বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ১৪ Bangla Islamic Story 🌺 Alo 🌺 No- 14
বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ১৪ |
বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ১৪
প্রায় আধা ঘন্টা পর আলো জ্ঞান ফিরলো। এত সময় ভাবনাই ওকে ধরে রেখেছিলো। আলো চোখ খুলে দেখে ভাবনা। কিছু সেকেন্ড যাবার পরই আলোর মনে পড়ে ভোরের কথা আর সাথে সাথে কেঁদে ওঠে। আর এক মুহূর্তও বসে থাকে না দৌড়তে শুরু করে। আলোর পিছন পিছন ভাবনাও আলো আলো করে চিল্লাতে চিল্লাতে দৌড় শুরু করে। অফিসের সবাই কিছুই বুঝতে পারল না। সবাই ওদের দৌড় দেখছে।
আলো জানেও না ভোর কোন হসপিটালে আছে। অথচ দৌড়াচ্ছে ভোরের কাছে যাবে বলে। মেয়েটার তো কোন হুসই নাই। পাগলের মতো কাঁদছে আর দৌড়াচ্ছে। রিক্সা ডাক দিলো।
রিক্সাওয়ালাঃঃ কোথায় যাবেন আপা??
ভাবনাঃঃ সিটি মেডিকেল হসপিটালে চলুন তাড়াতাড়ি। আলো উঠে পড়।(( আলো ভাবছিলো কোথায় যাবে আর তখনই পিছন থেকে ভাবনা এসে পড়ে বলল))
আজ যেন রিক্সা চলছেই না। আলো বার বার বলছে দ্রুত চালাতে। রিক্সাওয়ালাও চালাচ্ছে কিন্তু ঐ যে কথায় আছে না বিপদে রাস্তা দীর্ঘ হয়।
প্রায় ২০মিনিট পর রিক্সা মেডিকেলের সামনে থামলো। আলো দ্রুত রিক্সা থেকে নামতে গিয়ে হাতের কনুই একটু নিচে অনেকটা কেটে যায় কিন্তু আলোর সেদিকে কোনো লক্ষ নেই। আলো দৌড়াচ্ছে। ভাবনা রিক্সা ভাড়া দিয়ে আলোর পিছনে দৌড়াচ্ছে।
ভাবনাঃঃ আলো Third floor...
ভাবনার কথা কানে যেতেই third floor এর দিকে ছুটে গেলো। যেতেই দেখে শায়লা চৌধুরী বসে কাঁদছে। আলো দৌড়ে গিয়ে শায়লা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরলো।
আলোঃঃ মা উউউনি কোথায়? মা উনি কোথায়?
ভোরের মাঃঃ O.T.তে
আলোঃঃ মা আমি ওনার কাছে যাবো।
ভোরের মাঃঃ এখন না। O.T.তে কাউকে যেতে দেয় না। শান্ত হও।
ভাবনাঃঃ শান্ত হ আলো। পাগলামি করিস না। নিজেকে শক্ত কর।
আলোঃঃ আমি ওনার কাছে যাবো। আমাকে যেতেই হবে।
বলেই চলে যাচ্ছিলো ভাবনা আর শায়লা চৌধুরী ধরে বসলো আলোকে। কিন্তু কারো কথাই শুনছে না উল্টো ভোরের যাওয়ার জীদ ধরে বসেছে। অবশেষে শায়লা চৌধুরী বাধ্য হয়ে আলোকে চড় দিলো একটা। আলো শায়লা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বসলো।
প্রায় ১ ঘন্টা পর ডক্টর বের হলো। ডক্টরকে দেখে....
ভোরের মাঃঃ ডক্টর আমার ভোর ভালো আছে?
ডক্টরঃঃ আপনি patient এর কে?
ভোরের মাঃঃ মা...
ডক্টরঃঃ আর উনি?? ((আলোকে উদ্দেশ্য করে))
আলোঃঃ ওয়াইফ। আমি ওনার সাথে দেখা করতে চাই।
ডক্টরঃঃ এখন না। একটুপর কেবিনে ওনাকে শিফট করা হবে তখন।
ভোরের মাঃঃ ওর কি হয়েছে??
ডক্টরঃঃ তেমন কিছু না। মাথাটা কেটে গেছে তাই ব্লাড অনেক বের হয়েছে আর...
আলোঃঃ আর? আর কি হয়েছে ওনার ডক্টর??
ডক্টরঃঃ ডান পা ভেঙ্গে গিয়েছি। কিন্তু নিয়মিত ওষুধ আর প্রোপার যত্ন নিলে খুব শীঘ্রই উনি আবার হাটতে পারবে।
টেনশন করার কিছু নেই। আসছি।
ডক্টর চলে গেলো আর আলো ধপ করে বসে পড়ল।
২০ মিনিট পরই আলো আর শায়লা চৌধুরী ভোরকে দেখতে কেবিনে ঢুকল। আলো তো ভোরের কপালে আর পায়ে ব্যান্ডেজ দেখে কান্নার আওয়াজ বেরে গেলো। শায়লা চৌধুরীও কাঁদছে। ভাবনা সামলাচ্ছে ওদের। কিন্তু ভালো মানুষটা এমন হয়ে গেলো এটা কি আর সহ্য করার মতো? ভোরের এখনো জ্ঞান ফিরেনি।
আলো আর শায়লা চৌধুরী ভোরের দুপাশে বসে আছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো।
সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই তখন ভোরের জ্ঞান এলো। জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে....
