বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ০১ Bangla Islamic Story 🌺 Alo 🌺 No- 01
বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ০১ |
বাংলা ইসলামিক গল্প 🌺আলো🌺 পর্ব - ০১
এলোমেলো চুল... শরীরে বিছানার চাদর জড়িয়ে... ফ্লোরের এক কোণে খুটিশুটি করে বসে.. হাটুর উপর মাথা নিচু রেখে কাঁদছে আলো।।
কাঁদবেই না কেনো?? গত রাতে যে আলোর সাথে খুব খারাপ কিছু হয়ে গেছে। একটা অবিবাহিত মেয়ের যে **সতীত্ব** হরন হয়েছে.. জোর পূর্বক। সেই রাত থেকেই একভাবে বসে মেয়েটা কাঁদছে।
আর ঐদিকে আলোর কান্নার শব্দ ভোরের কানে ভেসে গেলো আর ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।
ভোর মাথাটা উঠাতে পারছে না... তার মাথাটা প্রচন্ড ভারী লাগছে। গতকাল রাতে সে পুরো ড্রাংক ছিল। তারপরও কষ্ট করে উঠে বসলো। উঠে ভালোভাবে চারদিকটা চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো। তারপর চোখ আটকে গেলো... ফ্লোরে বসে কান্না করা আলোর দিকে। কিন্তু বুঝতে পারছে না। মেয়েটা কে?? যেহেতু আলোর মাথা নিচু করা আর শরীর বেড শীট জড়ানো। তবুও জিজ্ঞেস করল...
ভোরঃঃ কে কাঁদছে ওখানে??
আরও ২ বার বললো কিন্তু কোনো সারা না পাওয়াতে এবার উঠে আলোর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো...
ভোরঃঃ কি হলো?? কে আপনি??|
এবার আলো মাথাটা একটু উঁচু করল। সাথে সাথে ভোর জিজ্ঞেস করল...
ভোরঃঃ কি ব্যাপার আলো?? আপনি এখানে এভাবে বসে কাঁদছেন কেন??
আলোঃঃ নিশ্চুপ....
ভোরঃঃ কি হলো... বলুন কাঁদছেন কেন?? আর আপনি আমার রুমে কেন??
আলো এবার ভোরের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইল।
ভোরঃঃ কিছু তো বলুন??
এবার আলো উঠে দাঁড়ালো। আর চোখ দিয়ে ইশারা করল আলোর পা থেকে মাথা অবধি তাকানোর জন্য।
ভোর তাকিয়ে দেখল আলোর শরীরে একটা বেড শীট জড়ানো। এলোমেলো চুলো। তারপর আলো ভোরকে আবার ইঙ্গিতে বুঝালো.. ভোর যেন মিররের সামনে যায়। ভোর সাত পাঁচ না ভেবে মিররের সামনে গিয়ে বড়সড় একটা ধাক্কা খায়। ভালো করে ঘুরে ফিরে নিজের বুক আর পিঠ দেখছে.... যেখানে অজস্র নখের আঁচড়।। এবার ভোর ধপাস করে বেডে বসে পড়ল। আর তখন দেখে পায়ের কাছে আলো জামা আর ওড়না পড়ে আছে। একটু চোখ ঘুরাতেই দেখে একটু দূরে সেলোয়ারটাও পড়ে আছে। হাতটা একটু সরাতেই হাতে বাঁধলো আলোর শরীরে সবচেয়ে ছোট কাপড়টা। এবার আর ভোরের বুঝতে বাকি নেই... কেন আলো বেড শীট জড়িয়ে কান্না করছে আর কেন তার শরীরে এতো নখের আঁচড়।
চারদিক নীরবতা।
হঠাৎ ই জানালার গ্লাস খোলার শব্দ পেলো ভোর। পিছনে তাঁকিয়ে দেখে আলো জানালার উপর দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। যদি পা একবার স্লিপ করে তো সোজা ২৪ তলার উপর থেকে নিচে পড়ে গিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত।
ভোর দৌড়ে আলোকে পিছন টান দিয়ে নিজের কোলে নিলো। এরপর কোল থেকে নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো...
