চুল পড়া বন্ধ করার উপায় - পদ্ধতি সমূহ আলোচনা
চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় - শীত এলেই চুলের নানা সমস্যা শুরু হয়। মোটা চুল, খুশকি, চুল পড়ার মতো সমস্যাগুলো আমরা পেছনে ফেলে যেতে চাই না। আপনি কি জানেন এই ধরনের সমস্যা সমাধানের কিছু সহজ উপায় আছে?
রুক্ষ চুল, খুশকি ও চুল পড়ার মতো হাজারো সমস্যা কাটিয়ে উঠতে এই শীতে চুলের বাড়তি যত্ন প্রয়োজন।তাহলে আপনার চুল পড়া থেকে রেহায় পেতে পারেন ।
চুল পড়া বন্ধে নানা জিনিস ব্যবহার করেও সমাধান পান না অনেকেই। একবার চুল পড়া শুরু হলে তা বন্ধ করার কোনো উপায় থাকে না। অন্যদিকে চুল পাতলা হতে শুরু করলে সৌন্দর্য কমে যায় এবং এটি শারীরিক সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। কিন্তু চুল পড়া বন্ধ করতে বাজার থেকে কেনা রাসায়নিকের পরিবর্তে ঘরে তৈরি উপাদান ব্যবহার করুন। তাহলে আপনি একটা সমাধান পেতে পারেন এটা আশা করা যাই।
নারী-পুরুষ উভয়েই চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু যেহেতু পুরুষরা বেশির ভাগ সময় বাড়ির বাইরে কাটান, তাই তাদের চুলের ক্ষতি হয় বেশি। এছাড়াও, পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় তাদের চুলের অর্ধেক যত্ন নেয় না।
সর্বোপরি, অনেক পুরুষই অল্প বয়সে চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। কারো কারো চুল পড়ে টাক হয়ে যায়। আর মাথার চুল কমে গেলে আত্মবিশ্বাসও কমে যায়। তাহলে পথ?
চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই। জীবনধারা পরিবর্তন এবং ঘরোয়া প্রতিকারও অনেক ক্ষেত্রে চুল পড়া বন্ধ করতে পারে। তবে জেনেটিক কারণে অনেকেই চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
তাহলে চলুন, আজকের ব্লগ পোস্ট থেকে জেনে নিই কীভাবে ঘরে বসে সহজেই চুল পড়া থেকে মুক্তি পাবেন।
নারিকেল দুধের ব্যবহার চুল পড়া থেকে মুক্তিঃ
চুলের যত্নে নারকেল তেল ব্যবহার করা হলেও নারকেলের দুধও উপকারী। চুল পড়া বন্ধ করার পাশাপাশি চুল দ্রুত গজাতেও সাহায্য করে। এতে কোনো ক্ষতিকারক রাসায়নিক নেই, তাই আপনি এটি নিরাপদে ব্যবহার করতে পারেন। নারকেলের দুধ চুল ও মাথার ত্বকে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।
চুলের যত্নে নারকেল দুধ ব্যবহার করতে আপনার একটি নারকেল এবং একটি শাওয়ার ক্যাপ লাগবে। নারকেল কষিয়ে নিন। তারপর একটি পরিষ্কার সুতির কাপড়ে রেখে নারকেলের দুধ ছেঁকে নিন। এবার দুধ সামান্য গরম করুন। এই দুধ মাথার ত্বকে এবং চুলে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। তারপর শাওয়ার ক্যাপ পরুন। এভাবে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তারপর চুলের উপযোগী শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এভাবে ব্যবহার করলে চুল যেমন সুন্দর হবে তেমনি মজবুত হবে। চুল পড়াও বন্ধ হবে।
নিম পাতার ব্যবহার করে -- চুল পড়া বন্ধ
ত্বক ও চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার বহু পুরনো। নিমে উচ্চ মাত্রার ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা মাথার ত্বকের জন্য ভালো। আর স্ক্যাল্প ভালো অবস্থায় থাকলেই চুলের বৃদ্ধি ভালো হবে। যারা চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি একটি উপকারী উপাদান। নিম পাতার নিয়মিত ব্যবহার মাথার ত্বকে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন বন্ধ করে। ফলে চুলের গোড়া মজবুত হবে। আপনি যদি নারকেল তেলের সাথে নিম পাতার রস মিশিয়ে আপনার মাথার ত্বকে এবং চুলে ব্যবহার করেন তবে আপনার চুল দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। মাথার ত্বকের যেকোনো সমস্যাও দূর হবে।
১০ থেকে ১২ টি নিম পাতা এবং পরিমাণ মতো নারকেল তেল নিন। এবার নিম পাতা বিট করে রস বের করে নিন। নারকেল তেলের সাথে রস মিশিয়ে আপনার মাথার ত্বক ও চুলে লাগান। এভাবে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। নিম পাতা মাথার ত্বকে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে। নারকেল তেল ছাড়াও অলিভ অয়েল বা বাদাম তেল মেশাতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হবে, কাঙ্খিত চুল পাবেন।
