছি না। কেনো জানি মনে অজানা ব্যথা অনুভব করছি। সবকিছু কেমন যেন অগোছালো হয়ে পড়েছে। এভাবে আমাদের বিয়েটা না হলেও পারতো!

বাংলা প্রেমের গল্প 💔 লাভ টর্চার 💔 পর্বঃ শেষ 

বাসর রাতে বসে বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি। কি কপাল! কিছুক্ষণ আগে ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে পড়ি, কে কি দেখবে! ঘুমাতে যাওয়ার জন্য লাইট অফ করতেই বিশাল চিৎকার। ভয়ে লাইট অন করতেই দেখি আমার খাটাশ জামাই আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখে একটা ঢোক গিলে চুপচাপ বই নিয়ে বসে পড়লাম। তিনি আমাকে পড়তে দেখে আবার মনের সুখে ঘুমাতে গেলেন।
বাসর রাতে কেউ বই পড়ে তা নিজেকে দেখে জানলাম। কেন যে এই খাটাশের পিছনে লাগতে গিয়েছি! জীবনটা ত্যানা ত্যানা করে দিলো। দেখো, আমার ঘুম নষ্ট করে কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে! মন তো চাচ্ছে লাথি মেরে উগান্ডায় ফেলে দিই। উগান্ডারিয়ান-রাও তার থেকে ভালো হবে। ব্যটা খাটাশ!
মনে মনে বকা দিয়ে আবার বইয়ের দিকে তাকালাম। দেখে মনে হচ্ছে চাইনিজ ভাষা পড়ছি। চাইনিজ বিলাই আর কিছু পায় নি তাই চাইনিজ বই ধরিয়ে দিয়েছে। কেউ আমাকে এই চাইনিজ বিলাই থেকে বাঁচাও! ভেবেই দুক্কু দুক্কু ফিল হচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়লো আমার সেই প্রাণপ্রিয় বেস্টুর কথা! নিজে একা জ্বলবো কোন কথা! ওকে নিয়ে জ্বলবো। কথাটা ভেবে দাঁত কেলিয়ে ফোনটা হাতে নিলাম। ফোনে মেধাকে ডেয়াল করছি এমন চোখ গেল শুভ্র ভাইয়ার উপর। আমাকে দেখেই চোখ বন্ধ করে নিলো। আহা! আমার উপর নজরদারি করা হচ্ছে! বুঝাচ্ছি মজা!
ফোনে মেধার নম্বর ডায়াল করে কানে নিলাম। কল রিসিভ হতেই বললাম,
- হ্যালো, মুরাদ!
মেধা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
- জানি, ভুল করেছি। তাই বলে সবসময় এই নামে পচাতে হবে নাকি!
আমি কন্ঠে অতিরিক্ত আদর মিশিয়ে বললাম,
- এতো ছোট ছোট কথায় রাগ করলে কি হয়! তুমি জানো না, আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি!
মেধা সন্দেহভাজক কন্ঠে বলল,
- বিয়ে হওয়ার খুশিতে পাগল হয়ে গেলি নাকি! বাসর রাত ছেড়ে এসব কি আবোল তাবোল বকছিস!
বাসর রাত না, কচু! পড়িয়ে পড়িয়ে ইতিহাস উল্টিয়ে দিলো! কিন্তু এখন এসব বলা যাবে না! তাই কন্ঠে মিশ্রিত করে বললাম,
- কি যে বলো! তোমাকে ছাড়া কি আমি বাসর করতে পারি!
মেধা দ্রুত কন্ঠে বলল,
- নাঊজুবিল্লাহ! কি বলিস এসব! 
আমি শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকালাম। বিলাই চোখ দুটো বন্ধ থাকলেও তার রাগ স্পষ্ট পরিমাণ করতে পারছি। কিন্তু এদিকে আমার বেস্টুর হার্ট ফেল করার অবস্থা! মরে টরে গেলে এমন অদ্ভুদ বেস্টু কোথায় পাবো! তাই ক্ষীণ কন্ঠে বললাম,
- আমি কি বলতে চাই, বুঝো না! 
মেধা কিছুক্ষণ চুপ থাকলো, হয়তো কিছু ভাবছে। কিছুক্ষণ পর বলল,
- তাহলে জিজকে জ্বালানো হচ্ছে! মনে রাখিস, তোর বিয়ে উপলক্ষে কালা ভুনা পিজ্জা চাই! না দিলে জিজকে বলে দিবো যে তুই কিভাবে তাকে কালা ভুনা করছিস!
তোর বিয়ে হোক আগে! সব শোধ তুলবো! লাজুক কন্ঠে বললাম,
- হোটেলে চলে এসো! হয়ে যাবে!