ভোরঃঃ কি করতে গিয়েছিলেন ওখানে??😡😡
আলোঃঃ মরতে... (করুন কন্ঠ)
ভোরঃঃ কেন?? 😡😡
আলোঃ এ ছাড়া আমি আর কি করতে পারি।😭😭
ভোরঃঃ মরলেই সব solved??😡
আলোঃঃ হয়তো এটাই সমাধান হবে। কারন আমি যে মেয়ে। 😢
ভোরঃঃ Stop this nonsense...😡
আলোঃঃ এই মুখ এই সমাজে কি করে দেখাবো??? আমার বাবার সামনে কি করে দাড়াবো?? তার ফুলের মতো মেয়েটার যে বিয়ের আগে নষ্ট হয়ে গেছে। কি করে সেই নষ্ট ফুলকে বাবা দেখবে?? বাবা যে আমার মরেই যাবে। আপনি বিখ্যাত.. ধনশীল.. নামকরা.. স্বার্থক বিসনেসম্যান। আপনার টাকার নিচে আপনার সব অপরাধ চাপা পড়ে যাবে। সমাজ আপনার দিকে হাত তুলবে না। সবাই আলো মেয়েটার দিকে তুলবে। হয়তো বলেই বসবে মেয়েটা একটা পসটিটিউট। যাকে বাংলায় বলে *বেশ্যা*।
এটা বলার সাথে সাথে ভোর সজোরে আলোর গালে একটা কষে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। আলো ঠায় বসে কাঁদতে থাকে।
চারদিক আবার নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। একটা গম্ভীর গম্ভীর ভাব আঁচড়ে দেয়ালে। যেন সব ধমকে গেছে। নিরবে আলো কাঁদছে আর ঐদিকে আকাশপানে তাঁকিয়ে ভোর ভাবছে। কি ভাবছে তা সে নিজেই জানে।
নিরবতা ভেঙ্গে ভোর বললো.....
ভোরঃঃ ফ্রেশ হয়ে রেডি হন ১০ মিনিটের মধ্যে।
আলো গালে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে..
আলোঃঃ কেন??
ভোরঃঃ My order. So no more question.
আলো আর কিছু না বলে পাশেই নিজের রুম সেখানে চলে যায়।
১০মিনিট পর ভোর রেডি হয়ে আলোর রুমে নক দেয়।
একটু পর আলো বেরিয়ে আসে। একটা সাদা থ্রি-পিস পড়েছে আলো। লম্বা হাতাওয়ালা। মেয়েটা সবসময় লম্বা হাতাওয়ালা জামা পড়ে। লং থ্রি-পিস পড়ে কারন তাতে তার গায়ের রংটার অল্প কিছু অংশ দেখা যায়। সাদা থ্রি-পিসে মুখের কালো রংটা বেশ কালোতে ফুঁটে উঠেছে। তার উপর তো মলীন একটা চেহারা। চোখগুলো ফোলা।সারা রাত যে কান্না করেছে। তারপর ভোর বললো...
ভোরঃঃ Follow me..
আলো ভোরের পিছন পিছন যাচ্ছে । ভোর গিয়ে গাড়ির ড্রাইভ সিটে বসলো। তার পাশের সিটে আলোকে বসতে বললো। আলো গাড়িতে উঠলো। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আলো জানে না। ভোর গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আলো বাহিরে এক পলকে তাঁকিয়ে আছে। নিস্তব্ধ সেই দৃষ্টি । ভোর মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখছে আলোকে কিন্তু আলো?? আলোতো সেই বাহিরেই তাকানো।
এর মধ্যে ওদের পরিচয়টা বলি... আলোর পুরো নাম আলো শাখাওয়াত। আলো ভোর চৌধুরীর পি.এ.। কি ভাবছেন?? পি.এ. রা তো সবসময় সুন্দরী হয় তবে আলো কেন কালো?? আসলে ভোরের কাছে যোগ্যতাটাই সব। সে গায়ের রং দেখে না। আলোর যোগ্যতা ছিলো তাই এই পোস্টের জব তার।
ওরা এখন সিঙ্গাপুর আছে। এই প্রথম আলো দেশের বাহিরে আসলো। তবে অফিসের কাজের জন্যই আসা। আসতে চেয়েছিলো না কিন্তু কি করার? রুলস তো মানতেই হবে।