মেথির ব্যবহার - চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চুল পড়া বন্ধ করতে আরেকটি কার্যকরী উপাদান হল মেথি। এটি চুল দ্রুত গজাতেও কাজ করে। চুল পড়া বন্ধ করতে এবং নতুন চুল গজাতে চাইলে মেথি ব্যবহার শুরু করুন। মেথিতে রয়েছে পর্যাপ্ত প্রোটিন, যা মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে কাজ করে। এছাড়াও এতে ভিটামিন সি, আয়রন এবং পটাশিয়াম রয়েছে। এই উপাদানগুলো অকালে চুল পাকা রোধেও কাজ করে। এটি চুলকেও ঘন ও নরম করে।
২ টেবিল চামচ মেথি দানা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সকালে মেথি বীজের সাথে ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে খান। মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু করুন। এটি চুলের গোড়া মজবুত করবে এবং চুল পড়া বন্ধ করবে। সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
অ্যালোভেরা জেল - চুল পড়া বন্ধ করার উপায় -
শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। তারপর চুলে অ্যালোভেরা জেল লাগান। বৃত্তাকার নড়াচড়া দিয়ে হাতের তালু ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে দুবার এটি করলে চুল পড়া বন্ধ করতে ভালো ফল পাবেন। ফলস্বরূপ, চুল এবং মাথার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য পুনরুদ্ধার হবে। চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
দই, মধু ও লেবুর প্যাক
দই, লেবু এবং মধুর প্যাকেট চুলের হারানো আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে এবং ভিটামিন বি এবং প্রোটিনের সরবরাহ বাড়াতে আদর্শ। সপ্তাহে একবার শ্যাম্পু করার আগে লাগান। চুল শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
চুল পড়া বন্ধ করার আরো কিছু উপায় -
মাথায় গরম পানি নাঃ
চুল পড়ার আরো একটি অন্যতম কার'ন হলো মাথায় গরম পানি দিয়ে গোসল করা, মাথায় গরম পানি এর তুলনায় স্বাভাবিক পানিই ভালো। তবেই চুল ভালো থাকবে ।
হিট ব্যবহার বন্ধঃ
অনেক সময় হেয়ার স্টাইল করতে গিয়ে অনেকে হিট দেন। তবে এই অভ্যাস একেবারেই চলবে না। এভাবে হিট দিলে চুল আরও শুষ্ক হয়ে যাবে। তাই গোসলের পর স্বাভাবিক উপায়েই চুল শুকাতে দিন।
শীতে প্রতিদিন মাথায় পানি নাঃ
মাথার ময়লা দূর করতে অনেকেই প্রতিদিন শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুতে থাকেন। তবে শীতকালে প্রতিদিন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়ার প্রয়োজন নেই। এটি সপ্তাহে দুবার করুন। এর মাধ্যমে মাথার ন্যাচারাল সিরাম, অর্থাৎ যার মাধ্যমে চুল চকচকে দেখায়, তা চুলে উপস্থিত থাকবে। ফলে শীতকালেও চুল সুস্থ ও চকচকে দেখাবে।
খাবার এর উপকারিতাঃ
শীতে মৌসুমি ফল, শাকসবজি বেশি করে খান। এসব খাবারে উপস্থিত ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আপনাকে এবং সুরক্ষিত রাখবে আপনার চুলও।
তেল মালিশঃ
নারকেল তেল, বাদাম তেল এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে তেলের মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর মিশ্রণটি আপনার চুল এবং মাথার ত্বকে আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। একদিন পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এবং আশ্চর্যজনক চুল এলাকা তাকান।
>> চুল পড়ার সমস্যা সমাধানে চুলের গোড়ায় ভিটামিন ই ব্যবহার করুন। ভিটামিন ই মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। ফলস্বরূপ, চুলের ফলিকলগুলি উত্পাদনশীল থাকে। এছাড়াও ভিটামিন ই চুলের রং সুস্থ রাখে।
>> অনেক সময় খাবারের পরিবর্তন বা শরীরে প্রোটিনের অভাবে চুল পড়ে যায়। তাই খাবারে চর্বি, মাংস, মাছ ও সয়া সহ প্রোটিন রাখুন। এগুলি চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে।
