বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ০৫ Bangla Islamic Story 🌺 Alo 🌺 No- 05
বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ০৫ |
বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ০৫
আলো নিজের সাথে নিজেই বলছে...... না আলো ভয় পেলে চলবে না। তোকে আরও সাহসী হতে হবে। ঐ রাক্ষসকে বশ করতে হবে। তোকে পারতেই হবে। তোর এই নরম চলাফেরা... নরম ব্যবহার... এগুলা সব সরিয়ে ফেলে সাহসী হতে হবে... কি পারবি না আলো?? না পারব না.. আজ যা করেছি এর শাস্তি কি হয় জানিনা..হয়তো আমাকে মেরেই ফেলবে হাতের কাছে পেলে(করুন কন্ঠে).. নো আলো নো এসব ভাবা যাবে না। তুমি এখন দজ্জাল বৌ। রাক্ষসের রাক্ষসী। হাত পা কাঁপাকাঁপি সব অফ। সো মিশন স্টার্ট আলো। brave girl...(( নিজেই নিজের কাঁধে সাহসী হওয়ার জন্য হাইফাই দিচ্ছে।))
|
এরমধ্যে ভোর আলোর ডেস্কে এসে....
ভোরঃঃ আমার ফাইলপত্র... কফি এটা ওটা কিছুই টেবিলে নেই। (( রাগি দুটো চোখ))
|
আলো চোখ দুটো দেখে ভয় পেলো। তবুও মনে মনে সাহস নিয়ে বলল....
আলোঃঃ কফি খেতে হবে??
|
ভোরঃঃ আপনি জানেন না এটা? (রাগী মুড)
|
আলোঃঃ না মানে তখন যে লিপ কিস দিয়ে এলাম তাতে হয়নি? এরপরও কফি খেতে হবে? কিসটা খারাপ ছিলো তাই না আসুন একটু ভালো করে দিচ্ছি। (( বলেই চেয়ার থেকে উঠলো))
|
ভোরঃঃ আমার কেবিনে আসুন। ((নরমাল ভাবে))
বলেই ভোর চলে গেলো। আর আলো ভাবছে... রাগ না করে এটা বললো কেন? যাই দেখি।
আলো ভোরের কেবিনে গেলো। যাবার সাথে সাথে ভোর দরজা লক করে আলোকে দেয়ালের সাথে জোরে চেপে ধরলো। আলো ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো....
|
ভোরঃঃ চোখ খুলুন। (( রাগী মুডে))
|
আলো মিটিমিটি করে চোখ খুললো...
আলোঃঃ আমার ব্যথা করছে হাতটা ছাড়ুন।
|
ভোর আরও শক্ত করে ধরে...
ভোরঃঃ লাগুক ব্যথা। ব্যথা দেবার জন্যই তো। আপনার সাহস দেখে আমি অবাক। আপনি এসব করার সাহস কই পান? ভোর চৌধুরীকে স্পর্শ করার সাহস কই পান? আপনি আমার একজন সামান্য পি.এ.। আপনাকে চাকরি থেকে যেকোনো সময় বের করে দিতে পারি এটা কি মাথা থেকে বের হয়ে গেছে? আপনাকে তো ভালো মেয়ে ভেবেছিলাম কিন্তু আপনি এতটা বাজে জানতাম না। মন চাচ্ছে আপনাকে মেরে ফেলি এখানেই।
|
আলোঃঃ হ্যাঁ চাকরি থেকে বের করে দিন। তারপর আমি সংসার করব আর আপনি অফিস। পারফেক্ট বর বৌ। আপনাকেও ভালো ভেবেছিলাম কিন্তু আপনি তো একটা অবিবাহিত মেয়ের ইজ্জত হরনকারী। আর মারতে হবে না। আপনার ঐ চোখ;;মুখ;; ঠৌঁটে আমি মরেই গেছি।
|
ভোরঃঃ চুপ স্টুপিড চুপ। একদম চুপ। ((প্রচন্ড রেগে))
বলেই আলোর হাত দুটো আরও শক্ত করে চেপে ধরলো। আর চোখ দুটো রাগে টগবগ করছে। ভোরের রাগের ফসফস নিশ্বাস আলোর মুখের উপর আঁচড়ে পড়ছে। আলো মনে মনে খুব পাচ্ছে। তবুও নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করছে। হাতেও অনেক ব্যথা পাচ্ছে। তবুও সাহস নিয়ে ভোরের দিকে তাকালো। ভোর ওকে অনেক কথা বলে যাচ্ছে। আলোর সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ নাই। আলো ভোরের ঠোঁটটাই দেখছে। আর কেমন একটা নেশা কাজ করছে আলোর।
ভোরের মুখটা ওর মুখের কাছেই আসতে লাগলো তাই আলো ওর নিজের মাথাটা একটু উঁচু করে... ভোরের ঠোঁটে কিস করে দিলো। ভোরও সাথে সাথে আলোকে ছেড়ে দূরে সরে যাচ্ছিলো। আলোও ভোরের কলার খপ করে ধরে নিজের ঠোঁটটা ডুবিয়ে দিলো। ভোরকে আলো আবার এভাবে ধরবে ভোর একটুও বুঝতে পারেনি। তালও সামলাতে পারেনি। আলোর একাজে ভোরের এবার রাগ অতি মাত্রায় বের গেলো তাই নিজেকে ছাড়িয়ে আলোর গালে কষে এক চড় দিলো। আলো গিয়ে নিচে পড়লো। আবার ভোর আলোকে টেনে তুলে আর গালেও কষে আর একটা চড় দিলো। আলো আবারও নিচে পড়ে গেলো। এবার আলোকে টেনে আবার দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। তবে এবার হাত না গলা চেপে ধরছে ভোর আলোর।