দুইদিন আগে ভোরের কম্পানির সাথে সিঙ্গাপুরের একটা কম্পানির ডিল টা প্রোপার্লি সাকসেস হয়েছে তাই গতকাল রাতে ভোর একটা পার্টি থ্রো করে। ভোর আর আলো যে হোটেলে উঠেছে সে হোটেলেই। সেই পার্টিতে ভোর অনেক বেশিই ড্রিংক করে যার ফলে ভোরকে রুমে নিয়ে আসতে হয় আলোর। ভোর নিজের মধ্যে তখন ছিলো না। পুরো মাতাল ছিলো। আলোর সাথে জোর পূর্বক ভাবেই শারীরিক সম্পর্ক করে। আলো বার বার বাঁধা দিচ্ছিলো। সাথে নখ দিয়ে আঁচড় কাটছিলো। কিন্তু একজন মাতালের কি আর সে অনুভূতি থাকে?? থাকে না। তেমনি ভোরেরও ছিলো না। সে তার নিজ কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলো আর আলোর চোখের পানি ঝড়ছিলো। 😢😢
হঠাৎ গাড়িটা ব্রেক করলো আর আলো তার ভাবনা জগৎ থেকে বের হয়ে এলো।
ভোরঃঃ বের হন।
আলো বের হলো। আলোর এখন আর কিছু বলার নেই। সে আর নিজের ভিতর নেই। আজ সে নিস্তব্ধ। যেন একটা মাটির পুতুল।
ভোর আলোর সামনে গিয়ে... আলোর হাতটা ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আলো শুধু ভোরের দিকে তাঁকিয়ে আছে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?? কোথায় এলো?? এসব আলো দেখছে বা ভাবছে না। শুধু ভোরের দিকে তাঁকিয়ে হাঁটছে। হঠাৎই ভোর থেমে গেলো। বলল...
ভোরঃঃ জুতা খুলেন।
আলোকে জুতা খুলতে বলায় আলো এবার চারপাশে তাকালো...দেখে বুঝলো এটা একটা মসজিদ। মসজিদে কেনো?? এবার আলোর প্রশ্ন আসলো।
আলোঃঃ মসজিদে কেন??
ভোরঃঃ জুতা খুলুন।
আলো আর কিছু না বলে জুতা খুলল। আবার ভোর আলোর হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে মসজিদের ভিতরে। এবার আলো সামনে তাকিয়ে হাঁটছে। কিছুটা হেটে থামলো ভোর... তার সাথে আলোও। ওদের সামনে একজন লোক বসে আছে। ভোর বলল...
ভোরঃঃ আসসালামু ওয়ালাইকুম ঈমাম হুজুর।
ঈমামঃঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম.... আপনিই ভোর চৌধুরী??
ঈমাম হুজুর বাংলা জানেন।
ভোরঃঃ জ্বী।
ঈমামঃঃ আচ্ছা বসুন আপনারা।
তারপর ভোর আর আলো বসলো। আলো এখনো জানে না কি হচ্ছে?? খানিকবাদে হুজুর বললো...
ঈমামঃঃ তবে শুরু করি বিয়ে পড়ানো?? ((ভোরের দিকে তাঁকিয়ে))
ভোরঃঃ জ্বী শুরু করুন।
এবার আলো বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো এইভেবে.. ভোর চোধুরী তাকে বিয়ে করবে?? এত বড় একজন বিসনেসম্যান করবে তাকে বিয়ে?? কিন্তু কেন?? এটা কি দয়া?? নাকি সে তার ভুলের শাস্তি পূরণ করছে?? সে চাইলেই তো এমন একশটা আলোকে বিয়ে করে ছেড়ে দিতে পারে তুরিতে। তবে কি বিয়ে করে পরে ডিভোর্স দিবে?? উহ আর ভাবতে পারছে না আলো। এর মধ্যে হুজুর বলল...
ঈমামঃঃ মা আপনার নাম?? আপনার বাবার নাম?? মায়ের নাম??
আলোর ভাবনা ভেঙ্গে উত্তর দিলো...
আলোঃঃ আলো শাখাওয়াত। বাবা শাহেদ শাখাওয়াত। মা মমতা শাখাওয়াত।
ঈমাম হুজুর দোয়া দুরূদ পড়ল। প্রায় ২০মিনিট পর আলো আর ভোরের বিয়ের কাজটা সসম্পন্ন হলো। আলো কবুল বলার সময় অনেক সময় চুপ ছিলো। তারপর হুজুরের বার বার কবুল বলো মা..কবুল বলো মা.. এ কথার শুনে....নিজের মনের সাথে অনেক যুদ্ধ করে অবশেষে কবুলটা বলেই দিলো। তারপর ভোর আর আলো বেড়িয়ে এলো মসজিদ থেকে।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url