ajkerit

বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ১১ Bangla Islamic Story 🌺 Alo 🌺 No- 11

বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ১১
বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ১১


বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ১১

আজ আর তেমন কোনো ফাইল নাই যা ভোরের কেবিনে বসে করতে হবে।  আলো নিজের ডেস্কে বসেই কাজ করছে আর ভোরও তবে আজ লাঞ্চের পরে একটা মিটিং আছে। আলোর সে মিটিং এ প্রেজেন্টেশন দেখাতে হবে। তারই প্রস্তুতি আলো নিচ্ছে।

আলো প্রস্তুতি নিতে নিতে ভুলেই গিয়েছে লাঞ্চের সময় যে হয়ে গিয়েছে। ভোর এদিকে ঘড়ি দেখছে বার বার।  দরজায় ও তাকাচ্ছে আলো কেনো আসছে না এটা দেখার জন্য।

কিছুক্ষণ পরই আলো এক প্রকার দৌড়ে লাঞ্চ নিয়ে ভোরের কেবিনে এলো। ভোর আলোকে দেখে ফ্রেশ হতে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বসলো আর আলো খাবার প্লেটে নিয়ে নিজের হাতে মেখে ভোরকে বলল.....

আলোঃঃ হা করুন। একদম সময় নাই।  আমি আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি।  আপনি নিজে হাতে খেলে আপনার আবার ফ্রেশ হবার জন্য যেতে হবে। এতো সময় নাই। হা করুন তাড়াতাড়ি.....

((ভোরের মুখের কাছে খাবার নিয়ে))

ভোরঃঃ বুঝছি আজ আমার লাঞ্চ হবে না।

((বলেই ভোর উঠে যাচ্ছিলো...আলো জোর করে বসিয়ে দেয়))

আলোঃঃ কালো হাত তার জন্য খাবেন না? কালো শরীরটা তো ঠিকই জোর করে ভোগ করছিলেন। কালো ঠোঁটটাও তো খেয়েছিলেন তখন এসব ভালো না লাগা কই ছিলো?? আর এখন আপনার স্ত্রী আমি।  কেনো মানছেন না এটা? আপনার মানতে হবে না আমিই আপনার স্ত্রী এটা আমি মানলেই হবে। আর এই কালো হাতেই খেতে হবে।

((বলেই জোর করে ভোরের মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিলো))

ভোরঃঃ এই মেয়েটা সবসময় এতো ঝাঁঝালো কথা বলে মন চায় কষে এক থাপ্পড় দিতে তবে আজকের খাবারের স্বাদটা ভিন্ন লাগছে কেন?? কিছু কি মিশিয়েছে? ((মনে মনে))

ভোরঃঃ এ কি আপনি খাচ্ছেন কেন? ((অবাক হয়ে))

আলোঃঃ আমি কি না খেয়ে থাকবো?? ((অবাক হয়ে))

ভোরঃঃ না।  আমার খাওয়া শেষ হলে খেতে পারতেন। এখন আপনার হাত একাবার মুখে যাচ্ছে আর সেই হাত একবার আমার মুখে ঢুকবে। ((অসহ্য ভাব নিয়ে))

আলোঃঃ আজ আমারও প্রেজেন্টেশন আছে ভুলে যাচ্ছেন কেন?? আমারও সময় নাই। আর আজকের পর লাঞ্চ আমার হাতেই খেতে হবে এবং একসাথেই খাবো। অবশ্য প্রতিটা মেয়ের একটা স্বপ্ন থাকে তার হাসবেন্ড তাকে খাইয়ে দিবে তার হাতে। আমারও ছিলো স্বপ্নটা কিন্তু সব স্বপ্ন সবার জন্য না। তাই আমার যত ছোট ছোট স্বপ্ন ছিলো সব ধীরে ধীরে মাটি চাপা দিচ্ছি।  আসলে কি জানেন??

ভোরঃঃ কি??

আলোঃঃ কালো মেয়েদের কখনো কোনো স্বপ্ন দেখতে হয় না।

এইটুকু বলে আলো আর কোনো কথা বললো না চুপচাপ ভোরকে খাওয়াতে থাকলো নিজেও আর খেলো না।

ভোরকে খাওয়ানো শেষে আলো চলে যাচ্ছিলো। ভোর আলোর হাত ধরে.....