ভোরঃঃ তোর মতো ফালতু মেয়েকে এখানেই মেরে ফেলবো আজ। মেরে ফেলে পুতে রাখব মাটিতে।
|
আলো কিছু বলতে পারছে না। শুধু কাঁদছে আর কাঁদছে। ভোরের হাত গলা থেকে সরানো চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না ভোরের রাগ আর শক্তির কাছে।
|
ভোরঃঃ তোরে একটু আগে নিষেধ করলাম আর সেই তুই আবার একই কাজ করলি। তোর যেন আজকের পর আর অফিসে না দেখি। যা বেরিয়ে যা আমার অফিস থেকে।
|
বলেই ভোর দরজা খুলে আলোকে ধাক্কা দিয়ে বাহিরে বের করে দিলো। আলো নিজের ডেস্কে কাঁদতে কাঁদতে চলে এলো। ভোরের থাপ্পড়ে আলোর ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। খুব কাঁদছে আলো খুব। আর ঐদিকে ভোর নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে দেয়ালে হাত দিয়ে পান্চ দিচ্ছে। ভোরের যে হাতটা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই। পান্চ দিয়েই যাচ্ছে। এদিকে বলো চোখের পানি মুছে নিজেকে ঠিক করে ব্যাগটা নিয়ে চলে গেলো।
|
একটুপর মিরা ভোরের কেবিনে ঢুকে দেখে ভোরের কান্ড। দৌড়ে মিরা ভোরের হাত ধরে বললো.... কি হয়েছে ভোর তোমার? তুমি কি করছ? তোমার হাত দিয়ে কত রক্ত পড়ছে দেখো। ভোর মিরাকে সরিয়ে দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে গেলো।
হাত দিয়ে রক্ত ঝড়ছে তবুও ঐ অবস্থায় ড্রাইভ করছে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না ভোর।
হঠাৎ ব্রেক কষলো ভোর। কারন সামনে ভীর জমেছে। ভোর ভীরের পাশ দিয়ে আস্তে করে গাড়ীটা চালিয়ে চলে যাচ্ছিলো কিন্তু ভীরের দিকে চোখ দিতেই আলোর শাড়ির মতো দেখলো। সাথে সাথে গাড়ী দাড় করিয়ে নেমে পড়লো। ভীর ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখে। আলো সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। ভোর কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি আলোকে কোলে তুলে নিলো। আর সবাই বলে উঠলো.... কে আপনি? ওনাকে এভাবে তুললেন কেন? ভদ্র মহিলাকে আপনি চিনেন?
|
এতো মানুষের এতো প্রশ্নে ভোরের কান জ্বালাপালা করে উঠলো আর রাগে জোরে চিল্লায়ে বলেই ফেললো...... She is my wife.
|
ভোর আলোকে গাড়ীতে শুয়েই দিলো। তারপর ভোর একটানে গাড়ী ড্রাইভ করে ওর নিজের বাড়ীতে চলে এলো। আলোকে কোলে নিয়ে এসে সোফাতে শোয়ালো। ভোরের মা তো অবাক। বলল.....
ভোরের মাঃঃ কিরে ভোর কে মেয়েটা? কি হয়েছে?
|
ভোরঃঃ আমার পি.এ.। রাস্তায় সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেছিলো। তাই বাসায় নিয়ে এসেছি।
|
বলেই ভোর ডক্টরকে কল দিলো।
|
ভোরের মা আলোর দিকে তাঁকিয়ে বলল...
ভোরের মাঃঃ মেয়েটার গালে আঙুলের ছাপ। কেউ মনে হয় মেরেছে। ইশশশশ এইভাবে কেউ মারে? যারা অমানুষ তারাই এভাবে মারে। এত মায়াবী মুখটার উপর কি দয়া হলো না।
বলেই ভোরের মা আলোর মাথাটা নিজের কোলে নিলো। আর ভোর গিল্টি ফিল করলো।
|
একটুপর ডক্টর এলো। আলোকে দেখে চেকআপ করে মেডিসিন দিলো। আর ভোরের হাতটা ব্যান্ডেজ করে চলে গেলো।
ভোরের মাঃঃ তোর হাতে কি হয়েছিলো?
|
ভোরঃঃ সামান্য কেটে গেছে। ও কিছু না।
|
ভোরের মাঃঃ সামান্য? এতো রক্ত বের হয়েছে আর এটা সামান্য।
|
ভোরঃঃ এখন তো ব্যান্ডেজ করেছি তাই না? এখন এ নিয়ে আর কথা না।
|
ভোরের মাঃঃ আমিতো প্রথমে খেয়ালই করিনি তোর হাত।
|
এরমধ্যে আলো আস্তে করে নড়ে উঠে আর বলে...