>> চুল নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি। চুলের গোড়ায় জমে থাকা ময়লা সহজেই দূর করে। ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়। মনে রাখবেন, নোংরা চুল খুশকি এবং মাথার ত্বকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
>> ভেজা চুল কখনই আঁচড়াবেন না। অনেক পুরুষ হয়তো এর সাথে একমত নাও হতে পারেন। ভিজে গেলে চুলের গোড়া নরম হয়। ফলে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ালে চুল পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
>> ঘরেই চুল পড়া বন্ধ করতে রসুন, পেঁয়াজ বা আদার রস ব্যবহার করতে পারেন। এসব উপাদানের রস রাতে মাথার ত্বকে লাগান। সারারাত রেখে সকালে চুল ধুয়ে ফেলুন। এক সপ্তাহ নিয়মিত এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে তাৎক্ষণিক ফল পাবেন।
>> শরীরে পানিশূন্যতা থাকলেও চুল পড়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে গেলে বুঝবেন আপনার শরীর পানিশূন্য হতে পারে। তাই দিনে অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করুন।
>> গবেষণায় দেখা গেছে গ্রিন টি ব্যবহার চুল পড়ার সমস্যা কমায়। এর জন্য এক কাপ পানিতে দুটি গ্রিন টি ব্যাগ মিশিয়ে নিন। তারপর এটি ঠান্ডা হতে দিন এবং এটি মূল থেকে মূল পর্যন্ত ব্যবহার করুন। এক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। 7-10 দিন একটানা ব্যবহারে চুল পড়ার সমস্যা দূর হবে।
>> সবসময় খেয়াল রাখবেন মাথার ত্বক যেন খুব বেশি তৈলাক্ত না হয়। অনেকের মাথার ত্বক ঘামে। ঘামের কারণে মাথার ত্বকে বেশি ময়লা জমে। ফলে পুরুষদের চুল পড়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। এটি করতে অ্যালোভেরা এবং নিম শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। তাহলে মাথা ঠান্ডা থাকবে এবং চুল কম ঘামবে।
>> ধূমপান ও মদ্যপানের কারণেও চুল পড়তে পারে। ধূমপান মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয়। ফলে চুলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। তাই ধূমপান পরিহার করুন।
>> প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। দিনে অন্তত 40 মিনিট হাঁটুন। আপনি সাঁতার কাটতে বা সাইকেল চালাতে পারেন। এটি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখবে এবং চাপের মাত্রা কমিয়ে দেবে। ফলে চুল পড়ার সমস্যাও কমে যাবে।
মেহেদি ও সরিষার তেলঃ
250 মিলি সরিষার তেলে 20টি মেহেদি পাতা সিদ্ধ করুন। ঠান্ডা হলে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। 20 মিনিট অপেক্ষা করে ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই তেল ব্যবহার করুন।
পেঁয়াজের রসঃ
চুল পড়া বন্ধ করতে পেঁয়াজের রস খুবই কার্যকরী। পেঁয়াজের রস সরাসরি চুলের গোড়ায় ঘষুন। কচুর গন্ধ দূর করতে চাইলে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। 20 মিনিট অপেক্ষা করুন এবং শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ডিমের কুসুম এবং মধুঃ
ডিমের কুসুম বিট করে মধু মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন। আধা ঘণ্টা পর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অলিভ অয়েল, জিরা এবং মধুঃ
1/4 কাপ অলিভ অয়েলে 1 চা চামচ জিরা 5 ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর তেল আলাদা করতে মিশ্রণটি ছেঁকে নিন। তেলে সামান্য মধু মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলে দ্রুত কাজ করবে।
শেষ কথাঃ
চুল পড়া সবার জীবনে একটি বড় সমস্যা হতে পারে এবং সবাই এর থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়। তাই উপরের পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করলে দারুণ উপকার পেতে পারেন বলে আমার বিশ্বাস।
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url