ভোরঃঃ মা মা...
ভোরের মাঃঃ এইতো আমি। এইতো ভোর এই আমি।
ভাবনা ডক্টরকে ডাকতে চলে গেলো।
আলো বসা থেকে উঠে ভোরের দিকে তাকিয়ে রইল। ভোর শায়লা চৌধুরীর হাতটা ধরল। এরমধ্যে ডক্টর এলো....
ডক্টর ভোরকে দেখে...
ডক্টরঃঃ হুম ভয়ের কিছুই নেই। He is ok..
আলোঃঃ ওনাকে বাসায় নিতে পারব?
ডক্টরঃঃ জ্বী কালই ওনাকে নিয়ে যেতে পারবেন। আর মেডিসিন কন্টিনিউ করবেন। আর্লি সুস্থ হয়ে যাবে।
বলেই ডক্টর চলে গেলো। আর ভোর মাথাটা ঘুরিয়ে দেখল আলো ভোরের দিকে তাঁকিয়ে আছে করুন দৃষ্টিতে। ভোর আলোর তাঁকিয়ে ভাবছে....
***ইশশ কি করছে মেয়েটা কান্না করে চেহারার। এমনিতেই কালো তার উপর কান্না করে চোখ মুখ ফুলে আরও কালো দেখাচ্ছে। আর মা মনে হয় এই মেয়েকে সামলাতে গিয়ে নিজে শক্ত করে রেখেছে। মেয়েটাও কি বোকা এত কান্নার কি আছে? আমি মরে গেলেই বা কি? ওর তো ক্ষতি হবে না। যা হবার আমার মায়ের হবে। কিন্তু মেয়েটার এইরকম চেহারা দেখতে আমার ভালো লাগছে না। কোথায় যেন অদ্ভুত একটা কষ্ট লাগছে মেয়েটার জন্য****
ভোর চোখটা আস্তে বন্ধ করে রাখল। কিছুক্ষণ পর আলোর বাবাও হসপিটালে এলো। ভাবনাই আলোর বাবাকে জানিয়েছে। আলো শাহেদ সাহেবকে দেখে কান্না আরও ভেঙ্গে পড়ল। শাহেদ সাহেব মেয়েকে ঠান্ডা করল। তারপর শায়লা চৌধুরী আর শাহেদ সাহেব কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো। ওনাদের পিছন পিছন ভাবনাও বের হয়ে গেলো। ভোর চোখ বন্ধ করে আছে এখনো। চোখ বন্ধ রেখেই বললো....
ভোরঃঃ আপনার চোখে কি এখনো পানি আছে??
আলোঃঃ না। ((আস্তে করে চোখ মুছতে মুছতে))
ভোরঃঃ থাকলে মুছে ফেলুন আমার দেখতে ভালো লাগছে না।
আলোঃঃ মুছে ফেলছি।
ভোর চোখ খুলল....
ভোরঃঃ এত কান্নার কি আছে? চেহারার কি অবস্থা করেছেন দেখেছেন??
আলোঃঃ আপনি আমাকে তখন বারন না করলেও পারতেন। আমি আপনার সাথে এলে এসব কিছু হতো না।((কান্না করতে করতে))
ভোরঃঃ কান্না করলে কিন্তু আপনার বাবাকে বলবো আপনাকে নিয়ে চলে যায় যেন।
আলো চোখ মুছে ভোরের কপালে একটা চুমু একেঁ দেয়।
ভোরঃঃ দিলেন তো মাথা ব্যথা বাড়িয়ে? কি বাজে চুমু। (( মুচকি হেসে))
আলোর রাগ হলো তাই ধুম করে ভোরের ঠোঁটে জোড়া দখল করল। একটুপরই ছেড়ে দিল।
ভোর কিছু না বলে চোখটা বন্ধ করে রাখল। আর আলো ভোরের হাত ধরে পাশে বসে রইল।
রাত ৮টা প্রায়।আলোর বাবা চলে গেছে। ভাবনাও চলে গেছে। শায়লা চৌধুরী যেতে চাচ্ছে না। কিন্তু আলো জোর করে তাকে পাঠিয়ে দিচ্ছে । আলোর জোরাজুরি কাছে হার মেনে শায়লা চৌধুরীও চলে যেতে বাধ্য হলো।
চলবে..............
((ভুল-ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবে। পরবর্তী পর্ব পেতে সাথে থাকুন।ধন্যবাদ🙂))
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url