মেধা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
- সত্যি, দোস্ত! লাবু!
আমিও কন্ঠে ভালবাসা ঢেলে বললাম,
- লাভ ইউ টু!
কথা শেষ করে আবার পড়তে বসলাম। আহা! কি আনন্দ লাগছে! শুভ্র ভাইয়া চোখ বন্ধ করে সে নিজেকে শান্ত করছে তা বুঝতে পারছি। তিনি ভুলে গেছেন যে, আরোহীর পায়ে শিকল পড়ানো অসম্ভব ব্যাপার! এখন বুঝো মজা! মনের সুখে গান ধরলাম, আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!
সকাল সকাল উঠেই চলে গেলাম রান্নাঘরে। কেননা, 1st impression is the last impression  তাই সবার জন্য নুডুলস রান্না করিছ। নুডুলস রান্না করতে করতেই মামিমণির আগমন। আমাকে রান্না করতে দেখে মামিমণি একটা রাগী লুক দিয়ে বলল,
- তোকে দেখে কেউ বলবে যে, তুই নতুন বউ? সবাই বলবে আমি নতুন বউকে দিয়ে না জানি কতো কাজ করাই। আজ থেকে তোর কিচেনে আসা ব্যান। তোর কাজ হলো খাওয়ার সময় ডাইনিং টেবিলে বসে খাওয়া আর আমার ছেলেকে খুশি রাখা
আমি মুখ ছোট করে বললাম; প্রথম কিচেনে এসেছি তাও চলে যেতে বলছেন। Not fair  আর নুডুলস বানানো কোনো ব্যাপার নাকি।
- তোর জন্য কোনো ব্যাপার না হলেও আমার জন্য ব্যাপার। আর কাজ করার জন্য তো আমাদের লোক আছে। তাদের কোনো সাহায্যের দরকার হলে আমি করব, তোর টেনশন করতে হবে না। এখন লক্ষ্মী বউমার মতো আমার সাথে চল। 
কথাটা বলে মামিমণি আমাকে তার রুমে নিয়ে গেল। আলমারি থেকে একটা গহনার বক্স হাতে দিল। নিজেই তা খুলে দেখিয়ে বলল; - দেখতো পছন্দ হয় নাকি?
বক্সে একটা দামী হার চিকচিক করছে। তা দেখে বললাম;
- এটার কি প্রয়োজন ছিল?
মামিমণি বক্সটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
- প্রথম কিছু রান্না করলি খুশি হয়ে দিব না বুঝি। এখন বল কেমন লেগেছে?
আমি খুশি হয়ে বললাম,
- অনেক সুন্দর।
সবাই ডাইনিং টেবিলে চলে এসেছে। সবাইকে নুডুলস সার্ভ করেছি, শুভ্র ভাইয়া বাদে। তা দেখে মামিমণি বলল,
- ওকে দেলি না যে!
আমি একনজর শুভ্র ভাইয়াকে দেখে বললাম,
- উনি খাবেন না।
আমার কথায় শুভ্র ভাইয়া অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। মামিমণিও অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন,
- এ কেমন কথা! খাবেন না কেন!
আমি শুভ্র ভাইয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললাম,
- তা তো উনিই জানেন!
আমার কথা শুনে মামিমণি শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে বলল,
- তুই না করেছিস!
শুভ্র ভাইয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আমি একদিকে চাপা হাসি হাসচ্ছি। শুভ্র ভাইয়া আমাকে চোখে দেখিয়ে মামিমণিকে বলল,
- না মানে, কি না বানিয়েছে কে জানে! তাই বলছিলাম যে    
মামিমণি কঠিন গলায় বলল,
- বলাবলি বন্ধ! চুপচাপ খা। আরোহী, ওকে নুডুলস দে।
এখন বুঝো আরোহী কি জিনিস! এমনে তো খেতে চাইতে না, এখন এভাবে খাও। মনে মনে কথাগুলো ভাবছি আর নুডুলস দিচ্ছি। 
সবাই খাচ্ছে এমন সময় মামা বলল,
- শুভ্র, এখন তো বিয়ে করলি! আমরা কেউ কিছু বলি নি। তবে বিয়ে যখন করেছিস এখন না হয় পরিবারিক বিজনেসটা সামাল দে!
শুভ্র ভাইয়া মামার দিকে একনজর তাকিয়ে খেতে খেতে বলল,
- ড্যাড, আপনি জানেন, আমি নিজে কিছু করতে চাই। নিজের বিজনেস দাঁড় করাতে চাই।
শুভ্র ভাইয়াকে মামিমণি বাধা দিয়ে বলল,
- এই বিজনেসও তো তোর!