ভোরঃঃ খাবেন না? আপনি তো খাননি!

আলোঃঃ না। খুদা নেই।

ভোরঃঃ না খেলে প্রেজেন্টেশন খারাপ হবে। খেয়ে যাবেন বলে দিলাম।

((বলেই ভোর উঠে গেলো আর আলো মুচকি একটা হাসি দিয়ে খেতে শুরু করলো))

সবাই মিটিং রুমে চলে এসেছে শুধু আলো বাদে।  একটুপর আলোও চলে এলো। এসেই আলোর মাথা গরম হয়ে গেলো মিরাকে দেখে কারন ভোরের পাশের চেয়ারে বসেছে। আলো রাগ ভিতরে রেখে ভোরের ডান পাশের চেয়ারে বসলো। আলোর পাশে বসেছে ভাবনা। ও ভাবনা এই অফিসের সবথেকে আলোর প্রিয় কলিগ। ভাবনা যেন আলোর বোনের মতো। ভাবনার সাথে আলো সব শেয়ার করে। ওদের যে বিয়ে হয়ে গিয়েছে তা এই অফিসে শুধু ভাবনাই জানে। ভাবনার কাছে আলো কিছু লুকায় না। সব বলে দেয়। ভাবনাও আলোকে প্রচন্ড ভালোবাসে। ওরা দুজনই মিরাকে দুচোখে দেখতে পারে না। এরমধ্যে মিটিং শুরু হলো আর প্রথমে আলোর প্রেজেন্টেশন। ভাবনা আলোকে ইশারায় best of luck বললো। আর মিরা তা দেখে একটা মুখ ভেংচি কাটলো। 

২০ মিনিট পর আলোর প্রেজেন্টেশন শেষ হলো। এবার ভোরের সবটা বুঝিয়ে দেবার পালা। ভোর কোর্টটা খুলে রাখলো। 

ভোর লেকচার দিচ্ছে সবাই খুব মনযোগ সহকারে শুনছে। ভোরের চোখ আলোর দিকে গেলো আর সাথে সাথে একটা চোখ টিপ দিয়ে দিলো। ভোর একটু থ মেরে গিয়ে সাথে সাথে নিজেকে ঠিক করে। লেকচার দিচ্ছে আবারও চোখ পড়তেই আলো ইশরায় বললো ** হট**।। ভোর আর আলোর দিকে তাকালো না। আলো মুচকি মুচকি হাসছে নিচে তাকিয়ে। ভাবনা খেয়াল করলো আলো হাসছে কিন্তু এখন কিছু বললো না।

প্রায় ১ ঘন্টা পর ভোরের লেকচার শেষ হলো আর মিটিংও। এই ১ ঘণ্টা ভোর যতবার আলোর দিকে চোখ দিয়েছে ততবারই আলো ভোরকে উল্টা পাল্টা কথা ইশারায় বলেছে।

মিটিং শেষে যে যার ডেস্কে যাচ্ছে শুধু ভাবনা আর আলো বাদে। ওরা শেষে বের হচ্ছে..

ভাবনাঃঃ এই আলো তুই কি করছিলি যে স্যার ৫সেকেন্ডের মতো থ মেরে গেছিলো??

আলোঃঃ চোখ টিপ মেরেছিলাম ওনারে।

ভাবনাঃঃ তুই এত পাজি হইছিস?

আলোঃঃ এটা তো কম আরও কত কিছু বলছি। হট ও বলছি।

ভাবনাঃঃ ওরে বদমাইশ মেয়ে। তবে স্যার কিন্তু সত্যি হট এন্ড হ্যান্ডসাম।  তুই বিয়ে না করলে একটা চান্স নিতাম।

আলোঃঃ উহুম ও জিনিস এক পিছ তাও আলোর। আর আমার বরের দিকে লুচু চোখে কম তাকাবি ভাবনা।((রাগী মুডে))

ভাবনাঃঃ Use করা মাল আমি নি না। হুহ((মুখ ভেংচি কেটে))

আলোঃঃ বদমাইশ মাইয়া চল যাই।

দুজনই হাসতে হাসতে যে যার ডেস্কে চলে গেলো। এখন আর অফিসে কারোরই কোন কাজ নাই তাই সবাই চলে যাচ্ছে। আলোও নিজের ব্যাগ গুছিয়ে ভোরের কেবিনে গেলো।ভোরও বের হবে এমন প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

দুজন একসাথে বেরিয়ে পড়লো। ভোর ড্রাইভ করছে...