আলোঃঃ বা....বা...বাবা..বাবা
|
ভোরের মাঃঃ চোখ খুলো মা আস্তে করে।
|
আলো আস্তে চোখ খুলল। তারপর চারদিকে তাকিয়ে...
আলোঃঃ আমি কোথায়? আমার বাবা কোথায়?
|
ভোরের মাঃঃ তুমি তোমাদের স্যারের বাসায়। আমি ভোরের মা।
|
আলো আস্তে করে উঠে বসলো। ভোরের মায়ের দিকে তাঁকিয়ে...
আলোঃঃ আমার কি হয়েছিলো। আমি এখানে কেন?
|
ভোরঃঃ আপনি রাস্তায় সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেছিলেন। আমি নিয়ে এসেছি আপনাকে দেখে।
আলোর সামনে তাঁকিয়ে ভোরকে দেখে আলো ভোরের মায়ের কাছে আরও ঘেঁষে বসে জড়িয়ে ধরলো
|
আলোঃঃ আন্টি ওনাকে চলে যেতে বলেন। উনি আমাকে খুব মেরেছিলো। আবার মারার জন্য এদিকে আসছে।
|
ভোরের মাঃঃ মানে তোমার গালের আঙুলের ছাপ গুলো ভোরের হাতের? ((অবাক হয়ে))
|
আলোঃঃ হুহহমম.. ((কেঁদে কেঁদে))
|
ভোরের মাঃঃ ছি ভোর ছি। তুই এতটা অমানুষের মতো কাজ করলি আমার ছেলে হয়ে?
|
ভোরঃঃ কেন মেরেছি তা তুমি জানো?
|
ভোরের মাঃঃ কেন মেরেছিস বল? কি এমন অপরাধ করেছে মেয়েটা যে তুই এভাবে মেরেছিস? দেখ মেয়েটা তোকে দেখে এতটাই ভয় পেয়েছে যে আমাকে কীভাবে ভয়ে জড়িয়ে ধরেছে। বল কি করেছে ও?
|
আলোঃঃ আমি বলছি আন্টি। আমি ওনাকে কি…..কি...((আলো থেমে যায়)) আর ভোর রাগী লুকে আলোর দিকে তাকায়।
|
ভোরের মাঃঃ কি কি কি বলো মা?
|
আলোঃঃ কি কি কিছু না আন্টি কিছু না।
|
ভোরের মাঃঃ কিছু না করলে এভাবে মেরেছে কেন? বল ভোর কেন মেরেছিস বল? জবাব দে?
|
ভোরকে এতো প্রশ্ন করছে ভোরের মা। আর ভোর কোনো উত্তর দিতে পারছে না দেখে আলোর খারাপ লাগলো। তাই আলো মুখ ফুটে বলে ফেললো....
আলোঃঃ আমি স্যারকে জোর করে কিস করেছিলাম তাই মেরেছে। (( অসহায় ভাব))
|
ভোরের মাঃঃ কি? কেন?
|
এবার আলোর রাগ উঠলো অনেক । তাই....
আলোঃঃ কি করব বলুন আন্টি। ঐ যে মিরা ডাইনি আছে না? ও সারাক্ষণ আমার বরের চারপাশে ঘুরঘুর করে। তাই...
|
ভোরের মাঃঃ তোমার বর কে?
|
আলোঃঃ কে আবার? আপনার ছেলে। (( বলেই আলো মুখে হাত দিলো। ইশশশ কি বলে ফেললো? আজ আর তোর রক্ষা নাই আলো।))
|
ভোরের মাঃঃ ভোর ও যা বলছে সত্যি??
|
ভোরঃঃ নিশ্চুপ..
|
ভোরের মাঃঃ কি হলো ভোর বল??
|
ভোরঃঃ কিছু বলছে না।
|
ভোরের মাঃঃ আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি ভোর তোকে...
|
ভোর আর চুপ থাকতে পারলো না।।।।
|
ভোরঃঃ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ। উনি যা বল্লেন সব সত্যি।
((বলেই ভোর সেফাতে ধপ করে বসে পড়ল)) হাত মাথায় দিয়ে নরম কন্ঠে বললো.....
|
ভোরঃঃ সরি মা। এক্সট্রেমলি সরি। আসলে সেদিন সিঙ্গাপুরে...................................................... (( সব ঘটনা বলে দিলো ওর মাকে সেদিনের))।
এবার শায়লা চৌধুরী ধপ করে বসে পড়লো। একদম চুপ হয়ে গেলো। চারদিক নিস্তব্ধ। আলো কাঁদছে। ভোর মাথা নিচু করে আছে। শায়লা চৌধুরীরও চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে.....
|
|
|
চলবে.................
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url