শুভ্র ভাইয়া মামিমণিকে কিছু বলবে তার আগেই আমি বললাম,
- উনি না হয় নিজেরটা সামলাক! মামাকে আমি হেল্প করবো নে!
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
- তোর মতো পিচ্ছি বিজনেস সামলাবে! কি না কি করবি! না বাবা, দরকার নেই। আমিই বরং দুটোই সামলাবো।
আমি মুখ ছোট করে বললাম,
- কিন্তু     
মামিমণি আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
- তুই বরং শুভ্রর হেল্প করিস কেমন!
শুভ্র ভাইয়া একনজর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
- আমার এমনেও অ্যাসিস্টেন্ট দরকার! তুই এই কাজটা বেশ ভালোই করতে পারবি।
খেতে খেতে কথাটা বলল শুভ্র ভাইয়া। শেষমেশ শুভ্র ভাইয়ার অ্যাসিস্টেন্ট হবো! এদিনও দেখে বাকি ছিলো! আল্লাহ! রহমত নাজিল করো!
সন্ধ্যায় হলরুমে বসে মোবাইল টিপছি এমন সময় ঝাড়ুর এন্ট্রি। আমাকে দেখে একটা রাগী লুক দিয়ে উপরে চলে গেল। নিশ্চয়ই শুভ্র ভাইয়ার সাথে দেখা করতে এসেছে। এই মাইয়ার উপর এমনেও বিশ্বাস নেই। যখন তখন জড়াজড়ি করে। কিন্তু কি করব! আইডিয়া! কিচেনে গিয়ে মামিমণিকে বললাম, মেহমান এসেছে। ব্যস! আর কি লাগে! আমার অতিথিপরায়ণ মামিমণি আমার কাছে খাবার ভর্তি ট্রে দিয়ে বলল,
- যা, গিয়ে শুভ্রর বন্ধুকে দিয়ে আয়!
এই সুযোগেরই তো অপেক্ষায় ছিলাম। লাফাতে লাফাতে চলে গেলাম শুভ্র ভাইয়ার রুমে, থুক্কু এখন এটা আমাদের রুম। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই হাতে থাকা ট্রে টা পড়ে গেল। শুভ্র ভাইয়া সরে দাঁড়ালেন। শুভ্র ভাইয়ার চোখে আমার জন্য অভিমান দেখছে পারছি। কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেখান থেকে ছুটে চলে এলাম। শুভ্র ভাইয়া পিছন থেকে ডেকে চলছেন। কিন্তু আমি যে থামতে পারছি না। অবাধ্য চোখের জলগুলো ঝরেই যাচ্ছে।
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি। অবাধ্য চোখের জলগুলো এখনও ঝরেই যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে রুমে প্রবেশ করতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া আর রিয়া একে অপরের অনেক কাছে, এতোই কাছে যে এক বিন্দু পরিমাণ দূরত্বও তাদের মাঝে নেই। আর রিয়া তার ঠোঁট শুভ্র ভাইয়ার দিকে     । আমারই দোষ! আমিই পাগল ভেবেছিলাম যে, শুভ্র ভাইয়া আমাকে ভালবাসে। আরেহ! এতো বছর যে অপমান করে গেলো তার কাছে ভালবাসার আশা করাই পাপ! এই পাপটাই আমি করেছি! আর এর শাস্তি আমি পাচ্ছি। ভীষণ ভাবে পাচ্ছি।
- তোর এই কান্নার জন্যই বাংলাদেশের অবস্থা ডুবুডুবু!
শুভ্র ভাইয়ার কথা শুনে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। এতো কিছুর পরও তার কোন যায় আসে না। যায় আসবেই বা কেন! সে কি আমাকে ভালবাসে নাকি! তিনি তো ঐ ঝাড়ুকে ভালবাসে!
- এখানে এতো রিয়েক্ট করার কি আছে বুঝি না!