আলোঃঃ স্যার???

ভোরঃঃ হুম...

আলোঃঃ বাবাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে আপনি আমাকে বাড়ি নিয়ে চলুন বাবার কাছে প্লীজ((কান্না মাখা কন্ঠে))

ভোরঃঃ ওকে... 

আলো ফোন বের শায়লা চৌধুরীকে কল দিলো....

ভোরের মাঃঃ হ্যালো আলো কি হয়েছে মা?

আলোঃঃ মা বাবার যাচ্ছি। আজ আর ফিরব না। বাবাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।

ভোরের মাঃঃ ভোরও যাবে??

আলোঃঃ হ্যাঁ মা।

ভোরের মাঃঃ ও তো থাকতে চাবে নারে তখন?

আলোঃঃ আমি আছি তো চিন্তার কারন নাই।

ভোরের মাঃঃ আচ্ছা ভালোভাবে যা। রাখছি।

আলোঃঃ আচ্ছা মা।

ফোন কেটে দিয়ে আলো তো মনে মনে বিশাল খুশি।

প্রায় ১ঘন্টা পর আলোর বাড়ির গেটের সামনে গাড়ি থামলো। আলো নেমে গিয়ে গেটটা পুরো খুলে দিয়ে আবার গাড়িতে বসলো...

আলোঃঃ গাড়ি বাড়ির ভিতর নিয়ে চলুন।

ভোরঃঃ কেন? বাড়ির ভিতর ঢুকাবো কেন? আর আপনি আবার গাড়িতে উঠছেন কেন?

আলোঃঃ আপনিও আমার সাথে আজ এখানেই থাকবেন তাই।

ভোরঃঃ না। আমি বাসায় যাবো। আপনি নেমে পড়ুন।

আলোঃঃ আমি কিন্তু মাকে বলবো আপনি আমার গায়ে হাত তুলছেন।

ভোরঃঃ আমি কখন আপনার গায়ে হাত তুলছি? ((অবাক হয়ে))

আলোঃঃ তুলেননি কিন্তু বলবো তুলছেন যদি আমার সাথে আজ এখানে না থাকেন তবে।

ভোরঃঃ আপনি কি পেয়েছেন আমাকে? যত্তসব।

রাগী মুডে বলেই ভোর গাড়ি বাড়ির ভিতর নিলো। তারপর আলো নেমে গেট আটকে দিলো। ভোরও গজগজ করতে করতে গাড়ি থেকে নামলো।

এরপর বাড়ির বেল টিপলো।

 একটুপর শাহেদ সাহেব বেড়িয়ে এলো।  মেয়েকে এভাবে দেখে তো শাহেদ সাহেব খুশিতে আত্মহারা। ভোর যে দাড়িয়ে আছে সে দিকে নজর নাই। মেয়েকে ছাড়ার পর ভোরের দিকে তাকিয়ে....

আলোর বাবাঃঃ জামাইও যে এসেছে দেখছি!

ভোরঃঃ আসসালামু ওয়ালাইকুম।

আলোর বাবাঃঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। এসো ভিতরে এসো। কেমন আছো?

ভোরঃঃ ভালো।আঙ্কেল আপনি তো আমাকে এর আগে কখনো দেখেননি তাহলে কি করে বুঝলেন আমি আপনার জামাই?? (( ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে))

আলোর বাবাঃঃ সে রহস্য আলোর ঘরে ঢুকলেই দেখতে পাবে। যা মা জামাইকে নিয়ে যা। আগে ফ্রেশ হয়ে নে।

আলো ভোরকে নিয়ে আলোর রুমে চলে গেলো।

ভোর তো আলোর রুমে ঢোকার পর যখন আলো রুমের লাইট অন করল তখন পুরা শকড। কারন আলোর রুমের চারপাশে শুধু ভোরের ছবি। ভোরের এক এক মুডে থাকার ছবি। দেখে বোঝাই যাচ্ছে আলো এইগুলো লুকিয়ে তুলেছে।

ভোরঃঃ আমার এতো ছবি আপনার রুমে?  Oh my god.

আলোঃঃ হুম।

ভোরঃঃ এতো ছবি কবে তুললেন?