শুভ্র ভাইয়ার কথায় তার দিকে তাকালাম। কঠিন গলায় বললাম,
- সব দোষই আমার! রিয়েক্ট করেও দোষই করে ফেলেছি! তবে আজ আমি আমার সব দোষ শুধরে নিবো। আর জ্বালাতন করবো না আপনাকে! আমি আপনার ঐ ঝাড়ুকে নিয়ে থাকুন, আমি আমার মতো করে থাকবো।
কথাটা বলে চলে আসতে নিতেই শুভ্র ভাইয়া আমার হাত ধরলো। আমাকে তার দিকে ঘুরালো। আমি এখনো অন্যদিকে মুখ করে আছি।
- মুখটাও দেখবি না, এতো রাগ! যাই হোক! তো কি যেন বলছিলি ঐ ঝাড়ু মানে রিয়া, তাই না? এখন ওর কাছে গেলে সত্যি সত্যি ঝাড়ু রূপ ধারণ করবে। আমার বিয়ের কথা শুনে ছুটে এসেছিলো। আমাকে নাকি ভালবাসে! আমি না বলাতে উপরেই চড়ে বসেছিলো। ওকে থামাবো তার আগেই তুই চলে এলি। আর অর্ধেকটা দেখেই আমাকে অপরাধী বানিয়ে দিলি। 
চোখে দেখা ভুল হয় তা আমিও জানি। আর এটাও জানি যে এই ঝাড়ু ইচ্ছে করে সব করেছে। যখন চলেছিল তখনই বুঝেছিলাম কিছু না কিছু করবে। তাই তো উপরে দেখতে আসা! তবে শুভ্র ভাইয়াও দুধে ধোয়া না! অনেক কষ্ট দিয়েছে আমাকে। অভিমানী সুরে বললাম,
- আমি কে অপরাধী বানানোর! 
শুভ্র ভাইয়া মুচকি হেসে বললো,
- আমার বউ!
এখন আসছে বউ বলতে! তখন কি বলছিলো! মানি না!
আমি কিছু বলছি না দেখে শুভ্র ভাইয়া বলল,
- আমার বউ বুঝি অনেক রাগ করেছে। জানিস, যখন থেকে প্রথম ভালবাসা বুঝি তখন থেকেই তোকে ভালবাসি। কিন্তু ইসলামে যে বিয়ের আগের প্রেম হারাম। তাই তোর থেকে দূরে দূরে থাকতাম। কিন্তু তুই যখন নিজেই কাছে আসতি তখন নিজেকে থামাতে কষ্ট হতো, তাই তোকে নানাভাবে অপমান করতাম, যেন তুই কাছে না আসিস! আমি তোকে এতো দ্রুত বিয়ের জালে বাঁধতে চাই নি। ভয় হতো এসবে পড়ে যদি তোর পড়াশুনা, তোর ইচ্ছা, তোর স্বাধীনতা এসব থেকে দূরে সরে যাস! আমি তোকে মুক্ত পাখির মতো উড়তে দেখতে চেয়েছি। কিন্তু তুই যা শুরু করেছিলি, শেষে না পেরে বিয়েটা করতে হলো!
ভ্রু কুঁচকে বললাম,
- শেষে না পেরে! মানে আপনি বাধ্য হয়ে আমাকে বিয়ে করেছিলেন!
শুভ্র ভাইয়া অন্য দিকে মুখ করে হেসে চলছে। হাসি চেপে মুখে করুণ ভাব এনে বলল,
- তো কি করতাম, বল! যেভাবে ফুসকাওয়ালাদের পিছনে পড়েছিলি, শেষে দেখা যেতো তোর জামাইকে দুলাভাই ডেকে বেড়াচ্ছি। না, বাবা। রিস্ক নিয়ে লাভ নেই! তাই বিয়েটা করেই নিলাম!
আমার রাগ এখনো ভাঙ্গে নি। কাল রাতে কতো কিছুই না করলো! তখন তো বিয়ে হয়েই গিয়েছিলো, তাহলে এতো কিছু করার কি দরকার ছিলো! মুখ ফুলিয়ে বললাম,
- আগে না হয়, বিয়ের আগের প্রেম ছিলো! হারাম ছিলো! কালকে তো বিয়ে হয়েছিলো। রাতে এমন করলেন কেন!
শুভ্র ভাইয়া দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
- আমার বউয়ের বাসর করার ইচ্ছা ছিলো বুঝি!
আমি রাগ দেখাতেই বললো,
- না মানে, এতো দিন তুই কষ্ট দিলি, ভাবলাম এক রাত না হয় আমিই কষ্ট দিই!
আমি ভাব নিয়ে বললাম,
- ওটা কষ্ট না, #লাভ_টর্চার ছিলো। 
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
- #লাভ_টর্চার!
আমি হুম বলতেই শুভ্র ভাইয়া আমাকে কোলে তুলে নিলো। কানের কাছে মুখ দিয়ে বলল,
- এতদিন তুই #লাভ_টর্চার করেছিস! এখন থেকে আমার পালা!
কথাটা কানে আসতেই শুভ্র ভাইয়ার বুকে মুখ লুকালাম। তার #লাভ_টর্চার সহ্য করতে যে আমি সারা জীবন রাজি আছি।
------------------------------The End------------------------------
(শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এতো এতো ভালবাসা দিয়েছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আশা করি, ভবিষ্যতেও পাশে থাকবেন। শ্রীঘই নতুন গল্প নিয়ে হাজির হবো। ভালবাসা রইলো সকলের জন্য❤)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ajkerit
ajkerit
ajkerit
ajkerit