আলোঃঃ এএএ এই তো এই বিয়ের পরই।

ভোরঃঃ কিন্তু এই ছবিগুলোতে যে স্যুটটা গুলো আছে এগুলো তো আরও ১বছর আগেই আমি পড়া বাদ দিয়েছি। তাহলে?

আলোঃঃ না মানে ঐ.... ঐ ঐগুলো Edit করা।

ভোরঃঃ এত ছবি আপনার আমি ভাবতেই পারছি না।  এজন্যই আঙ্কেল আমাকে চিনতে পেরেছে।

আলোঃঃ হুম। যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।

ভোরঃঃ ফ্রেশ হয়ে আমি কি পড়ব? আমার তো এখানে কিছু নাই।

আলোঃঃ তাই তো। ওয়েট বাবার একটা লুঙ্গী এনে দিচ্ছি।

ভোরঃঃ কি লুঙ্গী? No No... আমি লুঙ্গী ছোটবেলায় ইয়ের সময় একবার পড়েছিলাম আর কোনদিন পড়িনি আর পড়ব না। ও জিনিস মাথার উপরে উঠে যায়।

আলোঃঃ ইয়ের সময় কিসের সময়?? আর উঠলেই বা কি? আমিই তো শুধু।((মুখ টিপে হাসছে))

ভোরঃঃ স্টুপিড।((রাগী মুডে))

আলো আর না দাড়িয়ে ওর বাবার একটা লুঙ্গী আর গেন্জি এনে দিলো। ভোর বাধ্য হয়ে এগুলা নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো। পড়েছে যে আলোর চিপায়।

কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বের হলো লুঙ্গী আর গেন্জি পড়ে। আলোতো ভোরকে দেখেহাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে বেডের উপর। ভোরের খুব রাগ হলো আলোর হাসি দেখে.......

ভোরঃঃ এতো হাসির কি আছে?? 

তবে হাসিটা সুন্দর((মনে মনে))

আলোঃঃ আপনার লুঙ্গী পড়ার স্টাইল দেখে।  একটুপরই এ লুঙ্গী খুলে যাবে। আসুন আমি পড়িয়ে দেই।

ভোরঃঃ কিহ আপনি পড়িয়ে দিবেন? নির্লজ্জ মেয়ে।

আলোঃঃ বাহিরে খুলে পড়বে তখন বুঝবেন। ভালো করতে গিয়ে নির্লজ্জ হলাম। ((মুখ ভেংচি কেটে))

ভোর একটুভেবে বলল... ওকে দিন।  কিন্তু একদম টানাটানি করবেন না কথা দিন?

আলোঃঃ কথা দিলাম।

এবার ভোর আলোর দিকে এগিয়ে গেলো। আলো আস্তে করে ভোর কোমড়ে হাত রাখল তারপর সাথে সাথে ভোরের কোমড়ের লুঙ্গীটা শক্ত করে ধরে....

আলোঃঃ স্যার আপনার ইজ্জত আমার হাতে এখন।  যেকোনো সময় টান দিলেই ইজ্জতের ফালুদা। তাই এখন যা বলবো তাই করুন। ((মনে মনে বললো...পাইছি তোমারে বাটে আজ))

ভোরঃঃ আমি আপনাকে বিশ্বাস করে আপনার কাছে এসেছিলাম।  এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। ((কাছুমাছু করে আলোর হাত থেকে লুঙ্গী বাঁচানোর চেষ্টা))

আলোঃঃ টানাটানি কইরেন না লুঙ্গী খুলে যাবে আপনার। যা বলছি তাই করুন ইজ্জত বাঁচাতে।(( মুচকি হেসে))

ভোরঃঃ কি কি করবো?? ((ঘ্যারাকলে পড়ে))

আলোঃঃ আমার কপালের সাথে আপনার কপালটা ঠেকান তারপর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিন। 

ভোর বেচারার আর উপায় নাই আলো যা বললো তাই করলো। এরপর আলো সুন্দর করে লুঙ্গীটা পড়িয়ে দিলো। আর ভোর রাগে ফুসফুস করতে লাগলো।

চলবে...........................

((ভুল-ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পরবর্তী পর্ব পেতে পেজে চোখ রাখুন। ধন্যবাদ 🙂))

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ajkerit
ajkerit
ajkerit
ajkerit